প্রচ্ছদ দেশজুড়ে জরায়ুমুখ ক্যানসার কী, প্রতিরোধে যা করবেন

জরায়ুমুখ ক্যানসার কী, প্রতিরোধে যা করবেন

বাংলাদেশে প্রতিবছর জরায়ুমুখের ক্যানসারে হাজার হাজার নারী আক্রান্ত হন এবং মৃত্যুবরণ করেন। নারীদের জরায়ু ক্যান্সারকে বলা হয় সাইলেন্ট কিলার বা ‘নীরবঘাতক’। কারণ এই অসুখে আক্রান্ত হলেও অনেক নারী এর লক্ষণ বুঝতে পারেন না। আবার ভিন্ন লক্ষণ দেখা দিলেও অনেক সময় গুরুত্ব দেন না। শুধু তাই নয়, নারীরা যেসব ক্যান্সারে বেশি আক্রান্ত হন তার মধ্যে জরায়ু ক্যান্সার অন্যতম।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সহযোগী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার (আইএআরসি) এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৫,০০০ নারী জরায়ুমুখ ক্যান্সারে মারা যান।

তবে, বাংলাদেশে জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত নারীর সুনির্দিষ্ট সংখ্যা সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য ও সাম্প্রতিক তথ্যের অভাব রয়েছে। দেশে জাতীয় পর্যায়ে ক্যান্সার রেজিস্ট্রি সিস্টেমের অভাবে সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান সংগ্রহ করা কঠিন। তবে, গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রতি লাখে ৯৬ জন নারী ক্যান্সারে আক্রান্ত হন।

একটু সচেতন থাকলেই খুব সহজে জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।

জরায়ু ক্যান্সার কেন হয়?

জরায়ু ক্যানসার হয় এক ধরনের ভাইরাসের আক্রমণে, যার নাম প্যাপিলোমা ভাইরাস। সাধারণত এই ভাইরাসটি ছড়ায় ওই ভাইরাস আছে এমন কারও সাথে যৌন মিলনের ফলে। যৌন মিলনের সময় পুরুষদের কাছ থেকে নারীদের দেহে এই ভাইরাসটি ঢুকে যায়। তবে ভাইরাস শরীরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে ক্যানসার হয় না। ক্যানসার হতে বেশ কয়েক বছর লাগতে পারে।

কীভাবে হতে পারে-

* ১৬ বছর বয়সের আগে যৌন সঙ্গমের অভিজ্ঞতা থাকলে কিংবা পিরিয়ড শুরুর এক বছরের মধ্যে যৌনসঙ্গম শুরু করলে।
* স্বামী বা যৌনসঙ্গীর শরীরে ভাইরাসটি থাকলে।
* একাধিক যৌনসঙ্গী থাকলে।
* জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য দীর্ঘদীন, বিশেষ করে ৫ বছরের বেশি সময় ধরে পিল খেতে থাকলে।
* শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার ঘাটতি থাকলে।
* যৌনসঙ্গমের মাধ্যমে ছড়ায় এমন কোনো রোগ থাকলে যেমন এইডস, সিফিলিস, গনোরিয়া ইত্যাদি।

লক্ষণ

যৌন মিলনের পর যোনি পথে রক্ত পাত।
অনিয়মিত মাসিক, অতিরিক্ত রক্তপাত বা ২ মাসিকের মধ্যে রক্তপাত।
অতিরিক্ত সাদা স্রাব, দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব বা চাল ধোয়া পানির মতো স্রাব অথবা কোনো সময় রক্ত মিশ্রিত স্রাব যাওয়া।
মেনোপজ এরপর আবার রক্তপাত, তলপেটে ব্যথা, কোমরে ব্যথা, হাড়ে ব্যথা, কাশি, কাঁশির সঙ্গে রক্ত যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গও থাকতে পারে

জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধ বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ-

জরায়ুমুখ ক্যানসারের মূল অসুবিধা হলো এটি শেষ পর্যায়ে গেলেই শুধু ব্যথা দেয়। প্রাথমিক পর্যায়ে লক্ষণগুলোকে অনেকেই মাসিকের মেয়েলি সমস্যা বলে মনে করেন। ক্যানসার যখন একেবারে শেষ পর্যায়ে চলে যায় তখন রোগটা অনেকদূর ছড়িয়ে যায়।

প্রতিরোধ ব্যবস্থা

* কম বয়সে মেয়েদের বিয়ে না দেওয়া।
* অধিক সন্তান ধারণা করা।
* ধূমপান না করা।
* যৌন-প্রজননস্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
* একাধিক যৌনসঙ্গী না রাখা।
* ৯ থেকে ৪৫ বছর বয়সী নারীদের জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধক টিকা গ্রহন করা।
* ৩০ থেকে ৩৫ বছর পর্যন্ত নারীদের প্রতি ৩ বছর পরপর ভায়া টেস্ট করা।

উপরের লক্ষণগুলোর কোনো একটি নিয়মিত হতে থাকলে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা জরুরি।

জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (HPV) টিকাদান কার্যক্রম চালু রয়েছে, যা এই ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। গবেষণায় দেখা গেছে, এই টিকা নেওয়া মেয়েদের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ- এর জরায়ুমুখ ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে গেছে।

সঠিক ও নির্ভরযোগ্য তথ্যের জন্য জাতীয় ক্যান্সার রেজিস্ট্রি সিস্টেম প্রতিষ্ঠা জরুরি, যা ক্যান্সারের প্রকৃতি, প্রাদুর্ভাব এবং প্রতিরোধের ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে সহায়ক হবে।