প্রচ্ছদ দেশজুড়ে ১২ প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যাখ্যা তলব

১২ প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যাখ্যা তলব

দেশজুড়ে: বেশি সুদে কলমানি বাজার থেকে ঋণ নেওয়ায় ১২ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে সতর্কতামূলক ব্যাখ্যা তলব করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রাথমিক পর্যায়ে মৌখিকভাবে ব্যাংকগুলোকে এ সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, এর পরও এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বর্তমানে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয় তারল্য সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এ কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর ঋণ বাড়ছে। একই সঙ্গে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারেও এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংক চড়া সুদে স্বল্পমেয়াদে ঋণ নিচ্ছে। ফলে সেখানে গড় সুদহার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। গত সোমবার আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে সর্বোচ্চ সুদহার ছিল ৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রেপোর মাধ্যমে ঋণ নিলে ব্যাংকগুলোকে সর্বোচ্চ সুদ দিতে হয় ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ। সেই হিসেবে রেপোর চাইতে কলমানিতে বেশি সুদে ঋণ দেওয়ায় মঙ্গলবার সরকারি ও বেসরকারি খাতের ১২ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে এই ব্যাখ্যা তলব করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সতর্কতা জারির পরদিন বুধবার কলমানি মার্কেটে সর্বোচ্চ গড় সুদহার ছিল ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এই দরে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা ধার করেছে ব্যাংকগুলো। এর মধ্যে এক দিনের জন্য সর্বোচ্চ ২ হাজার ৯০৬ কোটি ধার করেছে ব্যাংকগুলো।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আমানতের ধীর প্রবৃদ্ধি, ঋণ আদায়ের ধীর গতি এবং রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির কারণে বাজার থেকে বড় অঙ্কের টাকা উঠে আসছে। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন সরাসরি সরকারকে ঋণ দিচ্ছে না। সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংক কাছ থেকে ঋণ নেওয়ায় ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে ব্যাংকগুলো কার্যক্রম পরিচালনায় হিমশিম খাচ্ছে। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পাশাপাশি কলমানি বাজার থেকে ধার করে দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা করছে ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কম সুদে ধার নেওয়ার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কলমানিতে কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত সুদে ঋণ নিয়েছে। এর কারণ জানতে চেয়ে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। সেইসঙ্গে ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ব্যত্যয় না ঘটে, সে বিষয়েও তাদের সতর্ক করা হয়েছে। কয়েকটি ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত সোমবার ব্যাংকগুলোকে আমানতের বিপরীতে ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও (সিআরআর) সংরক্ষণ করতেই বাধ্য হয়ে উচ্চ সুদে ধার নিতে হয়েছে। তাদের মতে, পলিসি রেট বৃদ্ধির কারণেই কলমানি মার্কেট চড়ছে। এই মার্কেট ছিল ব্যাংকগুলোর জন্য সহজে প্রয়োজন মেটানোর, অর্থাৎ তারল্য ব্যবস্থাপনার একটা মাধ্যম। এখানে রেট বেড়ে যাওয়ার অর্থ- ব্যাংকগুলো আরও বেশি সুদে আমানত সংগ্রহের দিকে ঝুঁকবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, সংকোচনমুখী মুদ্রা নীতির প্রভাবেই বাজারে তারল্য সংকট তৈরি হয়েছে। সরকারি বিল ও বন্ডে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ বাড়ছে। আবার ডলার বিক্রির বিপরীতে টাকা আসছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক মানি সাপ্লাই কমাতে পলিসি রেট বাড়িয়েছে। ফলে তারল্য ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ধার দেওয়ার পরও ব্যাংকগুলো সংকট মেটাতে কলমানি মার্কেট থেকেও ধার করছে। এদিকে গত বুধবার কলমানিতে ৯ দশমিক ১৪ শতাংশ গড় সুদহারে লেনদেন হয় ৪ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। গত সপ্তাহের বুধবার এর পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা, যার গড় সুদহার ৯ দশমিক ১৩ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, গত জুনে গড় কলমানি রেট ছিল ৬ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ, জুলাইয়ে তা কিছুটা বেড়ে ৬ দশমিক ৪২ শতাংশে দাঁড়ায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার বাড়ানোর পর থেকে কলমানি রেট বাড়ছে। গত অক্টোবরে এই রেট ছিল ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ। ডিসেম্বরের শুরুতে কলমানি রেট ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ হয়। আর সবশেষ জানুয়ারিতে ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশে ঠেকেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলো যে টাকা ধার করবে, তার সুদহার বাড়বে। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক আরও সংকোচনমূলক মুদ্রা সরবরাহের পথে হাঁটছে। এ ছাড়া রিভার্স রেপো (বর্তমান নাম স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি বা এসডিএফ) নিম্নসীমার সুদহার ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৬ শতাংশ করা হয়েছে। বাজারে উদ্বৃত্ত টাকা থাকলে বাংলাদেশ ব্যাংক রিভার্স রেপোর মাধ্যমে টাকা তুলে নেয়। একই সঙ্গে নীতি সুদহার করিডরের ঊর্ধ্বসীমা স্পেশাল রেপো বা এসএলএফের (স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি) সুদহার বাড়িয়ে ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ করা হয়েছে। এ ব্যবস্থায় সংকটে পড়া ব্যাংক উচ্চ সুদে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা ধার করে।

প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে।