
কুমিল্লায় নিজ বাড়িতে গত শুক্রবার রাত ১০টার দিকে আত্মহত্যা করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আইন বিভাগের ১৩ তম ব্যাচের (২০১৭-১৮ সেশন) ছাত্রী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা (২৪)।
মৃত্যুর দশ মিনিট পূর্বে নিজের ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে তিনি এ ঘটনার জন্য সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকী এবং সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে এ ঘটনার জন্য দায়ী করেন।
এ ঘটনায় ইতোমধ্যে তার সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে আটক করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ।
আত্মহত্যার ঘটনায় আটক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে বলে দাবি করেছে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার খ মহিদ উদ্দিন।
জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে উত্ত্যক্ত ও হয়রানির শিকারের সুষ্ঠু বিচার ও প্রতিরোধ চেয়ে গত বছরের ১৪ নভেম্বর জবি প্রক্টর বরাবর লিখিত আবেদন করেছিলেন অবন্তিকা। যেখানে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরা হয়।
সেই আবেদনপত্রের ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা কী জানিয়েছিলেন? তার সেই অভিযোগ নিচে তুলে ধরা হলো:
বরাবর,
প্রক্টর
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
মাধ্যম, চেয়ারম্যান, আইন বিভাগ।
বিষয় : উত্ত্যক্তকারীর দীর্ঘদিনের হয়রানিমূলক সুষ্ঠু বিচার এবং প্রতিরোধ প্রসঙ্গে।
‘সবিনয় নিবেদন এই যে, আমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪তম ব্যাচের আইন বিভাগের একজন নিয়মিত ছাত্রী। দীর্ঘদিন যাবৎ (১৪) ব্যাচের আমারই বিভাগের (আম্মান সিদ্দিকী) আমার সাথে হয়রানিমূলক আচরণ ও উত্ত্যক্ত করে আসছে। ১ম বর্ষে প্রেমের প্রস্তাব করলে প্রত্যাখ্যান করলে সে ব্যক্তিগত জীবনে এগিয়ে যায়।
কিন্তু তার কিছুদিন পরই লিফটের কাছে দাঁড়িয়ে থাকলে আমাকে দেখে সে কুরুচিপূর্ণ ও অশ্লীল মন্তব্য করে। আমি এরূপ মন্তব্যের প্রতিবাদ করায়ই বিপত্তি বাধে। সে অপমানিত বোধ করে এবং আমাকে বলে, আমার একদিন এমন অবস্থা করবে বা এমনভাবে ফাঁসাবে আমাকে, যাতে আমি মেয়ে হয়ে সমাজে মুখ দেখাতে না পারি। এবং সুইসাইডে বাধ্য হই। ২০২২ এ এমন আগ্রাসী আচরণ মৌখিক গালাগাল, রাস্তায় চলতে গেলে দুর্ঘটনার হুমকিতে রূপ নেয়।
তখন আমার বাবা অসুস্থ থাকায় আমি এ বিষয়ে আলোকপাত করিনি এবং তাকেও গুরুত্ব দেইনি। তাই তাকে আমি সরাসরি স্পষ্টভাবে বলি আমার সাথে যেন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সে কোনো কথা না বলে, আমি বিরক্ত হই তাতে। তারপর কিছুদিন বন্ধ থাকলে হঠাৎ ছেলেটি মেসেঞ্জারে আমাকে বলে সে এমন কিছু তথ্য ছড়াবে মানুষের কাছে যাতে আমি অপদস্থ হই। এবং বলে সে কবর থেকে একদম মুরদা তুলে ফেলবে ওর সাথে কিছু করলে।
সম্প্রতি আমার বাবা মারা যাওয়ার পর তার হুমকি ধামকি এবং উৎপাতের মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন সময় আমি ডিপার্টমেন্টের করিডোরে একা থকলে সে আমাকে বিবিএ ফ্যাকাল্টির ছাদে কিংবা সম্পূর্ণ ফাঁকা ক্লাসরুমে তার সঙ্গে কথা বলার জন্য ডাকে এবং আমি সরাসরি কথা বলতে বললে রেকর্ড করব, সেই ভয়ে সেখান থেকে সে দ্রুতগতিতে চলে যায়।
কয়েকমাস আগে সে আবারো আমাকে ডেকে আমাদের ডিপার্টমেন্টের উপরের ফ্লোরে নিয়ে কথা বলতে চাইলে আমি প্রতিবাদ করি এবং তখন সে আমাকে ভয় দেখায় এই বলে, ‘আমার নামে প্রক্টর স্যারের কাছে নালিশ দিবি? দে, দেখি কী করতে পারস। প্রক্টর স্যারকে একটা কল দিলেই স্যার ধরে। কারণ আমি সাংবাদিক।
’ তুই জানস কোতয়ালী থানায় আমার কেমন লিঙ্ক? এক সেকেন্ড লাগবে তোকে ফাঁসাতে। এমতাবস্থায় আমি সেদিন ভয়ে হোমটাউনে চলে যাই। কয়েকদিন ক্লাস অফ দিই। পরীক্ষা দিতে তো আসতেই হয়। সে মিডটার্ম পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর আমি যখন আমার বন্ধু বান্ধবীর সাথে ছিলাম তখন দেখেও আমাকে ডাকেনি। যখনই আমার বন্ধুরা চলে গেল, তখনই সে সেদিন আমাকে একা পেয়ে ৩.২৬ এ আবার ফাঁকা ক্লাসরুমে ডাকে।
তখন আমি ইগনোর করে যেতে চাইলে সে আমার পথরোধ করে এবং তার ডাকে ক্লাসরুমে না যাওযায় ধমক দেয়। আমি ঠিক তখনই তাকে বিভাগের অফিস রুমে নিয়ে যাই যাতে আমার কোনো ক্ষতি না হয়। আমি প্রচণ্ড ভীতসন্ত্রস্ত, এমনকি পরিবার ছাড়া ঢাকায় থাকায় রাস্তাঘাটে চলাচলেও অনিরাপদ বোধ করছি। অতএব বিনীত প্রার্থনা, বিষয়টি আমলে নিয়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়ে বাধিত করবেন।