প্রচ্ছদ জাতীয় সাড়ে ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ডিবি পুলিশ, যা বললেন ভুক্তভোগী ফ্রিল্যান্সার

সাড়ে ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ডিবি পুলিশ, যা বললেন ভুক্তভোগী ফ্রিল্যান্সার

জাতীয়: চট্টগ্রামে ডিবি পুলিশের বিরুদ্ধে দুজনকে আটক করে তাদের মোবাইল থেকে সাড়ে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।

গত শুক্রবার (১ মার্চ) একজন এডিসির নেতৃত্বে তিন সদস্যের এই তদন্ত কমিটি করেছে ডিবি পুলিশ। একই সঙ্গে ক্রিপ্টোকারেন্সির অভিযোগে আরও একটি মামলা করা হবে বলেও জানা গেছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গোয়েন্দা পুলিশের ডিসি (উত্তর-দক্ষিণ) মোছা. সাদিরা খাতুন। জানা যায়, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ বোস্তামীর গুলবাগ আবাসিক এলাকার বারাকা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি কুলিং কর্নারে চা পান করার

সময় আবু বকর সিদ্দিক নামের এক ফ্রিল্যান্সারকে আটক করে ডিবির পরিদর্শক মো. রুহুল আমিনের নেতৃত্বে একটি দল। এ সময় ফয়জুল আমিন বেলাল নামে আরেকজনকেও গাড়িতে তুলে নেওয়া হয়। অভিযোগ ওঠে, আটকের পর ডিবি পুলিশ তাদের মোবাইল ফোন ও টাকা-পয়সা কেড়ে নেয়।

এরপর আবু বকর সিদ্দিক ও ফয়জুল আমিন বেলালকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে ও কাপড় দিয়ে চোখ বেঁধে মনসুরাবাদ গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ডিবির পরিদর্শক রুহুল আমিন ও এসআই আলমগীরের নেতৃত্বে ফয়জুল আমিন বেলালকে নির্যাতন করা হয়। এ সময় আবু বকরকে মানিলন্ডারিং ও সাইবার ক্রাইমের মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া এবং ক্রসফায়ারের ভয় দেখানো হয়।

বলা হয়, এসব মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে চালান দিলে ২০ বছরেও কারাগার থেকে বের হতে পারবে না। আবু বকরকে টাকার জন্য চাপ দিতে থাকেন পরিদর্শক রুহুল আমিন। টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মো. আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে নন-এফআইআর বা সিএমপির অধ্যাদেশ ১০৩/৯৪ মামলা করেন।

প্রসিকিউশন নম্বর ৫৭। মামলায় বাদীসহ ৯ জনকে সাক্ষী রাখা হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন নুরুল আরেফিন, এহছানুল ইসলাম, পুলিশ পরিদর্শক মো. রুহুল আমিন, এসআই মৃদুল কান্তি দে, এএসআই বাবুল মিয়া, এএসআই শাহপরান জান্নাত, কনেস্টবল মো. মমিনুল হক ও কনেস্টবল আবদুর রহমান।

পরদিন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তাদের চট্টগ্রাম আদালতে চালান দেওয়া হয়। আদালত তাদের ১০০ টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। আবু বকর ও বেলাল জরিমানা দিয়ে আদালত থেকে বের হন।

আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘আদালত থেকে বের হেয় তিনি দেখতে পান যে তার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ওই দিন রাতে তার হাতের আঙুলের ছাপ নিয়ে মোবাইলের লক খুলেছিলেন পুলিশ সদস্যরা। ওই রাতে তাকে নগরের মনসুরাবাদে ডিবি হেফাজতে রাখা হয়। এ সময় তার মোবাইল থেকে দুটি ব্যাংকে থাকা অ্যাকাউন্টের ৫ লাখ করে ১০ লাখ টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে স্থানান্তর করা হয়। এ ছাড়া তার বাইন্যান্স অ্যাকাউন্ট থেকে ২ লাখ ৭৭ হাজার ডলার (প্রায় তিন কোটি ৩৮ লাখ টাকা) স্থানান্তর করা হয়েছে।’

আবু বকর সিদ্দিক আরও বলেন, ‘ডিবির পরিদর্শক রুহুল আমিন, এসআই আলমগীরসহ সাত-আটজনের একটি টিম আমাকে বিভিন্ন মামলার ভয় দেখিয়ে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ফ্রিল্যান্সিং করে আট বছর ধরে এসব ডলার জমিয়েছিলাম। অক্সিজেন এলাকায় আমার বাড়ি তৈরির কাজ চলছে। গোয়েন্দা পুলিশ আমার সারা জীবনের আয় লুট করেছে। আমি এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি বিট কয়েন কেনাবেচা করি না। তবে বিশ্বের বিভিন্ন ক্লায়েন্টের সঙ্গে কাজ করি। তাদের কেউ কেউ আমাকে বিট কয়েনে প্যামেন্ট করেন। সেই কয়েনগুলো আমার হিসাবে জমা ছিল। সেগুলো আমি নগদায়ন করতে না পারায় থেকে যায়। আমি ধারণা করেছিলাম যে ডিবি পুলিশ আমার যে ডলারগুলো চুরি করেছে সেগুলোকে অবৈধ আখ্যা দিতে এটা (মামলা) তারা করবে। এটার সুযোগ তারা নিয়েছে।’

তবে এ বিষয়ে নগর ডিবি পরিদর্শক রুহুল আমিনের বক্তব্য জানা যায়নি। এ বিষয়ে গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর-দক্ষিণ) মোছা. সাদিরা খাতুন খবরের কাগজকে বলেন, ‘এখানে দুটি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। একটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা আর অন্যটি ক্রিপ্টোকারেন্সি। যেটি বাংলাদেশে অবৈধ। ডিবি পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। সেই কমিটি তদন্ত করে বের করবেন আসল ঘটনা কি? এ ছাড়া অবৈধ ক্রিপ্টোকারেন্সি বা বিট কয়েন কেনাবেচার অপরাধে জড়িতদের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা করা হচ্ছে। এ বিষয়েও তদন্ত করা হচ্ছে।’

এ সময় যারা ডিবি পুলিশের হাতের গ্রেপ্তার হয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি খোলাসা করেননি। বলেন পরবর্তীতে জানিয়ে দেওয়া হবে।