প্রচ্ছদ হেড লাইন মাগুরায় ধ র্ষ ণের শিকার শিশুটির বক্তব্যের দৃশ্য দাবিতে ভিন্ন মেয়ের ভিডিও...

মাগুরায় ধ র্ষ ণের শিকার শিশুটির বক্তব্যের দৃশ্য দাবিতে ভিন্ন মেয়ের ভিডিও প্রচার

গত ৫ মার্চ মাগুরায় বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়ে আট বছরের এক শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে পরদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শিশুটির অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে শিশুদের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (পিআইসিইউ) লাইফ সাপোর্ট রাখা হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি মেয়ের কথা বলার দৃশ্য প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, মাগুরার উক্ত শিশুর হাসপাতালে কথা বলার দৃশ্য এটি।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

উক্ত দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

উক্ত দাবিতে থ্রেডসে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

উক্ত দাবিতে এক্সে (সাবেক টুইটার) প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি মাগুরায় ধর্ষণের শিকার হওয়া আলোচিত শিশুর কথা বলার দৃশ্যের নয় বরং চাঁদপুরে মামা-মামির হাতে নির্যাতনের শিকার হওয়া কিশোরী রোজিনাকে মাগুরার শিশুটি দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে চাঁদপুর ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম চাঁদপুর বুলেটিনের ফেসবুক পেজে গত ১০ মার্চে প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির সাদৃশ্য পাওয়া যায়৷ ভিডিওটি সম্পর্কে পোস্টটির ক্যাপশনে বলা হয়, “চাঁদপুরে মামা-মামির হাতে পৈশাচিক নির্যাতনে শিকার রোজিনার চাওয়া…”

আরো অনুসন্ধান করে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটে “কিশোরীকে গরম খুন্তির ছেঁকা-নির্যাতন, মামা-মামি গ্রেপ্তার” শীর্ষক শিরোনামে গত ৭ মার্চে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, “নির্যাতনের শিকার রোজিনা আক্তার (১৫) চাঁদপুর সদর উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়নের বাখরপুর গ্রামের আলী আহম্মদ ভূঁইয়ার মেয়ে। এ ঘটনায় গতকাল (৬ মার্চ) রাতে চাঁদপুর মডেল থানায় নারী শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেছেন আলী আহম্মদ ভূঁইয়া। রোজিনা চাঁদপুর ২৫০ শয্যার সরকারি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেছেন, ‘এক বছর আগে রোজিনাকে ঢাকায় আমার বড় মেয়ের কাছে দিয়েছিলাম। সেখান থেকে আমাকে না জানিয়ে রোজিনার মামা রুবেল মোল্লা তাঁর প্রতিবন্ধী সন্তান রিফাতকে দেখাশোনা করার কথা বলে তাকে (রোজিনা) ঢাকায় বাসায় নিয়ে যান। কিন্তু রোজিনাকে গৃহকর্মীর কাজ করানো হতো। গত জানুয়ারিতে ঢাকা থেকে চাঁদপুরে চলে আসেন রুবেল মোল্লা ও তাঁর স্ত্রী রোকেয়া বেগম। শহরের বিষ্ণুদী মাদ্রাসা রোড এলাকার একটি ভাড়া বাসায় ওঠেন। এক বছর ধরে আমাদের সঙ্গে রোজিনাকে দেখা করতে এবং কথা বলতে দেননি তাঁরা। বৃহস্পতিবার বিকেলে রোজিনা মামা-মামির নির্যাতন সইতে না পেরে ঘর থেকে পালিয়ে যায়। এ সময় স্থানীয় লোকজন রোজিনার অবস্থা দেখে পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে প্রথম থানায় নিয়ে যায় এবং হাসপাতালে ভর্তি করায়।’

রোজিনা জানায়, নানা অজুহাতে মামা-মামি তাকে মারধর করত। ধারালো দা, ছুরি দিয়ে শরীরে আঘাত করেছে। পিঠে ব্লেড দিয়ে কেটে দিয়েছে। গরম খুন্তি দিয়ে ছেঁকা দিত। পায়ের আঙুলগুলো থেঁতলে দিয়েছে। ঠিকমতো খাবার দিত না। মা–বাবার সঙ্গেও দেখা বা কথা বলতে চাইলে দিত না। গতকাল বাসায় মামি ছিল না। তখন সে ঘর থেকে পালিয়ে বাইরে চলে আসে।”

এছাড়া এ বিষয়ে মূলধারার গণমাধ্যম আরটিভির ফেসবুক পেজেও একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। আরটিভিতে প্রদর্শিত রোজিনার দৃশ্যের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত কিশোরীর তুলনা করলে সাদৃশ্য পাওয়া যায় এবং নিশ্চিত হওয়া যায় যে, প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত কিশোরী মাগুরার আলোচিত শিশুটি নয় বরং চাঁদপুরে মামা-মামির হাতে নির্যাতনের শিকার হওয়া কিশোরী রোজিনা।

অপরদিকে মাগুরার আলোচিত শিশুটির বিষয়ে অনুসন্ধান করলে মূলধারার গণমাধ্যম সমকালে গত ১০ মার্চে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানিয়েছেন, মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশুটি চোখের পাতা নেড়েছে। তার অবস্থার সামান্য উন্নতি হয়েছে।…তবে শ্বাসরোধের কারণে তার মস্তিকে অক্সিজেন সরবরাহ বিঘ্নিত হয়েছিল। মস্তিষ্কে পানি জমে গিয়েছিল, যেটা অপসারণ করা সম্ভব হয়নি। তার বুকের মধ্যে যে বাতাস জমে ছিল সেটা দূর করা গেছে। চিকিৎসকরা আশাবাদী দুই এক দিনের মধ্যে শিশুটির অবস্থার আরও উন্নতি হবে।”

এছাড়া, মাগুরার শিশুটির বিষয়ে একইদিন রাতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ফেসবুক পেজ থেকে একটি পোস্টের মাধ্যমে মাগুরার শিশুটির ব্যাপারে নেওয়া পদক্ষেপের বিষয়ে জানানো হয় এবং বলা হয়, “প্রতিদিন স্ট্যান্ডার্ড আইসিইউ প্রটোকল অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা এবং তদানুযায়ী চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। বর্তমানে শিশুটি লাইফ সাপোর্টে আছে।”

সুতরাং, চাঁদপুরে মামা-মামির হাতে নির্যাতনের শিকার হওয়া কিশোরী রোজিনার কথা বলার দৃশ্যকে মাগুরায় ধর্ষণের শিকার হওয়া আলোচিত শিশুর কথা বলার দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে।