
দেশজুড়ে: বাংলাদেশে বর্তমানে সক্রিয় বড় ছাত্রসংগঠনগুলো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার ক্ষেত্রে অর্থের উৎস নিয়ে অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগের লড়াইয়ে নেমেছে। সম্প্রতি বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদল এবং জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত ছাত্রশিবির একে অপরের অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। অন্যদিকে, গণ-অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টির অর্থের জোগান নিয়েও চলছে নানা আলোচনা।
বিগত শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, তদবির, সন্ত্রাস, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের মতো নানা অভিযোগ ছিল। গত ৫ আগস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পর গত কয়েক মাসে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ব্যবসায়ীদের কাছে টাকা চাওয়ার মতো অভিযোগ পাওয়া যায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে গত এক যুগেরও বেশি সময় প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেনি ছাত্রশিবির। আগস্টের পটপরিবর্তনের পর ক্যাম্পাসগুলোতে প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কার্যক্রম শুরু করে তারা। সাম্প্রতিক এই ছাত্রসংগঠনকে ঢাকায় সম্মেলনসহ বড় কিছু কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়। এ বছর রোজার শুরু থেকে ছাত্রশিবিরকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ক্যাম্পাসে বড় পরিসরে ইফতার বিতরণ করতে দেখা যায়। গত শুক্রবার এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের পক্ষ থেকে শিবিরের আয়ের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। ওই সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদল নেতা নাসির উদ্দিন বলেন, ‘শিবির প্রতিদিনই ইফতারে তিন লাখ টাকা করে ব্যয় করছে। যদি তিন লাখ করে প্রতিদিন ব্যয় করা হয়, তাহলে পুরো রমজানে ৯০ লাখ টাকা ব্যয় হবে।’
এই ৯০ লাখ টাকা একটি সাধারণ শিক্ষার্থীদের সংগঠন হিসেবে কিভাবে উপার্জন করছে, কিংবা শিবিরের অর্থের উৎস কী তা জানতে চায় ছাত্রদল। এ নিয়ে ছাত্রশিবিরের নুরুল ইসলাম সাদ্দামের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি দাবি করেন, শিবিরের ইফতার খরচ নিয়ে ছাত্রদল যে অভিযোগটি তুলেছে সেটি সঠিক নয়। তিনি বলেন, ‘ছাত্রদল ধারণা নিয়ে বলেছে। আমরা বলেছি এক দিনে তিন লাখ খরচ হয়েছে। আমরা যদি ৩০ দিন দিই, তাহলে ৯০ লাখ টাকা খরচ হবে সেটা ধারণা। কিন্তু আমরা ৩০ দিনের ইফতার আদতে দেব কি না সেটা তো তারা জানেই না। তারা যা বলেছে কল্পনা করে বলেছে।’ তারপরও এই ছাত্রসংগঠনের এই বিপুল পরিমাণ অর্থের খরচ কোথা থেকে আসে, সেই প্রশ্নও ছিল ছাত্রশিবিরের এই নেতার কাছে। জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের সব সদস্যকে সংগঠনে দান করতে হয়। ইচ্ছা করেই তারা দেয়। আমাদের প্রাক্তনরা প্রতি মাসে নিয়মিত ‘এয়ানত’ (দান) করেন। এর বাইরেও আমাদের প্রকাশনাসামগ্রীর বিক্রির মুনাফা থেকে সংগঠন উপকৃত হয়।’
এনসিপির আয়ের উৎস
গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি আত্মপ্রকাশের দিনেই ঢাকায় বিশাল সমাবেশ করেছে। সেখানে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ও জেলা শহর থেকে নেতাকর্মীদের গাড়ি ভাড়া করে এসে অংশ নিতে দেখা গেছে।
রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউতে নতুন একটি সংগঠনের আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠান ও এর খরচ নিয়ে ছাত্রদলের সংবাদ সম্মেলন থেকে অভিযোগ করা হয়। জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষ থেকে দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ওই দিনই সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমাদের কারা আর্থিকভাবে সহযোগিতা করছে আমরা যদি তাদের নাম প্রকাশ করি, তারা কোনোভাবে ক্ষতির শিকার হবে না সেই নিশ্চয়তা সরকারের পক্ষ থেকে দিতে হবে।’ তাহলে কারা এই অর্থ বরাদ্দ করছে, তাদের নাম প্রকাশে দলটির আপত্তি রয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, ‘আমাদের দলে অনেক তরুণ পেশাজীবী আছেন, তারা ডোনেট করছেন। তাদের সঙ্গে কানেকটেড অনেক শুভ্যানুধ্যায়ী থাকেন। তাদের অনেকেও নতুন একটা উদ্যোগকে স্বাগত জানানোর জন্য কাজ করছেন বা ডোনেট করছেন।’
গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের আরেকটি অংশ একই আদর্শে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ নামে নতুন একটি ছাত্রসংগঠন চালু করেছে গত ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে। গত কয়েক দিনে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ইফতার আয়োজনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেছে তাদের। এই ছাত্রসংগঠনটির আয়ের উৎস জানতে চাওয়া হলে সংগঠনের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি স্বচ্ছতা বজায় রাখার। আমরা তেমন কোনো খরচও করি না। ইফতার যারা করেছি, সবার নিজের টাকা দিয়ে করছি।’ জাতীয় নাগরিক পার্টি বলছে, অন্য ব্যবসায়ীদের কাছে তারা টাকা চাইবে না। বরং তারা দলের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য জনগণের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করবে। যেটাকে বলা হয় ‘ক্রাউড ফান্ডিং’। যদিও এর মধ্যেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো কোনো নেতা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছে। এরই মধ্যে গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া এই প্ল্যাটফরমের রংপুরের এক নেতার এক লাখ টাকা চাঁদা দাবির ভিডিও এবং অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস হয়েছে। এ নিয়ে থানায় অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে। এর আগে, কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সমন্বয়কের বাবার বিরুদ্ধেও চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠে।
সূত্র : বিবিসি বাংলা