
সিলেট নগরীর শামীমাবাদ আবাসিক এলাকার একটি পাঁচতলা ভবন প্রায় সাত বছর ধরে দখল করে রেখেছিলেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ছাত্র-যুব নেতারা। প্রথমে বাড়িটি দখলে নেন যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতারা, পরে এক ছাত্রদল নেতা সেটি দখলে নেন। মালিকপক্ষের আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে পুলিশের সহযোগিতায় অবশেষে বাড়িটি উদ্ধার হয়েছে।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) বিকেলে বাড়িটি দখলমুক্ত হওয়ায় মালিকপক্ষের সদস্যরা কৃতজ্ঞতা সভার আয়োজন করেন। এতে স্থানীয় বাসিন্দাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রবাসী মো. আলম বেগ ১৯৯৯ সালে নগরীর শামীমাবাদ এলাকার ১৪ শতক জমি কেনেন। পরে ২০০৪ সালে সেখানে একটি ভবন নির্মাণ করেন তিনি। পরবর্তীতে তিনি স্ত্রীসহ যুক্তরাজ্যে চলে যান। ২০১৮ সালে তার বাড়িটি দখলে নেন যুবলীগ নেতা শামীম খান ও ছাত্রলীগ নেতা তুষার আহমদ। তারা বাড়িটির নামফলক পরিবর্তন করে ‘মাতৃমহল’ এর জায়গায় ‘হোয়াইট হাউজ’ লেখেন এবং হোল্ডিং নম্বর পাল্টে ভাড়াটিয়া তোলেন। এভাবেই বছরের পর বছর ভাড়া তুলে আয় করেন আসছিলেন তারা।
বাড়িটির প্রকৃত মালিক আলম বেগ ও তার স্ত্রী এই দখলদারিত্বের যন্ত্রণা নিয়েই ২০২২ সালে যুক্তরাজ্যে মৃত্যুবরণ করেন। এরপর ২০২৪ সালের জুলাইয়ে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শামীম ও তুষার এলাকা ছাড়লে বাড়িটির দখল নেন সিলেট মহানগর ছাত্রদলের স্কুলবিষয়ক সম্পাদক এস এম ফাহিম।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে আলম বেগের বড় ছেলে সোহেল বেগ দেশে এসে মালিকানা দাবি করলে ফাহিম তাকে হত্যার হুমকি দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেন। এরপর তিনি বিভিন্নভাবে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ২ জুন কোতোয়ালি থানায় ফাহিমসহ ৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ৪-৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
মামলায় নাম উল্লেখ করা আসামিরা হলেন- সিলেট মহানগর ছাত্রদলের ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক এস এম ফাহিম (২৫), যুবলীগ নেতা মো. শামীম খান (৪১), ছাত্রলীগ নেতা তুষার আহমদ, আবুল কাশেম (৪৮), আব্দুল্লাহ আল মামুন (৪৪), সৈয়দ জুবায়ের আহমদ ও সৈয়দ জিলহাজ আহমদ। মামলার পর সিলেট মহানগর পুলিশ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে।
বাড়ির মালিক সোহেল বেগ বলেন, এই বাড়িটি আমার বাবা কষ্ট করে বানিয়েছিলেন। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে একে একে যুবলীগ, ছাত্রলীগ আর ছাত্রদল নেতারা আমাদের সম্পত্তি দখল করে রাখে। আমরা এখন আইনি পথেই বাড়ি ফিরে পেয়েছি। তবে পাশের আরও একখন্ড জমি এখনও দখলে আছে। সেখানে আওয়ামী লীগের এক সাবেক কেন্দ্রীয় নেতার ভাই বসবাস করছেন।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. রেজাউল করিম বলেন, আমরা সমস্ত কাগজপত্র যাচাই করে নিশ্চিত হয়েছি, বাড়িটির প্রকৃত মালিক সোহেল বেগ। এরপর প্রয়োজনীয় আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করে বাড়িটি দখলমুক্ত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দখলদাররা এতটাই বেপরোয়া ছিল যে বাড়ির নাম পরিবর্তন করে নিজেরাই দখলদারির পরিচয় প্রতিষ্ঠা করে। আমরা বার্তা দিতে চাই কোনো দখলদারই ছাড় পাবে না।
পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, যেসব জমি এখনো বেদখলে রয়েছে, সেগুলোও মালিকদের ফেরত দিতে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে তিনি দখলদারদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: সিলেট মহানগরীর শামিমাবাদ আবাসিক এলাকায় লন্ডন প্রবাসী সোহেল বেগের ৫ তলা বাড়ি দীর্ঘদিন অবৈধ দখলদারদের কবলে ছিল। সম্প্রতি এই বাড়িটি দখলমুক্ত করে মালিককে বুঝিয়ে দেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো: রেজাউল করিম পিপিএম-সেবা।
দখলদারদের কাছে থেকে মূল্যবান বাড়ি দীর্ঘদিন পর ফিরে পাওয়ায় বাড়ীর স্বত্ত্বাধিকারী সোহেল বেগ ও তাঁর পরিবার কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাতে এক সভার আয়োজন করেন।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) বিকালে নিজ বাড়িতে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো: রেজাউল করিম পিপিএম-সেবা।
সভায় বাড়ির মালিক সোহেল বেগ তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে এসএমপি কমিশনারের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, মহানগর জামায়াতের আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম, দৈনিক জালালাবাদ সম্পাদক ও সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মুকতাবিস উন-নূর প্রমুখ।
সোস্যাল মিডিয়ার অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, সিলেট মহানগর জামায়াতের আমীর মুহতারাম মো: ফখরুল ইসলাম’র উদ্যোগে সিলেট নগরীতে দীর্ঘদিন দখলে থাকা একটি বাড়ী উদ্ধার করা হয়েছে।
খবর শুনে আমার খটকা লাগলো কিছুটা। কার কাছ থেকে কার বাড়ী উদ্ধার হয়েছে? পরে আমি বিস্তারিত জানার চেষ্টা করলাম।
সিলেট নগরীর শামিমাবাদ এলাকা। এখানের বাসিন্দা হলেন প্রবাসী সোহেল বেগ। শামিমাবাদ ৫ নং রোডের ২০৫ নং বাড়ী তার। ৫ তালা বাড়ী, ১৪ ডেসিমাল জায়গা। তিনি ও তার অপর ৩ ভাই দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসে আছেন।
প্রবাসে থাকার সুবাদে বাড়ীটি দেখভালের জন্য তেমন কেউ ছিলেন না । তখন সাল ছিল ২০১৮। আপনারা জানেন ২০১৮ সালে সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিল আব্দুল আলীম তুষার। সেই তুষার সুহেল বেগ এর বাড়ীটি দখলে নেয় ২০১৮ সালে। আর দখলে নিয়ে ৫ তালা বাড়ী ভাড়া দিয়ে দেয়।
তখন থেকেই তুষাড় ও যুবলীগের সদস্যরা বাড়ীটি ভোগদখলে নেয় এবং ভাড়া তুলে খায়। সুহেল বেগ ও তার ভাইয়েরা শত চেষ্টা করেও বাড়ীটি উদ্ধার করতে পারেননি। এমনকি প্রশাসন পর্যন্ত তাদেরকে সাহায্য করেনি। চিন্তা করেন কি পরিমাণ খাটাশ/জালেম/সন্ত্রাসীদের কবলে ছিলাম আমরা!!
অবশেষে আগষ্ট পট-পরিবর্তন হলো। প্রবাসীরা বাড়ীতে আসলেন। এসে নিজেরা নিজের বাড়ী বুঝে নেয়ার চেষ্টা করলেন। তবুও সেটা পারলেন না, অন্য এক অদৃশ্য কারণে। কারণ বাড়ীটি ৫ আগষ্টের পরে অন্য এক দলের সদস্যরা দখল করে নেয়। তারা বাড়ীওয়ালার তালায় পালটা তালা ঝুলায়। এবং ৯ মাস ভাড়া তুলে খায়।
অবশেষে সুহেল বেগ কোনো উপায় না পেয়ে তার পরিচিত সিলেট জেলার উসমানীনগরের জনৈক জামায়াত নেতা সোহরাব ভাইয়ের নিকট যান। ঘটনা খুলে বলেন৷ সোহরাব ভাই সুহেল বেগ কে সিলেট মহানগর আমীর মো: ফখরুল ইসলাম এর কাছে নিয়ে আসেন।
তারপর তিনি সব ঘটনা খুলে বলেন, নিজের অসহায়ত্ব পেশ করেন। মহানগর আমীর বিস্তারিত শুনেন এবং সত্যিই উনার বাড়ী কিনা তা যাচাই করতে দলিলপত্র দেখেন। সত্যতা যাচাই হলো। তিনি মামলাও করেছিলেন সেগুলোও দেখেন।
পরবর্তীতে মহানগর জামায়াত আমীর একজন মজলুম ব্যক্তিকে সাহায্যের জন্য কোমরবেঁধে কাজ শুরু করেন। এক পর্যায়ে তিনি কমিশনারের সাথে যোগাযোগ করেন। যোগাযোগ করে তিনি বাড়ীটি উদ্ধারের জন্য কমিশনারের নিকট বলেন। এবং আসামীদের এরেস্ট করে দ্রুত বাড়ীটি তার মালিকের নিকট হস্তান্তরের দাবি জানান।
কমিশনার মামলার কাগজপত্র দেখে কিছু আসামী এরেস্ট করেন। এবং বাড়ীটি ভুক্তভোগীর হাতে পৌছে দেন। তবে এখনোও আওয়ামিলীগের পরিপূর্ণ দখলদারির ঘটনা শেষ হয়নি।
কতবড় শয়তান এরা চিন্তা করুন, এখনো পর্যন্ত ১৪ ডেসিমাল জায়গার ৫ তালা বাড়ী ছাড়া বাকি অংশ উদ্ধার করা যায়নি। কারণ ছাত্রলীগের সন্ত্রাসরা জায়গাটি বিক্রি করে দিয়েছিল অপরপক্ষকে। আর যাদের কাছে বিক্রি করেছিলো তারা ইতোমধ্যে সেখানে ঘরও তুলে ফেলেছে।
চিন্তা করেন! আরেকজনের বাড়ী দখল করে ভাড়া খাইলো। বিক্রি করে টাকা খাইলো। এখন সেখানে বাড়ীও তৈরি হয়ে গেছে।
আজ সুহেল বেগ কমিশনারকে প্রধান অতিথি করে একটি প্রোগ্রামের আয়োজন করেন। ১৪ ডেসিমাল জায়গার ৫ তালা বিশিষ্ট যে বাড়ী উদ্ধার হলো তার জন্য ধন্যবাদ জানায় মহানগর আমীরকে।
এই প্রোগ্রামে মহানগর জামায়াতের আমীর ছিলেন মূখ্য ব্যক্তি। তাঁর একক প্রচেষ্টায় এই বাড়িটি উদ্ধার হয়। প্রশাসন তার নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে বিএনপির মহানগর সভাপতিকেও উক্ত প্রোগ্রামে দাওয়াত দেন।
আল্লাহ জামায়াতে ইসলামীকে সততা ও ন্যায়পরায়ণতার শক্তি দিয়েছেন। দিয়েছেন রাজনৈতিক লৌহ শক্তি। এরকম রহমতকে আল্লাহ যেন এই জমীনে আরোও শক্তিশালী করে তুলেন। আমীন।
( সংগৃহীত পোস্ট)