নীলফামারীতে স্ত্রী ও দুই মেয়েকে হত্যার পর আশিকুর রহমান বাবু নামে ব্যবসায়ীর গলাকেটে আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিহতদের স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়েছে উঠেছে এলাকার পরিবেশ। শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) সকালে সদর উপজেলার চড়াইখোলা ইউনিয়নের দারোয়ানী পুরাতন বন্দর বাজার গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- আশিকুর রহমান বাবুর স্ত্রী তহুরা বেগম (৩৫), তাদের বড় মেয়ে আয়েশা আক্তার তানিয়া (১১) ও ছোট মেয়ে জারিন আক্তার (৬)। অভিযুক্ত আশিকুর রহমান বাবু মোল্লা (৪০) চড়াইখোলা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ মোল্লার ছেলে। স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে দারোয়ানী পুরাতন বন্দর বাজার গ্রামের নিজ বাড়িতে বসবাস করতেন। বাড়ির সাথেই ‘স’ মিলসহ তামাক, পাট ও রসুনের ব্যবসা করতেন আশিকুর।
স্থানীয়রা জানান, সকালে বাড়ির প্রধান ফটকের সামনে আশিকুরকে পড়ে থাকতে দেখে এগিয়ে যান প্রতিবেশী গৃহবধূ বিউটি বেগম। এ সময় তাকে গলাকাটা অবস্থায় দেখতে পেয়ে বিউটি বেগমের চিৎকারে অন্যান্য প্রতিবেশীসহ বাজারের লোকজন ছুটে এসে বাড়ির ভেতরে গিয়ে আশিকুরের স্ত্রী ও দুই মেয়েকে বিছানায় মৃত অবস্থায় দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেন। পরে তারা আশিকুরকে উদ্ধার করে নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করান। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পরে পুলিশ এসে নিহত তহুরা এবং তার দুই মেয়ে তানিয়া ও জারিনের মরদেহ উদ্ধার করে।
প্রত্যক্ষদর্শী বিউটি বেগম (৩২) বলেন, আশিকুর ভাইদের বাড়ি পার হয়ে সকালে কাপড় শুকাতে দিতে গেছিলাম। ফেরার পথে দেখি আশিকুর ভাই বাড়ির দরজার সমানে পড়ে রয়েছে। আমি দৌড়ে গিয়ে বাড়ির ভেতরে গিয়ে ভাবি ও তার বাচ্চাদের ডাকাডাকি করি। কিন্তু তাদের কোনো সাড়াশব্দ না পাওয়ায় বারান্দার দিকে এগিয়ে গিয়ে রক্ত দেখতে পাই। এরপর দেখি আশিকুর ভাইয়ের গলা দিয়ে রক্ত ঝড়ছে। এ সময় আমি চিৎকার দিলে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে আশিকুর ভাইকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান এবং বাড়ির থাকার ঘরের বিছানায় তহুরা ভাবি ও তার দুই মেয়েকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান।
আশিকুরের ছোট বোন সাথী আক্তার (২৭) জানান, আশিকুর ভাই দীর্ঘ ছয় মাস ধরে কিডনিজনতি রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ ছিলেন। শ্বশুড়বাড়ি থেকে আমি প্রতি সপ্তাহে এসে ভাইয়ের খোঁজখবর নিয়ে যেতাম। গতকাল ভাবির সাথে আমার কথা হয়েছিল, ভাবি আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল কখন আসবে। আমি ভাবিকে বলেছিলাম শুক্রবার সকালে যাব। এই বলে কথা শেষ করেছি ভাসির সাথে। আজ সকালে মোবাইল ফোনে খবর পাই ভাবি ও আমার দুই ভাতিজি আর বেঁচে নেই, ভাইকে গলাকাটা অবস্থায় রংপুরে নেওয়া হয়েছে। এরপর এখানে এসে লোকজনের কাছে শুনি যে, ভাবি ও তার দুই মেয়েকে হত্যা করে গলাকেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে ভাই। কী কারণে এবং কেন এমন ঘটনা ঘটালো তার কোনো কূল-কিনারা খুঁজে পাচ্ছি না।
আশিকুরের চাচাতো ভাই জাকির হোসেন মোল্লা বলেন, সকালে আমাকে একজন ফোন দিয়ে জানায় আশিকুর ভাই অসুস্থ। খবর পেয়ে সাথে সাথে আমি চলে আসি। এসে দেখি ভাইকে ভ্যানে উঠানো হচ্ছে। এ সময় তার গলা দিয়ে রক্ত ঝড়ছে। আমাদের আরেক চাচাতো ভাইকে সাথে দিয়ে তাকে দ্রুত নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরপর সেখান থেকে রংপুরে পাঠানো হয়। এরপর ভাবি ও তাদের দুই মেয়েকে খুঁজে না পেয়ে ঘরে গিয়ে দেখি বিছানায় মৃত অবস্থায় তারা পড়ে রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আশিকুর ভাই ‘স’ মিলের ব্যবসার পাশাপাশি রসুন, পাট, তামাকের স্টোক ব্যবসা করতেন। এবার তিনি রসুন,পাট ও তামাকে ক্রয় করে ব্যবসায় লস করেছেন প্রচুর টাকা। ব্যবসায় আর্থিক লসের পাশাপাশি ব্যাংকে ঋণ ছিল তার। পাশাপাশি তিনি দীর্ঘ দিন থেকে কিডনি রোগে আক্রান্ত ছিলেন। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তের পাশাপাশি অসুস্থতার কারণে তিনি মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলেন। আমরা পরিবারের সদস্যরা তাকে নিশ্চিত করেছিলাম যে, ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই আমরা অর্থের সংস্থান করে তার সব সমস্যা সমাধান করব। এরই মধ্যে এমন অঘটন ঘটিয়ে বসল আমাদের ভাই। পুরো সংসারটা শেষ হয়ে গেল।
তহুরা বেগমের বাবা আব্দুল আলীম বলেন, গতকাল এশার নামাজের পর মেয়ের সঙ্গে আমার ফোনে কথা হয়েছিল। জামাই আগের থেকে একটু সুস্থ আছে, নাতনিরাও ভালো আছে বলে জানিয়েছিল আমার মেয়ে তহুরা। এরপর আজ সকালে ফোনে খবর পাই আমার মেয়ে তহুরাকে এবং তার দুই মেয়েকে মেরে ফেলে নিজের গলাকেটে মরার চেষ্টা করেছে জামাই।
নীলফামারী সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভিরুল ইসলাম বলেন, স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল থেকে গৃহবধূ তহুরা বেগম এবং তার দুই শিশু কন্যার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ মর্গে পাঠিয়েছি। শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে কিনা সেটি ময়নাতদেন্তর প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার নিশ্চিত হওয়া যাবে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন আসলে আমরা জানাতে পারব। অপর দিকে আত্মহত্যার চেষ্টাকারী আশিকুর বর্তমানে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছে। হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনে পুলিশের পাশাপাশি পিবিআই ও সিআইডি আলামত সংগ্রহ করেছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |