
দাম্পত্য কলহে পরকীয়া ও সম্পত্তি হস্তগত করার অভিযোগে স্ত্রী রওশন আরার (৪৫) ওপর প্রতিশোধ নিতেই পরিকল্পিতভাবে ছুরিকাঘাতে খুন করে নিজেও আত্মহত্যা করেন ময়মনসিংহ নগরীর সেনবাড়ী এলাকার বাসিন্দা ওমানফেরত মো. রাকিবুল ইসলাম রাকিব (৫৪)। এ ঘটনায় নগরজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) সকালে নগরীর গুলকিবাড়ী এলাকার একটি ভাড়া বাসায় এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। ঘাতক রাকিব নগরীর সেনবাড়ী এলাকার মৃত আলতাফ উদ্দিনের ছেলে। তিনি ৮৭ ব্যাচে ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের শিক্ষার্থী ছিলেন। এক সময় তিনি জেলা ও জাতীয় পর্যায়ের হকি খেলোয়াড় হিসেবে নগরীতে পরিচিত ছিলেন। পরিবারে দুই ভাইয়ের মধ্যে রাকিব ছোট এবং বড় ভাই রেজাউল করিম বর্তমানে ঢাকায় বসবাস করেন।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, রাকিব এর আগে একটি বিয়ে করেছিলেন। বিয়ের কিছুদিন পর ওই স্ত্রীর সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এরপর রওশন আরার সঙ্গে তিনি দ্বিতীয় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বর্তমানে তাদের দাম্পত্য জীবনে দুটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। এর মধ্যে বড় মেয়ে বর্তমানে ঢাকায় ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছে। আর ছোট মেয়ে ক্যান্টমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকের প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত। ছোট মেয়েকে নিয়ে মা রওশন আরা নগরীর গুলকীবাড়ী একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর রাকিব আর্থিক সংকটে পড়ে নগরীর সেনবাড়ী এলাকার পৈত্রিক বাসাটি বিক্রি করে দেন। এরপর বর্তমান স্ত্রীর সঙ্গে দাম্পত্য জীবন চলাকালে প্রায় এক যুগ ধরে তিনি ওমানে প্রবাস জীবন কাটান। এর মধ্যে তিনি কয়েকবার দেশে এসেছেন বলেও জানিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা।
‘প্রবাসী প্রবাসী’ নামের একটি ফেসবুক আইডি ছিল রাকিবের। ওই আইডির পোস্ট ঘেঁটে দেখা যায়, সম্প্রতি স্ত্রীর বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগ তুলে লেখালেখি করেছেন তিনি। সেইসঙ্গে তার বন্ধু মহলের কাছে এসব ঘটনা জানিয়ে স্ত্রী ও সন্তানদের ফিরে পেতে আকুতি জানান বলে নিশ্চিত করেছেন নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাকিবের একাধিক বন্ধু।
তারা জানান, রাকিব তার স্ত্রীর নামে জমি কিনে রেজেস্ট্রি করে দিয়েছেন। তা ছাড়া তার প্রবাসী জীবনে উপার্জিত সব টাকা স্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছেন। কিন্তু এসব টাকার কোনো হদিস না পাওয়ার কারণে সম্প্রতি তার স্ত্রীর সঙ্গে ব্যাপক মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়। এরই মাঝে স্ত্রী রওশন আরা তাকে ডির্ভোস লেটার পাঠিয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে। মূলত এসব কারণে গত ২১ জুন রাকিব ওমান থেকে দেশে ফিরে এসে এলাকাতেই বসবাস করছিল। কিন্তু এসব বিষয়ে জানতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও রাকিবের ভাই, বোন বা পরিবারের সদস্যদের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
তবে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শিবিরুল ইসলাম বলেন, ঘটনার দিন ভোরে রাকিব জোব্বা-পাগড়ি পড়ে একটি লাকেজসহ স্ত্রীর বাসায় প্রবেশ করেন। এরপর বাসায় গিয়ে স্ত্রীকে ছুরিকাঘাতে খুন করে নিজেও আত্মহত্যা করে মারা যায়। ধারণা করা হচ্ছে, দাম্পত্য কলহে বা পরকীয়ার কারণে এই ঘটনা ঘটতে পারে। ঘটনার সময় তাদের ছোট মেয়ে বাসায় ছিল। কিন্তু বাবা-মায়ের ঘটনার পর মেয়েটি বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ায় তার সঙ্গে কথা বলা যাচ্ছে না। আমরা তদন্ত করছি। বিস্তারিত তদন্তে জানা যাবে। ইতোমধ্যে নিহতদের মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে জেলা পুলিশের এবং গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে বলে জানিয়েছেন জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) কাজী আকতার উল আলম।
তিনি বলেন, ঘটনার নেপথ্যে পরকীয়া এবং দাম্পত্য কলহকে সামনে রেখে তদন্ত চলছে। এর বাইরেও আরও কিছু আছে কী-না, তা স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। আশা করছি, খুব দ্রুত ঘটনাটি স্পষ্ট হবে।