প্রচ্ছদ দেশজুড়ে পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়াই অনলাইনে আবেদন করে ই-পাসপোর্ট পাওয়ার উপায়

পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়াই অনলাইনে আবেদন করে ই-পাসপোর্ট পাওয়ার উপায়

দেশজুড়ে: ই-পাসপোর্ট পরিষেবায় পুলিশ ভেরিফিকেশন পদ্ধতি বাতিল করা হয়েছে। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি এক পরিপত্র জারির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ। এর মাধ্যমে এখন থেকে কোনো প্রার্থীকে তার জাতীয় পরিচয়পত্র বা ন্যাশনাল আইডি (এনআইডি) কার্ডে থাকা তথ্য অনুযায়ী সরাবরাহ করা হবে ই-পাসপোর্ট।

এদিকে অপ্রাপ্তবয়স্ক ও প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের অধিকাংশ সময়ই জাতীয় পরিচয়পত্র করার সুযোগ থাকে না। এ জন্য এই দুই শ্রেণির নাগরিকদের পাসপোর্টের ক্ষেত্রে তাদের আবেদন নিরীক্ষার মাপকাঠি হবে অনলাইনে নিবন্ধনকৃত জন্ম নিবন্ধন সনদ। এবার তাহলে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ছাড়া ই-পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য আবেদন প্রক্রিয়া জেনে নেয়া যাক।

অনলাইনে ই-পাসপোর্ট আবেদন করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র: অনূর্ধ্ব ১৮ বছরী ব্যক্তির জন্য অনলাইনে নিবন্ধনকৃত জন্ম সনদপত্র (BRC English Version)। ১৮ থেকে ২০ বছর বয়সী প্রার্থীর ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র বা অনলাইনে নিবন্ধনকৃত জন্ম সনদপত্র। ২০ বছরের অধিক বয়সী প্রার্থীর ক্ষেত্রে তার জাতীয় পরিচয়পত্র অত্যাবশ্যক। তবে বিদেশে অবস্থান করলে সেখানে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশন থেকে আবেদনকারীরা তাদের অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ (ইংরেজি সংস্করণ) দিতে পারবেন। শিশুদের ক্ষেত্রে বাবা-মা উভয়ের জাতীয় পরিচয়পত্র লাগবে।

এছাড়া বসবাসরত ঠিকানার সাম্প্রতিক ইউটিলিটির (গ্যাস, বিদ্যুৎ বা পানি) বিল প্রদানের রশিদ। দত্তক বা অভিভাবকত্ব গ্রহণকারীদের জন্য সুরক্ষা সেবা বিভাগ (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) কর্তৃক জারিকৃত আদেশ, বিবাহ সনদ বা নিকাহনামা এবং বিয়েবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে তালাকনামা (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) প্রয়োজন।

পেশাজীবীরা যেসব কাগজপত্র দেখাবেন: ইঞ্জিনিয়ার, ড্রাইভার ও ডাক্তারের মতো কারিগরি বা প্রযুক্তিগত পেশাজীবী ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্ট কারিগরি সনদপত্র প্রয়োজন হবে। শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সবশেষ শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্তৃক প্রদানকৃত প্রত্যয়নপত্র বা নিদেনপক্ষে স্টুডেন্ট আইডি কার্ড।

বেসরকারি কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে তাদের নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে সরবরাহকৃত আনুষ্ঠানিক প্রত্যয়নপত্র প্রয়োজন হবে। সরকারি চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত যেকোনো একটি নথি (ইস্যুকারী কর্তৃপক্ষের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে নোটিশ হিসেবে প্রকাশিত হতে হবে) – সরকারি আদেশ (জিও), অনাপত্তি পত্র (এনওসি), প্রত্যয়নপত্র, অবসরোত্তর ছুটির আদেশ (পিআরএল অর্ডার), পেনশন বই, কৃষক বা কৃষি কাজে যুক্ত থাকলে জর্মির পর্চা (অনুলিপি), ব্যবসায়ীর ক্ষেত্রে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স (অনুলিপি)।

আবেদনপত্র জমা দেয়ার সময় উপরোক্ত কাগজপত্রের সঙ্গে আরও যেসব যুক্ত করতে হবে: বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের নির্ধারিত সময়সহ আবেদনপত্রের সারাংশ (মুদ্রিত কপি), অনলাইন নিবন্ধিত পূর্ণ আবেদনপত্র (মুদ্রিত কপি), পাসপোর্টের ফি জমা প্রদানের রশিদ, অনূর্ধ্ব ৬ বছর বয়সী শিশুর ক্ষেত্রে গ্রে ব্যাকগ্রাউন্ডে ল্যাবে মুদ্রিত সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইহের ছবি, ৬ বছরের বেশি বয়সী প্রার্থীর পৃথক কোনো ছবি দেয়ার প্রয়োজন নেই। আবেদনের জন্য প্রয়োজন এসব কাগজপত্র সত্যায়িত করার প্রয়োজন নেই।

