
ইদানীংকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রায়ই ঘুরে বেড়ায় এক কিশোরীর আলাপচারিতার নানা ভিডিও। কখনো লাইভ স্ট্রিমিংয়ে এ প্রত্যন্ত অঞ্চলের খেটে-খাওয়া কৃষককে যুক্ত করে সবার সামনে তুলে ধরেন তার জীবন সংগ্রামের গল্প, কখনো ডাক্তার, নার্স ও পুলিশসহ সমাজের বিভিন্ন পেশার মানুষদের সঙ্গে আলাপচারিতায় তুলে ধরেন তাদের কথাগুলো। আবার কখনো অসহায়, গরিব মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে, দুঃস্থ মা-বোন ও শিশুদের সাহায্যে হাত বাড়িয়ে দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সবার প্রশংসা কুড়ান ওই কিশোরী।
বলছিলাম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নিউইয়র্ক প্রবাসী কিশোরী প্রিসিলা নাজনীন ফাতেমার কথা। সোশ্যাল মিডিয়ায় সবাই তাকে ‘প্রিসিলা’ নামেই চেনে।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিএনপি নেতাদের উপস্থিতি নিয়ে আবারও প্রশ্ন তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট প্রিসিলা রহমান। তিনি
রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যক্তিস্বার্থ নিয়ে পুনরায় নিজের ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট শেয়ার করেন যা অনলাইন পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো:
গত দুই মাস, এমনকি তারও বেশি সময় ধরে আমি আমার পেজে বিএনপি-সংক্রান্ত প্রায় শতাধিক পোস্ট দিয়েছি। এর মধ্যে আমার নিজস্ব লেখা ছিল মাত্র চার-পাঁচটি—যেখানে আমি জনাব তারেক রহমানকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ অনুরোধ জানিয়েছি, বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে একটি লেখা দিয়েছি এবং জোবায়দা রহমান সম্পর্কেও একটি পোস্ট করেছি, যে পোস্টে উনার পরিবার ও শিক্ষার বিষয়গুলো উল্লেখ ছিল ।
এই লেখাগুলো কয়েক মিলিয়ন মানুষের কাছে পৌঁছেছে। ৮০ শতাংশের বেশি রিয়েকশন ছিল লাইক ও লাভ রিয়েক্ট। মন্তব্যগুলো পড়লে বোঝা যায়, মানুষ বিএনপিকে কতটা ভালোবাসে এবং তাদের কাছে কতটা প্রত্যাশা করে।
কিন্তু যখন আমি জনাব ফজলুর রহমানের কোনো বক্তব্য বা পোস্ট শেয়ার করি, তখন রিয়েকশন ও কমেন্টের ধরণ বদলে যায়। ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবের কোনো ইতিবাচক বক্তব্যে লাইক-লাভ বেশি, আর নেতিবাচক কিছু শেয়ার করলেই দেখা যায় “হা হা” রিয়েক্টের বন্যা। অনেকে বলে এসব নাকি জামায়াত-শিবিরের কাজ—কিন্তু সেটা ঠিক নয়। যদি তাই হতো, তাহলে সব বিএনপি-বিষয়ক পোস্টেই তো একই রকম প্রতিক্রিয়া আসত।
এই বিষয়গুলো বিএনপির বোঝা খুবই জরুরি। মানুষ বিএনপির কাছে হাস্যরস বা নাটক চায় না। তারা চায় দায়িত্বশীল নেতৃত্ব, সুপরিকল্পিত ভবিষ্যৎ এবং গণমানুষের স্বার্থে কাজ করার প্রতিশ্রুতি। তাই কিছু আত্মসমালোচনা ও সংশোধন বিএনপিকে নিয়ে যেতে পারে অনন্য উচ্চতায়।
সতর্ক থাকতে হবে সেইসব ধান্দাবাজদের থেকে, যারা সময়ের পরিবর্তনে নিজেদের বদলে শুধু বাহবা দেয়—কিন্তু ভুলগুলো আড়াল করে রাখে। আমি যদি মিথ্যে প্রশংসা করে যাই, তাহলে ভুলগুলো কখনোই চোখে পড়বে না, সংশোধনের সুযোগও আসবে না।
আমি বরাবর সত্য কথাই বলি, সেটাই লিখি , যা বিভিন্ন সংবাদপত্র থেকে সংগ্রহ করা । তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের ভাষায় এবং বক্তব্যে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে, যা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। আমি নিশ্চিত, এই পরিবর্তনের পেছনে লন্ডনের নির্দেশনা রয়েছে।
বিএনপির প্রতি আমার একটি অনুরোধ ও পরামর্শ—আজ যদি নির্বাচন হয়, আপনারা হয়তো সর্বোচ্চ আসন পাবেন। তবে জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে হবে, জনসংযোগ জোরদার করতে হবে। জামায়াত বা এনসিপি নিয়ে নেতিবাচক রাজনীতিতে না গিয়ে নিজেদের অবস্থান শক্ত করুন।
জামায়াতের দিকে তাকান—ওদের মধ্যে কোনো বিভাজন নেই, কোন নেতা বা কর্মী বিদ্রোহ করছে না। শিবিরের ছেলেরা পড়াশোনায়, মেডিকেলে, বুয়েটে ভর্তি হওয়ার জন্য সংগঠিতভাবে কাজ করে, ভবিষ্যতের লক্ষ্য স্থির করে এগিয়ে চলে। এটা তাদের ভবিষ্যতের বড় পরিকল্পনার অংশ । অন্যদিকে, অনেক দলেরই সময় কাটে কোন্দল, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিতে—যার পরিণতি ভয়াবহ হতে বাধ্য।
জামাত ও শিবির থেকে শিখার প্রয়োজন নেই , ওদের মত হওয়ার প্রয়োজন নেই , বরং ওদের চেয়ে ভাল হতে তো সমস্যা নেই !
তবে এটাও বলি—আমি কোথাও বিএনপি নেতাদের অসম্মান করে কিছু লিখিনি। আমি শুধু সত্যটা তুলে ধরেছি, যা দেখলে-বুঝলে-পরিবর্তন করলে দলও বদলাবে, দেশও সুন্দর হবে।
আমি চাই বিএনপি দেশের জন্য ভালো কিছু করুক। যেন এমন কিছু না হয়, যার ফলে ভবিষ্যতে কর্মের পরিণতিতে নেতৃবৃন্দকে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। জনাব তারেক রহমানের সাম্প্রতিক অনেক সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী ও যুক্তিসংগত—অনেকে তাঁর মতামতের সঙ্গে একমতও হচ্ছেন।
দেশের জন্য যেই ভালো করবে, তাকে সাপোর্ট করা আমাদের সবার কর্তব্য। আমরা ভালোকে ভালো বলব, মন্দকে মন্দ—এই নীতিতেই বিশ্বাসী।