
চরমপন্থী সংগঠন পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টি এমএল জনযুদ্ধ লাল পতাকার আঞ্চলিক প্রধান ও মৎস্যজীবী লীগ নেতা হানিফ উদ্দিন ওরফে হানেফ মণ্ডল, তার শ্যালক লিটন মিয়া ও হানেফের দেহরক্ষী রাইসুল ইসলাম গত শুক্রবার রাতে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। জানা গেছে, এই হানিফ ফাঁসির আসামি ছিলেন। তাকে সাধারণ ক্ষমা করেন সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ।
ঝিনাইদহের শৈলকূপায় ট্রিপল মার্ডারের ওই ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। কায়েতপাড়া বাঁওড় দখলকে কেন্দ্র করে গত শনিবার গভীর রাতে বাঁওড় পাড়ের হরিণাকুন্ডুর নারায়নকান্দি গ্রামের মাঠে নতুন করে ৪টি বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য ট্রিপল মার্ডারের পরেই শনিবার রাতে নতুন করে বোমা বিস্ফোরণের বিকট শব্দে এলাকায় নতুন করে উদ্বেগ উৎকন্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে। তবে কে বা কারা বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে সে সম্পর্কে পুলিশ কিছুই জানে না বলে জানিয়েছে।
এদিকে জাসদ গণবাহিনী নামে জাসদের কোনো সংগঠন নেই। জাসদ ঝিনাইদহে তিনজনকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) গণবাহিনীর সংশ্লিষ্টতার নাম এসেছে। এ ঘটনায় জাসদ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, জাসদ গণবাহিনী নামে জাসদের কোনো সংগঠন নেই।
পুলিশ জানায়, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গার কায়েতপাড়া বাঁওড়ের দখলকে কেন্দ্র করে এই ট্রিপল মার্ডারের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। নিহত চরমপন্থী নেতা হানিফ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন। হরিণাকুন্ডু উপজেলার কুলবাড়িয়া গ্রামের আব্দুর রহমান হত্যা মামলায় তার ফাঁসির আদেশ হয়। উচ্চ আদালতেও ফাঁসির রায় বহাল থাকলে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের আমলে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের বিশেষ ক্ষমার সুযোগ নিয়ে হানিফ এলাকায় ফিরে আসেন এবং মৎস্যজীবী লীগের হরিনাকুন্ডু উপজেলা কমিটির সহসভাপতি নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করে এলাকায় ব্যাপক প্রভাব প্রতিপত্তি বিস্তার করতে শুরু করেন। হাসিনা সরকারের পতন হলে দুর্ধর্ষ হানিফ অন্য একটি রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় আবারও ফিরে আসার চেষ্টা করেন।
সূত্রটি আরও জানায়, শুক্রবার রাতের ট্রিপল মার্ডারের নেপথ্যে রয়েছে আলমডাঙ্গার কায়েতপাড়া বাঁওড়। ওই বাঁওড়ে বছরে কোটি টাকার উপরে মাছ চাষ হয়। মৎস্যজীবী লীগ নেতা ও পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টি জনযুদ্ধ এমএলের আঞ্চলিক প্রধান হানিফ মণ্ডল বাওড়ে মাছ ধরা ও প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করলে এলাকায় বিবাদমান একাধিক অন্ডারওয়াল্ড গ্রুপের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। সেই সূত্র ধরেই হানিফসহ তার শ্যালক লিটন ও দেহরক্ষী রাইছুলকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই কায়েতপাড়া বাঁওড় নিয়ে গত ৩০ বছরে প্রায় অর্ধশত মানুষ খুনের শিকার হয়েছেন।
হরিণাকুন্ডুর সাধরণ মানুষ জানায়, চরমপন্থী হানিফের বিরুদ্ধে হরিণাকুন্ডুর কুলবাড়িয়া গ্রামের আব্দুর রহমান, তিওরবিলা গ্রামের লুৎফর রহমান, তাহেরহুদার আব্দুল কাদের ও পোলতাডাঙ্গার ইজাল মাস্টারসহ শতাধিক মানুষকে গুলি ও গলাকেটে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। অপরদিকে ট্রিপল মার্ডারের পরে শনিবার গভীররাতে হরিণাকুন্ডুর তাহেরহুদা ইউনিয়নের নারায়নকান্দি গ্রামে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য নতুন করে বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। হরিনাকুন্ডু উপজেলার নারায়নকান্দি, পোলতাডাঙ্গা, কায়েতপাড়া এবং চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার ফতেপুর, শ্রীনগর ও রামদিয়া এই ৬ গ্রামের ওপর কায়েতপাড়া বাঁওড়টি অবস্থিত। বাঁওড়ে তালিকাভুক্ত মৎস্যজীবীরা মাছ চাষ করে থাকেন। স্বাধীনতার পর থেকে বাঁওড়টি চরমপন্থীরা নিয়ন্ত্রণ করে আসছে।
শৈলকূপার সহকারী পুলিশ সুপার অমিত কুমার বর্মন জানিয়েছেন, রোববার দুপুর পর্যন্ত হত্যার সাথে জড়িত কাউকে আটক করা যায়নি। সেইসঙ্গে হত্যা মামলাও হয়নি। তবে প্রকৃত হত্যাকারীদের আটক করতে ঝিনাইদহের শৈলকূপা, হরিণাকুন্ডু, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা ও কুষ্টিয়ার ইবি থানা এলাকায় জোরালো অভিযান চলছে
চরমপন্থী সংগঠন পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টি এমএল জনযুদ্ধ লাল পতাকার আঞ্চলিক প্রধান ও মৎস্যজীবী লীগ নেতা হানিফ উদ্দিন ওরফে হানেফ মণ্ডল, তার শ্যালক লিটন মিয়া ও হানেফের দেহরক্ষী রাইসুল ইসলামকে শুক্রবার রাতে শৈলকূপা উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের ত্রিবেনী শ্মশান খাল এলাকায় সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে। পরে নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থী সংগঠন জাসদ গণবাহিনীর কালু গ্রুপের প্রধান কমরেড কালু হোয়োটসআপে সাংবাদিকদের মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করে।