ধারাবাহিকভাবে ই-পাসপোর্টের আবেদনের নিয়ম:
অনলাইনে আবেদন ফর্ম পূরণ: 
প্রথমেই ইন্টারনেট ব্রাউজার ওপেন করে সরাসরি www.epassport.gov.bd এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। তারপর ‘অ্যাপ্লাই অনলাইন’ ট্যাবে ক্লিক করতে হবে। এবা আঞ্চলিক ই-পাসপোর্ট কার্যালয় নির্ধারণ করতে হবে। স্ক্রিনে ড্রপ ডাউন লিস্ট থেকে প্রার্থীর অবস্থানরত জেলা ও থানার নাম নির্বাচন করতে হবে। ফলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অধিভুক্ত ই-পাসপোর্ট কার্যালয়ের নাম নির্ধারিত হবে।

এছাড়া আলাদাভাবে নিকটস্থ ই-পাসপোর্ট কার্যালয় চেনার জন্য প্রবেশ করতে পারেন এই লিঙ্কে- https://dip.gov.bd/site/page/4d4ea063-50df-46ee-a326-492d8ef2dbb0/-

পাসপোর্ট অফিস নির্ধারণের পর ই-পাসপোর্ট অনলাইন নিবন্ধন পোর্টালে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন একটি ই-মেইল ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধন ও মোবাইল নম্বর দিয়ে একটি ব্যতিক্রম পাসওয়ার্ড সেট করতে হবে। তারপর অ্যাকাউন্ট খোলা হলে পরবর্তীতে ই-মেইল বা মোবাইল নম্বর এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করতে পারবেন।

আবেদন ফর্মের প্রতিটি তথ্য অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী উল্লেখ করতে হবে। ন্যূনতম তারকা চিহ্নিত তথ্যগুলো অবশ্যই সফলভাবে প্রদানের পর পাসপোর্ট ফি প্রদানের অপশন আসবে। ফি তাৎক্ষণিকভাবে অনলাইনে পরিশোধ করা হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে রশিদ নম্বর সংযুক্ত হবে। পরবর্তীতে বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের জন্য দিনক্ষণ নির্ধারণ করতে হবে। স্ক্রিনে প্রদর্শিত ক্যালেন্ডার থেকে উপলব্ধ তারিখগুলো থেকে পছন্দসই একটি তারিখ নির্ধারণ করতে পারবেন প্রার্থী। এরপরই চূড়ান্ত পর্যায়, যেখানে সাবমিট সম্পন্ন করার পর অ্যাপয়েনমেন্টসহ পুরো আবেদনের একটি সামারি প্রদর্শিত হবে। এই সামারি এবং সাবমিটকৃত পুরো অনলাইন নিবন্ধনের প্রিন্ট কপি অন্যসব কাগজপত্রের সঙ্গে সংযুক্তি হিসেবে জমা দিতে হবে।

ই-পাসপোর্ট ফি পরিশোধ: ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করে ফি পরিশোধের জন্য পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অধিদপ্তরের অনুমোদিত কিছু পেমেন্ট সিস্টেম রয়েছে। এসব হচ্ছে- ভিসা, মাস্টার ও অ্যামেরিকান এক্সপ্রেস কার্ড, বিকাশ, নগদ, রকেট, ইউপে, ডিমানি, ওকে ওয়ালেট এবং এমবিএল রেইন্বো। আর অনুমোদিত ব্যাংকগুলো হচ্ছে- ব্যাংক এশিয়া, ব্র্যাক ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, আরব-বাংলাদেশ ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক এবং মিডল্যান্ড ব্যাংক।

৫ বছর ও ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট আবেদনের খরচ: পাসপোর্ট বইয়ের পৃষ্ঠা, পাসপোর্টের মেয়াদ ও বিতরণের সময়সীমার ভিত্তিতে ফি ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। মূলত রেগুলার, এক্সপ্রেস এবং সুপার এক্সপ্রেস, এই তিন ক্যাটাগরিতে সরবরাহ করা হয় ই-পাসপোর্ট।

অধিকতর দ্রুত সময়ে পাসপোর্ট পাওয়ার মাধ্যম হচ্ছে সুপার এক্সপ্রেস মাধ্যম। এতে বায়োমেট্রিক সংগ্রহের তারিখ থেকে মাত্র ২ কার্যদিবসের পাসপোর্ট পাওয়া যায়। এক্সপ্রেস ক্যাটাগরিতে বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের তারিখ থেকে ৭ থেকে সর্বোচ্চ ১০ কার্যদিবসের মধ্যে পাসপোর্ট পাওয়া যায়। আর রেগুলার ক্যাটাগরিতে সর্বাধিক সময়সীমা লাগে, যেখানে বায়োমেট্রিক প্রদানের দিন থেকে ন্যূনতম ১৫ কার্যদিবস বা ২১ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট পাওয়া যায়।

