প্রচ্ছদ জাতীয় সিদ্ধান্ত বদলেছেন মুরাদনগরের সেই নারী, চালাবেন মামলা

সিদ্ধান্ত বদলেছেন মুরাদনগরের সেই নারী, চালাবেন মামলা

কুমিল্লার মুরাদনগরে ধর্ষণ ও নিপীড়নের শিকার সেই ভুক্তভোগী নারী শান্তির স্বার্থে মামলা তুলে নেওয়ার কথা জানালেও এবার নিজ সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কথা জানিয়েছেন তিনি।

সোমবার (৩০ জুন) কালবেলাকে তিনি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ওই নারী কালবেলাকে জানান, তিনি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, তাই মামলা চালাবেন। তার স্বামী প্রবাস থেকে বলায় রোববার (২৯ জুন) মামলা তুলে নেওয়ার কথা বলেছিলেন। এখন পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, মামলা লড়বেন। ধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফি দুটি মামলারই তিনি বাদী। ধর্ষণ মামলায় একমাত্র এজাহার নামীয় আসামি একজনই গ্রেপ্তার ফজর আলী। আর পর্নোগ্রাফি মামলার এজাহারনামীয় আসামিও গ্রেপ্তার হওয়া ওই চারজনই। তবে এ মামলার অজ্ঞাতনামা আরও আসামি করা হয়েছে।

এদিকে কুমিল্লা মুরাদনগরে নারীকে ঘিরে সংগঠিত অপরাধের ধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফি দুটি পৃথক মামলার তদন্তই চালাচ্ছে পুলিশ। কুমিল্লা পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খান কালবেলাকে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, তদন্ত পুরোদমে চলছে, অগ্রগতিও আছে। তদন্তের স্বার্থে এর বেশি কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।

সিদ্ধান্ত বদলেছেন মুরাদনগরের সেই নারী, চালাবেন মামলা
চুরির অপবাদে কারখানায় শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যা
এদিকে পর্নোগ্রাফি আইনের মামলায় ৭ দিনের রিমান্ড চেয়েছে পুলিশ। মুরাদনগর থানার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) এসআই রুহুল আমীন সোমবার কালবেলাকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ওই রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। আদালত শুনানি শেষে তা মঞ্জুর করলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হবে। এতে আর কেউ জড়িত কিনা তাও বেরিয়ে আসবে। মামলা তদন্তে রিমান্ড প্রয়োজন। কারা, কেন, কি উদ্দেশ্য ঘটনা, ভিডিও ধারণ ও তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে জিজ্ঞাসাবাদে সব জানা যাবে। এতে মামলার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি আসবে।’

রোববার গ্রেপ্তার হওয়া চার আসামিকে পর্নোগ্রাফি আইনের মামলায় আদালতে হাজির করা হয়েছিল। তাদের জামিন নাকচ করে আদালত কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এদিকে ধর্ষণের মূল অভিযুক্ত ব্যক্তি ফজর আলীকে সোমবারও আদালতে হাজির করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় রোববারও তাকে আদালতে হাজির করা যায়নি। তাই জিজ্ঞাসাবাদও শুরু করা হয়নি।

মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুর রহমান কালবেলাকে জানান, ফজর আলী আহতাবস্থায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছে। তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, আদালতকে রোববারই লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। পরে আদালতের নির্দেশে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রিজনার্স সেলে (হাসপাতালে) অন্তরীণ রাখা হয়েছে, তার চিকিৎসা চলছে। আহত অবস্থায়ই তাকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে কুমিল্লায় আনা হয়।

অভিযুক্ত ফজর আলীকে ঘটনার রাতেই জনগণ মারধর করেছিল। ওইসময় তার হাত-পা ভেঙে গিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুরাদনগর সার্কেল মো. কামরুজ্জামান কালবেলাকে বলেন, ধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফি দুটি পৃথক মামলা, গ্রেপ্তার হওয়ারাও পৃথক। ধর্ষণ মামলায় একজন ফজর আলী গ্রেপ্তার রয়েছে। সুস্থ হলেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সে মূল আসামি।

তিনি বলেন, ভুক্তভোগী নারী ওই দুই মামলা করেছেন, পুলিশ সহায়তা করেছে।

আর পর্নোগ্রাফি মামলায় রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের বাহেরচরের ঘটনাস্থল পাঁচকিত্তা গ্রামের অপর ৪ গ্রেপ্তাররা হলেন একই এলাকার জাফর আলীর ছেলে রমজান, আব্দুল হান্নানের ছেলে মোহাম্মদ আলী সুমন, মো. আলমের ছেলে মো. আরিফ ও তালেম হোসেনের ছেলে মো. অনিক। সুমন ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি। তার নেতৃত্বেই আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করা হয়। সুমন কুমিল্লা-৩ (মুরাদনগর) আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুনের অনুসারী বলে জানা যায়।

রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া খোকন কালবেলাকে জানান, ঘটনাটি পরকীয়ার। যারা টের পেয়ে হাতে-নাতে ধরে ফেলে, তারা ফজর আলীকে বেশি মারধর করে ফেলে। এতে সে আহত হয়। ঘটনা থেকে বাঁচতে তারাই ধর্ষণের মামলা করতে উৎসাহিত করে। এলাকাবাসী থেকে তিনি তাই জেনেছেন।

তিনি বলেন, মামলা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করে সত্য বের করবে। তবে ঘটনাটি ন্যক্কারজনক। তিনিও বিচার চান। ওই ভুক্তভোগীকে নির্যাতন ও বিবস্ত্র ভিডিও ছড়িয়ে যারা দিয়েছে তাদের শাস্তি দাবি করেন। তিনি অভিযুক্ত ফজর আলীর আপন ফুফাতো ভাই।

এদিকে মুরাদনগরের ঘটনাকে ধর্মীয় কিংবা রাজনৈতিক নয় বলেই মনে করেন কুমিল্লার নারী নেত্রী রোকেয়া বেগম শেফালী। তিনি বলেন, এটি ফৌজদারি অপরাধ। ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নিতে হবে। যারা ভিডিও করেছে ও তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে তাদেরও শাস্তির নজির স্থাপন করতে হবে। তিনি ভুক্তভোগীর পরিবারের নিরাপত্তার দাবি জানান।