প্রচ্ছদ ধর্ম শাওয়ালের ৬ রোজার ফজিলত ও যেভাবে রাখবেন

শাওয়ালের ৬ রোজার ফজিলত ও যেভাবে রাখবেন

রমজান মাসে ফরজ রোজা পালনের পর শাওয়াল মাসে ৬টি রোজা রাখা সুন্নত। মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলার প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে এ আমল করেছেন এবং আমল করার নির্দেশ দিয়েছেন।

শাওয়ালের ৬ রোজার ফজিলত বর্ণনা করে আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেন, যারা রমজানে রোজা পালন করবে এবং শাওয়ালে আরও ৬টি রোজা রাখবে, তারা যেন সারাবছরই রোজা পালন করল। (সহিহ মুসলিম)

অর্থাৎ রমজানের ২৯/৩০টি রোজা রাখার পর শাওয়াল মাসের যেকোনো ৬ দিন রোজা রাখলেই ১ বছর অর্থাৎ, পুরো ৩৬০ দিন রোজা রাখার সমান সওয়াব পাওয়া যাবে।

বিশ্বনবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখবে, অতঃপর শাওয়াল মাসে ৬টি রোজা পালন করবে, সে যেন সারাবছর রোজা রাখল’। (মুসলিম)

‘রমজানের রোজা ১০ মাসের রোজার সমতুল্য আর (শাওয়ালের) ৬ রোজা ২ মাসের রোজার সমান। সুতরাং এ হলো এক বছরের রোজা’।

যে ব্যক্তি রমজানের রোজা শেষ করে ৬ দিন রোজা রাখবে সেটা তার জন্য পুরো বছর রোজা রাখার সমতুল্য। (কেননা) মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনুল কারিমে (সূরা: আনআম, আয়াত: ১৬০) ঘোষণা করেন, مَنۡ جَآءَ بِالۡحَسَنَۃِ فَلَهٗ عَشۡرُ اَمۡثَالِهَا অর্থ: ‘যে কোনো সৎকাজ নিয়ে এসেছে, তার জন্য প্রতিদান হবে তার দশগুণ’। (মুসনাদে আহমদ, সুনানে দারেমি)

এভাবে রমজানের ৩০ রোজা এবং শাওয়ালের ৬ রোজা মোট ৩৬ রোজা ১০ দিয়ে গুণ দিলে ৩৬০ রোজার সমান হয়ে যায়, আর ৩৬০ দিনে এক বছর। সুতরাং ৩৬টি রোজায় সারাবছর রোজা রাখার সওয়াব পাওয়া যায়।

৬ রোজা রাখার নিয়ম

শাওয়ালের রোজা ধারাবাহিকভাবে রাখাই ফজিলতপূর্ণ। তবে লাগাতার না রেখে বিচ্ছিন্নভাবেও রাখা যায়। শাওয়াল মাস চলে গেলে তা কাজা করা জরুরি নয়। যেহেতু তা কারো কাছে সুন্নত আবার কারো কাছে মোস্তাহাব।

তাই ইচ্ছা কিংবা অনিচ্ছায় হোক শাওয়াল মাস পার হয়ে গেলে তা কাজা করা আবশ্যক নয়। সুতরাং সম্ভব হলে ঈদের পরপরই এ রোজা একাধারে পালন করা সর্বোত্তম। অথবা বিচ্ছিন্নভাবেও এ রোজা পালন করা যায়।

শাওয়ালের ৬ রোজা কাজা রোজার আগে নাকি পরে

যাদের ভাংতি রোজা আছে, অসুস্থতা কিংবা নারীদের হায়েজ-নেফাসের কারণে রমজানের রোজা অপূর্ণ থাকে, তাদের জন্য নিয়ম ও করণীয় হলো—‘শাওয়াল মাসে তাদের ভাংতি রোজাগুলো আগে পূর্ণ করে নেবে। তারপর তারা শাওয়ালের ৬ রোজা পালন করবে। কেননা ‘..যার ওপর কাজা রয়ে গেছে সে রোজা পুর্ণ করেছে বলে গণ্য হবে না যতক্ষণ ওই রোজাগুলোর কাজা আদায় না করে।’ (আল মুগনি: ৪৪০) সুতরাং আগে রমজানের রোজা পূর্ণ করবে, তারপর শাওয়ালের ৬ রোজা রাখবে—তবেই সারাবছর রোজা রাখার সওয়াব মিলবে।

আবার অনেকের রমজানের কাজা পূরণ করতে সারামাস লেগে যেতে পারে (যেমন নেফাসগ্রস্ত নারী যদি পুরো রমজানে একটি রোজাও না রাখতে পারেন), তাদেরকে পুরো শাওয়াল মাসে কাজা রোজা রাখতে হবে। তারা জিলকদ মাসে শাওয়ালের ৬ রোজা রাখতে পারবে এবং শাওয়ালের বিশেষ ফজিলতও পাবে। কেননা সে শরিয়তসম্মত ওজরের কারণে বাধ্য হয়ে এই বিলম্ব করেছে। (ফতোয়া সমগ্র ১৯/২০, ফতোয়া নং-৪০৮২ ও ৭৮৬৩)

তবে, আরেকদল আলেমের মতে, কাজা রোজার সংখ্যা বেশি হয়ে গেলে আগে শাওয়ালের ৬ রোজা রাখা উত্তম। কেননা শাওয়াল শেষ হয়ে গেলে অন্যমাসে এই ৬ রোজার ফজিলত নেই। কিন্তু কাজা রোজা বছরের যেকোনো সময় রাখলেই আদায় হয়ে যায়।