  • ৫ বছর মেয়াদী ৪৮ পৃষ্ঠার ই-পাসপোর্ট— রেগুলার ফি: ৪ হাজার ২৫ টাকা, এক্সপ্রেস: ৬ হাজার ৩২৫ টাকা, সুপার এক্সপ্রেস: ৮ হাজার ৬২৫ টাকা।
  • ৫ বছর মেয়াদী ৬৪ পৃষ্ঠার ই-পাসপোর্ট— রেগুলার ফি: ৬ হাজার ৩২৫ টাকা, এক্সপ্রেস: ৮ হাজার ৬২৫ টাকা, সুপার এক্সপ্রেস: ১২ হাজার ৭৫ টাকা।
  • ১০ বছর মেয়াদী ৪৮ পৃষ্ঠার ই-পাসপোর্ট— রেগুলার ফি: ৫ হাজার ৭৫০ টাকা, এক্সপ্রেস: ৮ হাজার ৫০ টাকা, সুপার এক্সপ্রেস: ১০ হাজার ৩৫০ টাকা।
  • ১০ বছর মেয়াদী ৬৪ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট— রেগুলার ফি: ৮ হাজার ৫০ টাকা, এক্সপ্রেস: ১০ হাজার ৩৫০ টাকা, সুপার এক্সপ্রেস: ১৩ হাজার ৮০০ টাকা।

আবেদনপত্রসহ নথিপত্র জমা ও বায়োমেট্রিক নিবন্ধন প্রক্রিয়া: উল্লেখিত সব কাগজপত্র নিয়ে পূর্বনির্ধারিত দিন উপস্থিত থাকতে হবে পাসপোর্ট অফিসে। এদিন আবেদনকারীর ছবি তোলা, হাতের আঙুলের ছাপ নেয়া হয়। বায়োমেট্রিক প্রক্রিয়ার জন্য ছবি উঠাতে প্রার্থীকে অবশ্যই রঙিন পোশাক পরে আসতে হবে পাসপোর্ট অফিসে। সব কাজ শেষে প্রার্থীকে বিতরণের সম্ভাব্য তারিখ সম্বলিত একটি স্লিপ দেয়া হবে। স্লিপটি আবেদনকারীর বায়ো নিবন্ধনের প্রমাণপত্র, এ জন্য এটি পাসপোর্ট সংগ্রহের দিন অবশ্যই সঙ্গে করে নিয়ে আসতে হবে।

অনলাইনে ই-পাসপোর্ট আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা যাচাইয়ের উপায়: বায়ো নিবন্ধনের দিন থেকে পাসপোর্ট সংগ্রহের সম্ভাব্য দিনটির আগে পাসপোর্ট আবেদনের অবস্থা অনলাইনের মাধ্যমে যাচাই করা যায়। এ ক্ষেত্রে পাসপোর্ট কোন প্রক্রিয়ায় রয়েছে, তা দেখা থেকে শুরু করে পাসপোর্ট প্রিন্ট এবং তা সরবরাহ করার জন্য প্রস্তুত কিনা, সেটিও দেখা যায়। এ জন্য প্রবেশ করতে হবে এই লিঙ্কে- https://www.epassport.gov.bd/authorization/application-status- লিঙ্কে।

পাসপোর্ট অফিস থেকে দেয়া বিতরণ স্লিপে ১৩ সংখ্যার একটি অ্যাপ্লিকেশন আইডি রয়েছে। আবেদনের বর্তমান অবস্থা যাচাইয়ের জন্য এই আইডি বা আবেদন ফর্মে থাকা ওআইডি (অনলাইন রেজিস্ট্রেশন আইডি) ব্যবহার করতে হবে।

পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়া ই-পাসপোর্ট সংগ্রহ: আগে বায়োমেট্রিক দেয়ার কিছুদিন পর পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য আবেদনকারীকে ফোন করা হতো। কিন্তু এখন থেকে এই কার্যক্রম থাকছে না। ই-পাসপোর্ট সংগ্রহের জন্য একদম প্রস্তুত হলে যথারীতি আবেদনপত্রে উল্লেখিত ফোন নম্বর ও ই-মেইলে নির্দিষ্ট তারিখ সম্বলিত বার্তা পাঠানো হবে। আর সেই তারিখে বিতরণ স্লিপ ও জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে নিয়ে সংশ্লিষ্ট পাসপোর্ট অফিসে হাজির হতে হবে।

প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে।