প্রচ্ছদ সারাদেশ রেস্টুরেন্টে আগুন, শেষ ভিডিও কলে মায়ের সঙ্গে যে কথা হয়েছিল শান্তর

রেস্টুরেন্টে আগুন, শেষ ভিডিও কলে মায়ের সঙ্গে যে কথা হয়েছিল শান্তর

সারাদেশ: পরিবারের হাল ধরতে বেইলি রোডের ওয়াফিয়া জুস বার অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে সহকারী সেফের কাজ নিয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জের শান্ত হোসেন। ছোট দুই ভাই-বোনের পড়াশোনার খরচ জোগাতে নিজের স্বপ্ন বিকিয়ে দিয়ে যোগ দিয়েছিলেন এই কাজে। তবে সেই স্বপ্ন আর পূরণ হয়নি, ফিরেছেন লাশ হয়ে। কর্মক্ষম সন্তান হারিয়ে শান্তর মা এখন পাগলপ্রায়। পরিবারটিতে বইছে শোকের মাতম।

বৃহস্পতিবার রাতে বেইলি রোডের বহুতল ভবনের আগুনে পুড়ে ও প্রচণ্ড ধোয়ার কারণে নিহতদের মধ্যে শান্তর বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। শুক্রবার জুম্মার পর তার জানাজা শেষে তাকে ভুইগর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের ভুইগর পশ্চিম পাড়ার সৌদি প্রবাসী আমজাদ হোসেনের বড় ছেলে শান্ত। পরিবারের ঋণ থাকায় বাবার আয়ে সংসার চলত টানাপোড়নের মধ্য দিয়ে। তাই শান্ত নিজের পড়ালেখা বিসর্জন দিয়ে পরিবারের হাল ধরতে ও কলেজ পড়ুয়া ছোট ভাই আর স্কুল পড়ুয়া ছোট বোনকে উচ্চশিক্ষিত করার স্বপ্ন দেখেছিলেন। বেইলি রোডের সেই আগুনে শুধু পোড়েনি শান্ত, পুড়েছে পুরো পরিবারের স্বপ্ন। পরিবার-প্রতিবেশীদের নীরব দৃষ্টি বলে দিচ্ছিল-কেউ এই মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না। সন্তান হারানো মায়ের গগণবিদারী আহাজারি আর শোকের মাতমে স্তব্ধ হয়ে গেছে পুরো এলাকা।

সন্তান হারিয়ে আহাজারিতে ভেঙে পড়া শান্তর মা লিপি আক্তার বলেন, আমার ছেলের সঙ্গে ঘটনার দিন সন্ধ্যায় কথা হয়েছে। সব সময় অডিও কল দিলেও বৃহস্পতিবার ভিডিও কল দিয়েছিল। ছোট ভাই-বোনের পড়াশুনার খবর নিল। আমার সাথে কথা বলল। ভাবিনাই আমার মানিকরে এইবারের মতোই শেষবার দেখব। নিহত শান্তর বন্ধু নাজমুল হাসান বলেন, আমার বন্ধু খুবই পরিশ্রমী মানুষ ছিল। সে তার স্বপ্নকে মাটি দিয়ে ছোট দুই ভাই-বোনের জন্য চাকরি করত। শুধু তাই নয়, এক কথায় বলতে গেলে এই বয়সে পুরো পরিবারের দায়িত্ব নিয়েছিল। তার এই চলে যাওয়া আমরা মেনে নিতে পারছি না।

তিনি আরও যোগ করেন, বাংলাদেশে এই কয়েক বছরের মধ্যে বেশ কয়েকটি বড় ধরনের আগুনের ঘটনা ঘটেছে। নিমতলী ট্রাজেডি, রূপগঞ্জের সেজান জুস কারখানায় আগুন, চট্টগ্রামের কনটেইনার কারখানার আগুন কিংবা বঙ্গবাজারের আগুনও আমাদের সতর্ক করতে পারেনি। আসলে লাশের সারি আর কত দীর্ঘ হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ঘুম ভাঙবে। প্রতিটি ঘটনার পর তদন্ত কমিটি করে কোনো একটি পক্ষকে দোষারোপ করা হয়। এতে কী স্বজন হারানোর যন্ত্রণা ঘুচে? ঘটনার আগেই যদি সচেতন হয়ে আমাদের ত্র“টিগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হয় তবে এতটা ক্ষতি হতো না।

শান্তর ছোট ভাই কবি নজরুল কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী প্রান্ত হোসেন বলেন, পারিবারিক ঋণ থাকায় বাবার আয়ে সংসারের খরচ চললেও আমাদের দুই ভাই-বোনের পড়াশুনার খরচ জোগানো ছিল কষ্টসাধ্য। এমন পরিস্থিতিতে শান্ত ভাই নিজে পড়াশুনা না করে এই বয়সে জব শুরু করেন। আমাদের নিয়ে তার বড় স্বপ্ন ছিল। কাল সন্ধ্যায় কল দিয়ে জানিয়েছে আজ ছুটি নিয়েছে, বাড়ি আসবে। এই মাসের শেষের দিকে আমাদের নিয়ে কক্সবাজার ঘুরতে যাবে। কিন্তু বেইলি রোডের সেই আগুন আমার ভাইকে চিরদিনের মতো ছুটি দিয়ে দিল।