
রাজনীতি নিষিদ্ধ রংপুর মেডিকেল কলেজে ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার পরেও দলীয় প্রভাব খাটিয়ে তিন সিটের একটি রুম দখলে রাখার অভিযোগ উঠেছে কলেজ শাখা ছাত্রদলের সভাপতি ডা. আল মামুনের বিরুদ্ধে। এদিকে আবাসন সুবিধার অভাবে শিক্ষার্থীদের জন্য প্রশাসন থেকে গণরুম চালু করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, ছাত্রদল সভাপতির ব্যাচের সবাই ক্যাম্পাস ছেড়ে গেলেও দলীয় প্রভাব বিস্তার করে আরও চারমাসের জন্য রুম এক্সটেনশন নিয়ে প্রায় ১ বছর ধরে তিনি একাই পুরো রুমটি দখলে নিয়েছেন। বর্তমানে তিনি পিন্নু হোস্টেলের ৪৭ নম্বর কক্ষে একা দখল করে রেখেছেন।
জানা গেছে, তিনি মেডিকেল কলেজের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তার ইন্টার্নশিপ শেষ হয়েছে গত বছরের আগস্টে। পরে দলীয় প্রভাবে পরবর্তীতে চার মাসের জন্য এক্সটেনশন নিয়ে প্রায় ১ বছর ধলে ওই কক্ষটিতে অবস্থান করছেন।
কলেজ সূত্র জানায়, গত ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ৩২ জন ইন্টার্ন চিকিৎসককে পিন্নু হোস্টেল থেকে সরিয়ে ইন্টার্ন হোস্টেল (ডা. মিলন হোস্টেল) এ সিট বরাদ্দ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই তালিকায় ডা. আল মামুন ও ডা. নাদিম মাহমুদ নিঝুমের জন্য ডা. মিলন হোস্টেলের ৩০ নম্বর কক্ষে সিট বরাদ্দ করা হয়।
তবে নির্দেশনা উপেক্ষা করে ডা. আল মামুন এখনো পিন্নু হোস্টেলের একটি তিন সিটের কক্ষে একাই অবস্থান করছেন। অভিযোগ রয়েছে, প্রায় এক বছর ধরে তিনি একাই পুরো রুম ব্যবহার করছেন।
এ প্রসঙ্গে কথা হলে ডা. আল মামুন বলেন, ‘আমি রুম জবরদখল করি নাই। আমার বৈধ এলোটমেন্ট আছে।’
তিনি আরও দাবি করেন, ‘ইন্টার্ন হোস্টেলে যাওয়ার নির্দেশনা পাওয়ার পর কলেজ প্রশাসনকে জানাই যে, পড়াশোনার সুবিধার্থে পিন্নু হোস্টেলেই থাকতে চাই। এরপর তারা আমাকে পুরো রুমটি বরাদ্দ দেয় প্রশাসন।’
বিষয়টি নিয়ে কলেজের হল সুপার ডা. জহরুল হক বলেন, ‘ইন্টার্ন চিকিৎসকদের পিন্নু হোস্টেলে থাকার সুযোগ নেই। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে কলেজের অধ্যক্ষ ডা. শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘সব বিষয় তো আমার নজরে থাকে না। এটা হল সুপারের দায়িত্ব।’
প্রতিবেদকের প্রশ্নের মুখে তিনি বলেন, “আমি এখন ঢাকায় আছি, এ বিষয়ে হল সুপারের সঙ্গে কথা বলেন।” এরপর তিনি ফোন কেটে দেন।
এদিকে কলেজের ৫৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের অরিয়েন্টেশন ও ক্লাস শুরু হওয়ায় নতুন শিক্ষার্থীদের জন্য সিট সংকট দেখা দেয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে জিয়া হোস্টেলের মোটরসাইকেল গ্যারেজকে গণরুমে পরিণত করে অতিরিক্ত শিক্ষার্থীদের জন্য সিট বরাদ্দ করা হয়। ফলে একেকটি ওয়াশরুম ব্যবহার করতে হচ্ছে ২৫-৩০ জনকে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, এভাবে বসবাস করা দেশের প্রথম সারির মেডিকেল কলেজ হিসেবে অত্যন্ত অমানবিক।
এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘ছাত্রত্ব শেষ হলেও কিছু ছাত্র প্রশাসনের ছত্রছায়ায় রুম দখল করে রেখেছে। অথচ আমাদের জন্য বরাদ্দ রুমগুলো মানুষ থাকার উপযুক্ত নয়।’