
দেশজুড়ে: ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ফাইরোজ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনা তদন্তের পরিধি অনেক বড়, এর জন্য সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম। শনিবার (১৬ মার্চ) তিনি এই কথা বলেন।
আইনুল ইসলাম বলেন, ২০২২ সালের একজন শিক্ষার্থীর আত্নহত্যার বিষয়টিও তদন্তধীন। তদন্তের আশ্বাস যখন দেয়া হয়েছে, তখন এর শেষ দেখে ছাড়বো। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এরকম পরিস্থিতি যেন আর না হয় সেজন্য সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ইতিমধ্যে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী রায়হান সিদ্দিক আম্মান ও সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জাকির হোসেৃনকে আহ্বায়ক করে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এর আগে ১টি আত্মহত্যা ও কিছু হ্যারেজমেন্টের অভিযোগ রয়েছে। কিছু কিছু ঘটনায় একশনও নেওয়া হয়েছে। বাকি অভিযোগগুলোরও বিচার হবে।
এর আগে গতকাল শুক্রবার (১৫ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর এবং সহপাঠীকে দায়ী করে নিজ বাসা কুমিল্লায় আত্মহত্যা করেন অবন্তিকা। পরে তাকে তাৎক্ষণিক উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এই ঘটনায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফাইরোজ অবন্তিকা আত্মহত্যার ঘটনায় অভিযোগ ওঠা সহপাঠীকে সাময়িক বহিষ্কার ও দ্রুত গ্রেপ্তারের নির্দেশনা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শনিবার ভোর পাঁচটায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এছাড়া আত্মহত্যার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে প্রশাসনিক-একাডেমিকসহ সকল কার্যক্রম থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
এদিকে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনায় অভিযুক্তদের বিচারের দাবিতে শুক্রবার মধ্যরাতেই ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় দোষীদের শাস্তির দাবি জানান তারা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তাদের দাবির বিষয়ে আশ্বাস দেন।
শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে রাত ১টার পর ক্যাম্পাসে আসেন উপাচার্য অধ্যাপক সাদেকা হালিম। এসময় তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে আটকে দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তখন ড. সাদেকা হালিম শিক্ষার্থীদের শান্ত করার চেষ্টা করলে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
এসময় এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য সাত কর্মদিবস সময় নিতে চাইলে শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করে আগামী ১২ ঘণ্টায় মধ্যে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পেশ করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থার দাবি জানান। একই সঙ্গে রাতের মধ্যেই অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, বিগত সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানিসহ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু প্রশাসনের গাফিলতির কারণে অভিযুক্তরা পার পেয়ে গেছেন। তাই এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে।
পরে উপাচার্য ক্যাম্পাসে এলে শিক্ষার্থীরা তাকে ঘিরে ধরে স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় সঙ্গে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোষাধ্যক্ষ ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা উপাচার্যকে ক্যাম্পাসের ভেতরে যেতে দিতে শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করে। সেখানে প্রায় আধা ঘণ্টা অবস্থানের পর ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন উপাচার্য। এরপর তিনি মুক্তিযুদ্ধ ভাস্কর্যের সামনে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন।
ফাইরুজের আত্মহত্যার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে উপাচার্য সাদেকা হালিম শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে আমাকে দেওয়া ক্ষমতায় অভিযুক্তদের সাময়িকভাবে বহিষ্কার করেছি। এই ঘটনার সকল বিষয়ে আমলে নিয়ে, তদন্ত ব্যাপক পরিসরে করব। যারা দায়িত্ব অবহেলা করেছে তাদের চিহ্নিত করা হবে। আর প্রতিবেদন পাওয়া মাত্র তাদের বহিষ্কারের ব্যবস্থা নিব। দ্রুত সময়ে সবকিছু হবে।’