
হেড লাইন: ‘আব্বা আরও ১৫ লাখ টাকা দিতেই হবে, আর নাইলে ওরা আমাকে মাইর্যা ফেলবে! আব্বা কবে টাকা দিবা? ওরা আমাকে খাবারও দেয় না।’ -এভাবেই ইমোতে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বাবার সঙ্গে কথাগুলো বলেছিলেন লিবিয়ায় দালালের হাতে আটকা পড়া শাকিল মিয়া। জানা যায়, ফরিদপুরের সালথা উপজেলার রামকান্তপুর গ্রামের টিটুল মিয়ার ছেলে শাকিল মিয়া একই গ্রামের বাসিন্দা প্রবাসী মুকুল ঠাকুর নামের এক ব্যক্তির প্ররোচনায় ইতালি যাওয়ার পরিকল্পনা করে। পরে তার পরিবার জমি বিক্রিসহ ঋণ নিয়ে মুকুলকে ১২ লাখ টাকা দেন। এরপর শাকিলকে সঙ্গে নিয়ে ইতালির উদ্দেশে পাড়ি জমান মুকুল।
গত ১২ দিন যাবৎ দু-এক দিন পরপর মোবাইল ফোনে ইমো নম্বরে কল দিয়ে কৃষক টিটুল মিয়ার কাছে ছেলের মুক্তিপণ হিসেবে টাকা দাবি করছে প্রতারক চক্র। এমন পরিস্থিতিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি। বলা হচ্ছে তার ছেলে লিবিয়ায় রয়েছে। আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে, টাকা না দিলে একমাত্র ছেলেকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে জানাচ্ছে ভুক্তভোগী ওই পরিবারটি।
ভুক্তভোগী শাকিলের বড় বোন বৃষ্টি আক্তার জানান, গত ৪ জানুয়ারি প্রথমে শাকিলকে ভারতে নেয়া হয়। পরে দুবাই হয়ে ১৪ জানুয়ারি লিবিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গিয়ে একটি ক্যাম্পে রাখা হয়েছিল বলে জানানো হয়েছিল। কয়েকদিন স্বাভাবিক কথাবার্তাও হয়েছে। কিন্তু গত ১২ দিন যাবৎ অমানবিকভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। এমনকি খাওয়া-দাওয়া বন্ধ রেখেছে চক্রটি। নির্যাতনের সময় কল দিয়ে শোনানো হচ্ছে বাড়িতে। নির্যাতনকারীর বাংলায় কথা বলছেন। এখন তার মুক্তিপণ হিসেবে ১৫ লাখ টাকা দাবি করছে চক্রটি। সন্তানের এমন পরিস্থিতিতে দিশেহারা হয়ে গেছে হতদরিদ্র বাবা টিটুল মিয়া। তিনি বলেন, ‘আমি এত টাকা কই পাব! যা ছিল শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করে, চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ১২ লাখ টাকা জোগাড় করো আগেই তো পাচারকারী মুকুলের হাতে তুলে দিয়েছি। এখন আমি কই যাব?’ এ বিষয়ে সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান বালী বলেন, ‘বিষয়টি আমি জেনেছি। এখন তাকে উদ্ধারের জন্য পরিবার যদি কোনো সহযোগিতা চায়, তাহলে সহযোগিতা করা হবে। ঢাকায় অ্যাম্বাসিতে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা হবে। অভিযোগ পেলে দালাল চক্রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ এ বিষয়ে সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ফায়েজুর রহমান বলেন, ‘এ ধরনের কোনো অভিযোগ এখনো পাইনি। ভুক্তভোগীর পরিবার থেকে অভিযোগ দিলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। মুকুল ঠাকুরের নামে মানবপাচারের কোনো মামলা আছে কি না, আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে বলা যাবে।’