
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে ভারত পালিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার কথা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তবে ভারত আসলে তাকে ফেরত পাঠাতে রাজি হবে কিনা তা নিয়ে রয়েছে নানা আলোচনা। বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সংবাদমাধ্য দ্য ডিপ্লোম্যাটে এ সংক্রান্ত একটি লেখা প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ রফিকুল আলম নিশ্চিত করেছেন যে, শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের জন্য বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে সব প্রয়োজনীয় নথিপত্র ভারতে পাঠিয়েছে। প্রয়োজনে এ বিষয়ে স্মারকপত্র জারি করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে বাংলাদেশ।
এর আগে ডিসেম্বরের শেষদিকে একটি মৌখিক নোটে প্রত্যর্পণের অনুরোধ জানানো হয়। তবে এ বিষয়ে কোনো উত্তর দেয়নি ভারত। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে একটি সংযত অবস্থান বজায় রেখেছে এবং বারবার জিজ্ঞাসাবাদ সত্ত্বেও তার অবস্থান কথা জানানো ছাড়া কোনো মন্তব্য করা থেকে বিরত রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালের প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুসারে হাসিনাকে ফেরত পাওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের অধিকার রয়েছে। ২০১৬ সালে এটির প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার জন্য সংশোধন করা হয়। তবে ভূ-রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিকভাবে প্রভাব জটিল রয়ে গেছে। ভারত যদি হাসিনাকে প্রত্যর্পণে সম্মত হয়, তবে দুই দেশের প্রত্যর্পণ চুক্তির চিঠি এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতির কঠোর বাস্তবতা উভয়ের সাপেক্ষে প্রক্রিয়াটি একাধিক পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাবে।
পাঞ্জাবের রাজীব গান্ধী জাতীয় আইন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত শিক্ষাবিদ ও আইনবিদ ড. সঙ্গীতা তাক বলেন, যদিও কৌশলগত বা পরিভাষাগত বিষয়গুলো মূলত প্রত্যর্পণ চুক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তবে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক এবং মানবাধিকার বিবেচনা চুক্তিটিকে অবিশ্বাস্যভাবে জটিল এবং সংবেদনশীল ইস্যুতে পরিণত করবে। তিনি বলেন, ভারতে আনুষ্ঠানিক প্রত্যর্পণের অনুরোধ জমা দেওয়ার মাধ্যমে প্রক্রিয়াটি শুরু হতে হবে। এতে হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিস্তারিত বিবরণ থাকতে হবে। এছাড়া বিচারিক আদেশ, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এবং অন্যান্য প্রমাণপত্রাদিসহ সহায়ক নথির একটি শক্তিশালী সমর্থন থাকতে হবে। তাক আরও জোর দিয়ে বলেন যে, অনুরোধে [নিশ্চিতকরণ] অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে যে, বাংলাদেশে বিচার সুষ্ঠু হবে এবং এটি পক্ষপাতদুষ্ট হবে না। অন্যভাবে বলতে গেলে কেবল অভিযুক্ত অপরাধের তালিকাভুক্তির বাইরেও, অনুরোধে এই নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে যে, হাসিনাকে রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের দ্বারা দূষিত বিচারের সম্মুখীন করা হবে না।
ভারতকে প্রত্যর্পণের কথা বিবেচনা করার আগে এটি যাচাই করা গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই এই প্রয়োজনীয়তা পূরণ করেছে। ফলে প্রশ্ন উঠছে এরপর কী হবে। আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জমা দেওয়ার পরে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ – মূলত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সমস্ত চুক্তির বাধ্যবাধকতা পূরণ হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা শুরু করবে। তাক ব্যাখ্যা করেছেন, যেহেতু ভারতের সাথে ইতোমধ্যেই একটি প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে, তাই ভারত সরকার চুক্তি অনুসারে প্রত্যর্পণ চুক্তিটি পর্যালোচনা করবে এবং নিশ্চিত করবে যে, প্রত্যর্পণ চুক্তিটি যথাযথভাবে পালন করা হচ্ছে। এই পর্যালোচনা প্রক্রিয়ায় হাসিনার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো উভয় দেশে আইনত ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে স্বীকৃত কিনা তা নির্ধারণ করা হবে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে এটিও পরীক্ষা করতে হবে যে, কোনো অভিযোগ রাজনৈতিক, সামরিক বা ধর্মীয় অপরাধের জন্য ছাড়ের মধ্যে পড়ে কিনা। এসব কোনো কারণ মিললে প্রত্যর্পণ অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করতে পারে ভারত।
প্রাথমিক প্রশাসনিক পর্যালোচনা অনুকূল হলেও, বিষয়টি এখানেই শেষ হবে না। ভারতে প্রত্যর্পণের অনুরোধ পরবর্তীতে বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার বিষয় হবে, যেখানে বিশেষায়িত প্রত্যর্পণ আদালতগুলো এর বৈধতা এবং যোগ্যতা যাচাই করবে। তাক আরও বলেন, ভারত প্রত্যর্পণের বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনাও করবে। প্রত্যর্পণের জন্য তৈরি বিশেষ আদালত প্রত্যর্পণের অনুরোধের বৈধতা এবং যোগ্যতা পরীক্ষা করবে। যদি আদালত দেখে যে রাজনৈতিক মামলার একটি বিশ্বাসযোগ্য হুমকি রয়েছে, তাহলে প্রত্যর্পণ আটকে দিতে পারে। ভারতের আদালত এবং নির্বাহী শাখা যদি চূড়ান্তভাবে প্রত্যর্পণের সাথে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে পরবর্তী পদক্ষেপ হবে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা। আর এজন্য উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ হতে পারে স্থানীয় পুলিশ অথবা কেন্দ্রীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। তাক বলেন, তাকে গ্রেপ্তারের পর সম্ভবত একটি নিরাপদ স্থানে রাখা হবে যখন তার প্রত্যর্পণের ব্যবস্থা করা হবে। আইন অনুসারে তাকে আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার শেষ পর্যন্ত আটক রাখার অনুমতি দেয়।
সূত্র: কালবেলা
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |