প্রচ্ছদ হেড লাইন আসন্ন রমজানে সয়াবিন তেল নিয়ে যে শঙ্কা!

আসন্ন রমজানে সয়াবিন তেল নিয়ে যে শঙ্কা!

হেড লাইন: রমজান সামনে রেখে বাজারে তেল নিয়ে ফের তেলেসমাতি শুরু হয়েছে। বছরের ব্যবধানে এক লাখ টনের বেশি ভোজ্যতল আমদানি হলেও বাজারে এর প্রভাব নেই। উলটো ৬ থেকে ৭টি কোম্পানি তেলের বাজার ঘিরে কারসাজি অব্যাহত রেখেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো জোটবদ্ধ হয়ে চার মাস ধরে সরবরাহ কমিয়ে তেলের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছে। এতে প্রায় বাজারশূন্য হয়ে পড়ছে বোতলজাত সয়াবিন তেল। ফলে আসন্ন রমজানে সয়াবিন তেলের বড় সংকট হতে পারে-এমন শঙ্কা প্রকাশ করছেন ক্রেতারা। তাদের মতে, সরকারিভাবে দাম বাড়াতেই প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রেতাদের জিম্মি করছে। যুগান্তরের প্রতিবেদন থেকে বিস্তারিত-

রমজান ঘিরে বাজারে

এদিকে ক্রেতারা পাঁচ থেকে ছয় দোকান ঘুরে এক লিটার বোতলজাত তেল পেলেও তা ১৯০-১৯৫ টাকায় কিনছেন। অথচ সরকার নির্ধারিত মূল্য ১৭৫ টাকা। এ পরিস্থিতিতে আরও এক ধাপ এগিয়ে অসাধু খুচরা বিক্রেতারা। তারা লিটারে ২৫ টাকা বাড়তি লাভের আশায় বোতল খুলে ড্রামে ঢেলে খুচরা বিক্রি করছেন। দাম রাখছেন ২০০-২১০ টাকা লিটারে। তবে খোলা সয়াবিন তেলের সরকার নির্ধারিত মূল্য ১৫৭ টাকা। রমজান সামনে রেখে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বছরে দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদা ২৩ থেকে ২৪ লাখ টন। এর মধ্যে রমজানে চাহিদা ৩ লাখ টন। দেশে ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এ বছরের ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত আমদানি হয়েছে ১৮ লাখ ৫৭ হাজার ৫৪৮ টন। এছাড়া দেশীয় উৎপাদন করা হয় ২ লাখ ৫০ হাজার টন। আর আমদানি পর্যায়ে এখনো পাইপলাইনে আছে ৮ লাখ ১২ হাজার ৫৬৫ টন। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য নিম্নমুখী হওয়ায় স্থানীয় বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এছাড়া বাজারে বোতলজাত সয়াবিনের সংকটের কথা বললেও চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) এ পর্যন্ত আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বেশি ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে অপরিশোধিত ভোজ্যতেল চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে খালাস হয়েছিল ২১ লাখ ৭০ হাজার ৩ টন। এর মধ্যে ৫ লাখ ২১ হাজার ৯৫২ টন সয়াবিন এবং ১৬ লাখ ৪৮ হাজার ৫১ টন পাম অয়েল রয়েছে। চলতি অর্থবছর (২০২৪-২৫) একই সময়ে ভোজ্যতেল খালাস হয়েছে ২২ লাখ ৭০ হাজার ২৮৯ টন। এর মধ্যে ১৪ লাখ ৩৬ হাজার ৩৮৬ টন পাম অয়েল এবং ৮ লাখ ৩৩ হাজার ৯০৩ টন সয়াবিন তেল। দেখা যাচ্ছে, আগের তুলনায় এক লাখ টনের বেশি তেল বেশি আমদানি হয়েছে। কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, সংকটের কোনো কারণ নেই। আমরা বিগত বছরে দেখেছি দেশে ৫ থেকে ৬টি কোম্পানি সয়াবিনের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়ার পর সাপ্লাই বন্ধ করে দেয়। সরকারিভাবে দাম বাড়ালেও তারা বাজারে পর্যাপ্ত তেলের সরবরাহ করে না। রোজা ঘিরে তারা এমন কারসাজি করে। এবারও এমনটাই হয়েছে।

মঙ্গলবার রাজধানীর জিনজিরা কাঁচাবাজার ঘুরে ৫টি খুচরা দোকানের একটিতে বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া গেছে। তবে গায়ে মূল্য পাওয়া যায়নি। খুচরা বিক্রেতারা নির্ধারিত মূল্য মুছে লিটারপ্রতি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি করেছেন। এছাড়া খোলা সয়াবিন প্রতি লিটার ১৯৫ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। বুধবার একই বাজার ঘুরে পুষ্টি ও রূপচাঁদা কোম্পানিকে কিছুটা বোতলজাত তেল সরবরাহ করতে দেখা গেছে। তীর কোম্পানি সরবরাহ করেছে ক্যানোলা তেল। তবে দুপুর গড়াতেই খুচরা বিক্রেতাদের প্রকাশ্যে বোতলের ঢাকনা খুলে বিক্রির উদ্দেশ্যে সয়াবিন তেল ড্রামে ভরে রাখতে দেখা গেছে। জিনজিরা কাঁচাবাজারের মুদি বিক্রেতা নাজমুল বলেন, তিন মাস ধরে ভোজ্যতলের কোম্পানিগুলো সরবরাহ কমিয়ে রেখেছে। ৭ থেকে ১০ দিন পর পর তেল সরবরাহ করছে। চাহিদা ২০ কার্টন দিলে ২-৪ কার্টন দিচ্ছে। সর্বশেষ এই বাজারে বুধবার ১৫ দিন পর পুষ্টি ও রূপচাঁদা কোম্পানি কিছুটা বোতলজাত তেল সরবরাহ করেছে। তীর কোম্পানি সরবরাহ করেছে ক্যানোলা তেল। তিনি বলেন, কোম্পানিগুলো নানাভাবে বিক্রেতাদের চাপে ফেলে তেল বিক্রি করছে। সরবরাহ কমানোর বিষয়ে ভোজ্যতেল প্রস্তুতকারক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা হায়দার বলেন, সামগ্রিক বিষয় পর্যালোচনা করে আমরা অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দিয়েছি। এটাই আমার বক্তব্য।

এদিকে অ্যাসোসিয়েশন বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বর্তমানে স্বাভাবিক সময়ের চেয়েও বেশি ভোজ্যতেল বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে। পবিত্র রমজান সামনে রেখেই বাড়তি চাহিদা বিবেচনায় তাদের সংগঠনে যুক্ত প্রতিষ্ঠান স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি সরবরাহ করছে। ভোজ্যতেলের সরবরাহের পরিমাণ বিবেচনায় সংকটের কোনো সুযোগ নেই। সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, অন্য কোম্পানি কী করছে জানি না। সিটি গ্রুপ আগের চেয়ে বেশি তেল বাজারে সরবরাহ করছে। প্রসঙ্গত, গত বছর নভেম্বরে অস্থিরতা শুরু হয় ভোজ্যতেলের বাজারে। বোতলজাত তেলের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হতে দেখা যায় খোলা তেল। প্রথম দফায় ১৭ অক্টোবর ও দ্বিতীয় দফায় ১৯ নভেম্বর শুল্ককর কমিয়ে তা নামানো হয়েছে শুধু ৫ শতাংশে। এতে বাজারে সামান্য কমে ভোজ্যতেলের দাম। তবে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে এসে বাজার থেকে উধাও হতে শুরু হয় ১ ও ২ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন। ব্যবসায়ীদের দাবি অনুযায়ী, ৯ ডিসেম্বর লিটারে ৮ টাকা বাড়ানো হয়। তবুও সরবরাহ সংকট কাটেনি। এরপর ১৬ ডিসেম্বর ভোজ্যতেলের দাম সহনীয় রাখতে নতুন বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত আমদানিতে শুল্ক, রেগুলেটরি ডিউটি ও অগ্রিম আয়কর শতভাগ অব্যাহতি দিয়েছে সরকার। পাশাপাশি ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়। তারপরও অস্থিরতা কাটছে না।

প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে।