
আধ্যাত্মিক রাজধানী সিলেট। সর্ব ধর্মের মানুষের কাছে এ অঞ্চলের বাড়তি কদর। অবশ্য এর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট রয়েছে। আধ্যাত্মিকতার প্রতীক হিসেবে ‘কুতুব’ শব্দটি বহুল প্রচলিত। সুফিবাদে একেকজন ‘কুতুব’ মানে একেকজন ‘নিখুঁত’ মানুষ। কিন্তু না, আজকের রিপোর্টে কুতুব শব্দটির ব্যবহার হচ্ছে ক্ষমতার প্রতীক বোঝাতে! গত ১৫ বছর তারা নানাভাবে সিলেটকে শাসন করেছেন। এই সময়ের সব ঘটন-অঘটনে তারা কোনো না কোনোভাবে যুক্ত ছিলেন। নিজস্ব স্বার্থ রক্ষায় তাদের স্বতন্ত্র বলয় ছিল। আবার স্বার্থের জন্যই তারা কখনো কখনো জোটবদ্ধ হয়েছেন!
মোদ্দা কথা তাদের কাছে দেশ, জাতির উন্নয়ন নয় বরং ব্যক্তিস্বার্থই ছিল মুখ্য। কেউ ছিলেন গণ ভবনের, কেউ আবার লন্ডনের খলিফা। দোর্দণ্ডপ্রতাপ নিয়ে ক্ষমতা জাহিরে এক ধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা ছিল তাদের। কিন্তু, আজ সবই অতীত। তাদের প্রায় সবাই পলাতক। ৫ই আগস্টের রক্তাক্ত অভ্যুত্থানে পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পলায়নের পর তারা যে যার মতো করে গা ঢাকা দিয়েছেন। তাদের সাম্রাজ্য আজ খাঁ খাঁ করছে। অবশ্য চতুর কিছু ‘কুতুব’ বিরোধীদের সঙ্গে হাত মিলেয়েছেন। তারা আগে থেকেই এক ধরনের লিয়াজোঁর মধ্যে ছিলেন। সেটার বেনিফিট পাচ্ছেন এখন।
সিলেটের রাজনীতিতে প্রবাসী কুতুবদের প্রাধান্য বহু দিনের। আরোপিত এসব নেতাদের নিয়ে মাঠে অস্বস্তি ছিল, এখনো আছে। কিন্তু কোনো দলেই তৃণমূলের মতামতের খুব একটা প্রতিফলন নেই। আওয়ামী লীগে তো নয়ই। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে সুদূর লন্ডন থেকে উড়ে আসা এক অতিথি নেতাকে ঘিরে আবর্তিত হয় সিলেটের আওয়ামী রাজনীতি। জননন্দিত মেয়র বদর উদ্দীন আহমদ কামরানের শূন্যতা পূরণে সেই অতিথি নেতার আবির্ভাব ঘটে। তার সঙ্গে জোটবদ্ধ হন প্রভাবশালী আরও চার নেতা। জনশ্রুতি আছে তাদের সম্মিলিত শক্তি অর্থাৎ পঞ্চপাণ্ডবের দখলে চলে যায় সিলেট। দলীয় কর্মীরা এটাকে ‘নিউ ফরম্যাট’ আখ্যা দেন। হাসিনা আমলের শেষ দিন অবধি তাদের নিয়ন্ত্রণেই ছিল সিলেট। এ অঞ্চলে বিতর্কিত, আলোচিত সব কাজই হতো তাদের শেল্টারে। ৫ই আগস্টের পর হাওয়ার মতো উড়ে গেছে সেই পঞ্চপাণ্ডব। বেশিরভাগই পালিয়েছে বিদেশে। তাদের সাঙ্গপাঙ্গরাও আজ দেশে নেই।
পঞ্চপাণ্ডবের যত কীর্তি:
সিলেট সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী রাজনীতিতে একাট্টা হয় পঞ্চপাণ্ডবের দল। এর কেন্দ্রে ছিলেন সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। যুক্তরাজ্য থেকে এসে মেয়র হওয়ার পর তিনি নিজের বলয় গড়েন। হাইকমান্ডের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকার সুযোগ কাজে লাগান। নিজের বলয়কে দ্রুতই শক্তিশালী করে তোলেন। ডামি নির্বাচনে তার গ্রুপের অনেককে এমপি বানানোসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন করতে সক্ষম হন। এই গ্রুপে আনোয়ারুজ্জামানের সহযোগী ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সাবেক এমপি হাবিবুর রহমান হাবিব, সাবেক এমপি ও সিলেটজুড়ে বিতর্কের কেন্দ্রে থাকা রঞ্জিত চন্দ্র সরকার এবং নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক বিধান কুমার সাহা। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এখন তারা কেউ আর দেশে নেই।
বলা হচ্ছে; সিলেট আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে পঞ্চপাণ্ডবের কাছে এক সময় অসহায় ছিলেন সবাই। মহাজোটের শরীক নয়, নিজ দলের সিনিয়র নেতা এবং আওয়ামী সরকারের মন্ত্রীদেরও পাত্তা দেননি তারা। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ দিন পর্যন্ত সিলেটে তারা তাদের প্রভাব বলয় তথা ‘ক্ষমতা’ ধরে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। দলীয় নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন- শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তারা দেশেই ছিলেন। মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সিলেটে থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। হাসিনা পালানোর দিন তিনি বাসাতে ছিলেন। একপর্যায়ে তাকে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে নেয়া হয়। তারপর সুবিধাজনক সময়ে দেশ ছাড়েন। কীভাবে দেশ ছেড়েছেন সে বিষয়ে তার ভাষ্য ছিল এমন ‘আমি ৫ই আগস্ট থেকে সিলেট ক্যান্টনমেন্টে ছিলাম। সেখানে থেকে ১৪ই আগস্ট বের হয়েছি।’
ক্যান্টনমেন্টে নিজ থেকে আশ্রয় নিয়েছিলেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি যখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সঙ্গে কথা বলেছি তারা তখন আমাকে ওয়েলকাম করেছে। আপনি যেহেতু সিলেট সিটির নির্বাচিত মেয়র, সেহেতু তারা আমাকে সসম্মানে সেখানে রেখেছেন।’ আনোয়ারুজ্জামানের দাবি মতে, তিনি ২০২৪ সালের ১৭ই আগস্ট থেকে লন্ডনে রয়েছেন। সিলেটে বলাবলি আছে মিস্টার চৌধুরী ভারত হয়ে লন্ডনে গেছেন। অবশ্য তিনি এ দাবি নাকচ করেছেন। রাইট চ্যানেল দিয়ে, বৃটিশ পাসপোর্ট দিয়েই লন্ডনে পৌঁছান দাবি করে তিনি বলেন, কোনো অস্বাভাবিকতা নয়, যেভাবে মানুষ সবসময় আসে, আমিও সেভাবেই লন্ডনে পৌঁছেছি। সিটি মেয়র হিসেবে তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পূর্ণ প্রটেকশন এবং সহযোগিতা পেয়েছেন। তিনি যে দাবিই করেন না কেন রিপোর্ট বলছে, ‘শহর কুতুব’ আনোয়ারুজ্জামান সিলেট এয়ারপোর্ট ব্যবহারের সাহস করেননি। বরং তিনি সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতের মেঘালয় রাজ্য হয়ে প্রথমে কলকাতা, পরে লন্ডনে গেছেন।
তার ডুয়েল সিটিজেনশিপ অর্থাৎ বৃটেনের নাগরিকত্ব থাকার কারণে লন্ডনে পৌঁছেতে তেমন বেগ পেতে হয়নি। সেখানে পৌঁছার পর থেকে তিনি সক্রিয়। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাকে প্রকাশ্যে দেখা গেছে। পাশাপাশি বৃটেনে থেকে তিনি ভার্চ্যুয়াল কর্মকাণ্ডেও সম্পৃক্ত রয়েছেন। আনোয়ারুজ্জামানের সঙ্গে ভারতে পালিয়েছেন আলোচিত রঞ্জিত সরকার এমপি। কেউ বলছেন তিনি ভারতে রয়েছেন। আবার কেউ বলছেন ভিসা থাকায় তিনি লন্ডনে পাড়ি সমাতে সক্ষম হয়েছেন। তবে অন্যদের মতো এখনো তাকে প্রকাশ্যে কোথাও দেখা যায়নি। বরং তিনি লোকচক্ষুর অন্তরালে রয়েছেন।
রঞ্জিতের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়- তিনি বৃটেনে অবস্থান করছেন এবং সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণের প্রাণান্তকর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। পূর্ব সিলেটের অপরাধের গডফাদার রঞ্জিত সরকারের টিলাগড়, মেজরটিলা থেকে শুরু করে জাফলং পর্যন্ত ত্রাস ও লুটপাটের রাজত্ব ছিল। তার বাহিনী এবং টর্চার সেলের কথা এখন মানুষের মুখে মুখে।
জুলাইতে বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে সিলেটে অনুপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও মৌলভীবাজার-২ আসনের এমপি শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। সেই সময়ে তিনি ঢাকায় অবস্থান করছিলেন বলে জানানো হয়েছে। তবে তিনি আদতে ঢাকায়, নাকি দুর্নীতি ও পাচার করা অর্থে গড়া সেকেন্ডহোম দুবাইতে ছিলেন তা স্পষ্ট নয়। তবে এটা নিশ্চিত যে, ৫ই আগস্ট তার লোকেশন ছিলো ঢাকা। এদিন শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর বিভাগের সাংগঠনিক নেতা হওয়ার কারণে ময়মনসিংহ চলে যান নাদেল। সেখান থেকে ময়মনসিংহের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ভারতের মেঘালয় হয়ে পশ্চিমবঙ্গে পৌঁছান। কলকাতায় নাদেল সক্রিয়ভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। এমনকি দলের অনেক সিদ্ধান্ত তিনি ভার্চ্যুয়ালি প্রচার করছেন। শিলংয়ে সিলেট আওয়ামী লীগের ৫ নেতাকে পুলিশে গ্রেপ্তারের সময় নাদেল কলকাতা থেকে শিলং-জোয়াই’র কোর্ট পর্যন্ত দৌড়ঝাঁপ করেন। তার সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে সিলেটের নেতাদের। নাদেল সিলেটের রাজনীতির আলোচিত ব্যক্তি। বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গেও তার সুসম্পর্ক রয়েছে। শেখ হাসিনা স্টাইলে নাদেল সিলেটের সব রাজনৈতিক দলে তার এজেন্ট ঢুকিয়ে রেখেছেন। বিএনপি সিলেট মহানগরের এক নেতা এখন তার সমুদয় ব্যবসা দেখভালের নিয়েছেন।
নাদেল প্রশ্নে জামায়াতেরও তেমন ক্ষোভ নেই। বরং কারও কারও ভালোবাসা আছে। নাদেল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড বিসিবি’র পরিচালক ছিলেন। ২০১৯ সালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়ার পর থেকে আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সিলেট ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়াম, নতুন কারাগার নির্মাণ, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ছয়লেন প্রকল্প, এয়ারপোর্টের কাজের দুর্নীতির কথা মানুষের মুখে মুখে। নগরের হাউজিং এস্টেট এলাকায় নাদেল দুর্নীতির টাকায় নির্মাণ করেছেন বহুতল ফ্ল্যাটবাড়ি। হাউজিং এস্টেট এলাকায় ছিল তার আস্তানা। সেখানে তার দুর্নীতির পদচিহ্ন রয়েছে। দু’হাতে টাকা কামিয়েছেন। সিলেটে ওষুধ কোম্পানি, জমি ও বাড়ি নির্মাণ, মার্কেটে স্পেস ক্রয়, হাউজিংসহ নানা ব্যবসায় বিনিয়োগ রয়েছে তার। হাউজিং এস্টেট এলাকার বাসিন্দা নগর বিএনপি’র এক শীর্ষ নেতা নাদেলের দুর্নীতিতে সৃষ্ট সম্পদ এখন তদারকি করছেন। এ নিয়ে বিএনপি’র ভেতরে রীতিমতো তোলপাড় চলছে।
পঞ্চপাণ্ডবের অন্যতম সিলেট-৩ আসনের এমপি হাবিবুর রহমান হাবিব ৫ই আগস্ট পর্যন্ত সিলেটে ছিলেন। পটপরিবর্তনের পরপরই তিনি ঢাকা হয়ে প্রথমে দুবাই, পরে লন্ডন পাড়ি জমান। বৃটেনে আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে হাবিব প্রকাশ্যেই রয়েছেন। তিনি দলের ভার্চ্যুয়াল কর্মকাণ্ডেও সম্পৃক্ত রয়েছেন।
সিলেটের পুরনো ক্যাডার বিধান কুমার সাহা। তার প্রতি ক্ষোভের শেষ নেই মানুষের। দিনের বেলা নেশায় বুদ হয়ে থাকতেন তিনি। সিলেটের আন্ডারওয়ার্ল্ডের একাংশের নিয়ন্ত্রণ ছিল তার। ৫ই আগস্টের পরে বিধান লন্ডনে চলে যান। এখন সেখানেই অবস্থান করছেন। ভারত হয়ে তিনি লন্ডনে পাড়ি জমিয়েছেন বলে ঘনিষ্ঠজনেরা জানিয়ে। সাবেক এমপি হাবিব সিলেটের এমপিদের মধ্যে আলোচিত ছিলেন। গত বর্ষার মৌসুমে তাকে ঘিরে এক মুরব্বির মন্তব্য ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। ফেঞ্চুগঞ্জ সারকারখানা, কদমতলী বাস টার্মিনাল, ট্রাক টার্মিনালসহ দক্ষিণ সুরমার গোটা অপরাধ জগৎ ছিল তার লোকজনের নিয়ন্ত্রণে। এ ছাড়া ঢাকা ও সিলেটে তার পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রবাসী পল্লী নিয়ে আছে চরম বিতর্ক। অভিযোগ আছে- এমপি’র প্রভাব খাটিয়ে তার ভাইয়েরা ঢাকা ও সিলেটে জমি দখলসহ নানা অপরাধে জড়িত ছিলেন।
সিলেট-১ আসনের এমপি ছিলেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। পটপরিবর্তনকালে তিনি মন্ত্রী ছিলেন না। ফলে আওয়ামী লীগ সরকার সরকারের পতনের পর তাকে নিয়ে তেমন আলোচনা নেই সিলেটে। ড. মোমেন সদর-কোম্পানীগঞ্জ আসনের এমপি থাকলে মন্ত্রিত্ব হারানোর বেদনায় কার্যত ছিলেন নিষ্ক্রিয়। তবে হ্যাঁ, সক্রিয় ছিলেন মোমেন পত্নী সেলিনা মোমেন এবং তার বহুল আলোচিত বান্ধবী রহস্যময়ী হেলেন আহমেদ। তাদের দু’জনের সঙ্গে আরেকটি নাম মানুষের মুখে মুখে। ড. মোমেনের এপিএস খ্যাত জুয়েল আহমদ। জুয়েল কোনকালেই মন্ত্রীর এপিএস ছিলেন না। তিনি তাদের ক্ষমতার শেষ দিন পর্যন্ত মোমেনের ‘ব্যক্তিগত সহকারী’ হিসেবে সেলিনা-হেলেনের ফুটফরমাশ খেটেছেন আর নিজের আখের গুছিয়েছেন। পটপরিবর্তনের পর থেকে ড. একে মোমেন সিলেটে নেই। সাবেক অর্থমন্ত্রী (প্রয়াত) আবুল মাল আব্দুল মুহিতের পরিবারকে সম্মানের চোখে দেখে সিলেটের মানুষ। মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ আসনে তার স্থলাভিষিক্ত হওয়া ড. একে আব্দুল মোমেনকেও সেভাবে গ্রহণ করেছিল জালালাবাদবাসী। কিন্তু তার অতিকথন এবং অধস্তনদের দুর্নীতি সেই অবস্থান বিনষ্ট করে দিয়েছে।
মন্ত্রীত্ব না থাকায় হাসিনা আমলেই গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছিলেন মোমেন। নিষ্ক্রিয়তার কারণে ব্যক্তিগতভাবে তিনি জনরোষ থেকে রক্ষা পেয়েছেন। তবে তার পৈতৃক ভিট তথা সহায়-সম্পত্তিতে মানুষের ক্ষোভের থাবা পড়েছিলো। সেটাও রক্ষা হয়েছে। তবে তার চারপাশে থাকা লোকজনের পাহাড়সম দুর্নীতির বিচারের দাবি এখনো সোচ্চার সিলেটবাসী। এটা প্রতিষ্ঠিত যে, মোমেনকে আশ্রয় করে সবচেয়ে বেশি রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ফায়দা লুটেছেন জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী হেলেন আহমদ, কথিত এপিএস জুয়েল আহমদ এবং আওয়ামী লীগ নেতা আজাদুর রহমান আজাদ। আজাদ মন্ত্রীর প্রভাব খাটিয়ে ভর করেছিলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর ওপর। ছড়া, খাল উদ্ধার, নিজ এলাকায় সড়ক, কালভার্ট, ওয়াকওয়ে নির্মাণে বিপুল পরিমাণ দুর্নীতি করেছেন। আর এ টাকায় মহানগরীর পূর্ব শাপলাবাগে নতুন বাড়ি নির্মাণ করেছে বলে জানিয়েছে তার ঘনিষ্ঠজনেরা।
সিলেট নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করছেন। তিনি নগরের টিলাগড় গ্রুপের একাংশের নেতা। ৫ই আগস্টের পর তিনি কানাইঘাট সীমান্ত দিয়ে শিলংয়ে পৌঁছান। সেখান থেকে লন্ডনে পাড়ি জমান। বর্তমানে বৃটেনে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তাকে সক্রিয় থাকতে দেখা গেছে।
জেলা সভাপতি, সম্পাদকসহ অন্যরাও সিলেট ছেড়ে গেছেন:
ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলনের মুখে যখন হাসিনা দেশ ছেড়ে পালান তখন ঢাকায় ছিলেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী। তবে তার কমিটি অর্থাৎ জেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি নাসির উদ্দিন খান সিলেটেই ছিলেন। জনরোষ থেকে বাঁচতে তারা উভয়ে যে যার মতো করে গা ঢাকা দেন। এর মধ্যে শফিকুর রহমান চৌধুরী মৌলভীবাজারে ও নাসির উদ্দিন খান দক্ষিণ সুরমায় মাসখানেক নিরাপদ আশ্রয়ে কাটান। সেখান থেকে সুযোগ বুঝে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে তারা আলাদা আলাদাভাবে সীমান্ত পাড়ি দেন।
বৃটেনের নাগরিকত্ব থাকার সুবাদে সাবেক প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী পালিয়েছেন লন্ডনে। আর নাসির উদ্দিন খান রয়েছে কলকাতায়। ভারতের ডাউকি এলাকায় এক ট্রাকচালককে মারধরের ঘটনায় গত ৯ই ডিসেম্বর কলকাতা থেকে নাসির উদ্দিন খানসহ ৫ আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করে ভারতীয় পুলিশ। পরে অবশ্য তারা জোয়াই আদালত থেকে জামিন পান। এখনো ভারতে আছেন নাসির খান। রিপোর্ট বলছে, তার সঙ্গে রয়েছেন সিলেট আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা। ৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগ নেতা নাসির উদ্দিন খানের বাসায় ক্ষুব্ধ জনতা হামলা ও ভাঙচুরের চেষ্টা করে। এ সময় নগর জামায়াতের এক শীর্ষ নেতা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন এবং তা রক্ষা করেন। ওই এলাকার সাবেক কাউন্সিলরও নাসির খানের বাসাটি রক্ষায় ভূমিকা রাখেন বলে জানা গেছে। তবে জেলা আওয়ামীলীগ সভপতি শফিকুর রহমান চৌধুরীর টিলাগড়ের বাসা ছাত্র জনতা কয়েক দফা ভাঙচুর করেছে। বর্তমানে বিএনপি’র এক নিষ্ক্রিয় নেতার লোকজন তার বাসা তদারকি করছেন। কেউ কেউ বলছেন; এই বাসা দখলের প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে। ডেথ জোন টিলাগড় বরাবরই অপরাধীদের অভয়ারণ্য। রাষ্ট্র ক্ষমতার পরিবর্তনের টিলাগড়ে তেমন পরিবর্তন হতো না, কিন্তু এবার রং বদল হচ্ছে। নতুন পরিচয়ে ‘সন্ত্রাসীরা’ এলাকাটির দখলে নিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেছে।
সিলেট নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ। তারা দুই ভাই (সহোদর)। ৫ই আগস্টের আগে দেশ ছেড়েছেন মাসুক উদ্দিন আহমদ। তিনি বর্তমানে লন্ডনে আছেন। তবে তার ছোট ভাই সিলেট নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদউদ্দিন আহমদ দেশেই আত্মগোপনে রয়েছেন। নগর আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেনও দেশে রয়েছেন বলে দলীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে। জানানো হয়েছে- কয়েক দফা চেষ্টা করেও তিনি দেশত্যাগ করতে পারেননি। তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তার এড়াতে জাকির আত্মগোপনে রয়েছেন।
সূত্র: মানবজমিন
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |