
দেশজুড়ে: রহস্যজট খোলেনি রাজধানীর মোহাম্মদপুরে তরুণীকে শিকলে বেঁধে নির্যাতন ও ধর্ষণের অভিযোগের। ধোঁয়াশা কাটেনি এ ঘটনার মাস্টারমাইন্ড ব্যারিস্টার মাসুদকে ঘিরে। জানা যায়নি ব্যারিস্টার মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকা এ অভিযুক্তের নামের সত্যতা কিংবা ঠিকানা।
পেশায় আদৌ তিনি ব্যারিস্টার কি না, তা-ও জানা সম্ভব হয়নি। পুলিশি হেফাজতে এক দফা বয়ান পাল্টেছেন ওই তরুণীও। প্রথমে জানান, আপন ভগ্নিপতির মাধ্যমেই ব্যারিস্টার মাসুদের সঙ্গে তার পরিচয়। এখন বলছেন, তার ভগ্নিপতি কোনোভাবেই জড়িত নন। নিজেই প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন। এ ছাড়া এখন পর্যন্ত নতুন আর কোনো তথ্য দেননি তিনি। এদিকে এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া আসামিরাও পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ব্যারিস্টার সম্পর্কে নতুন কোনো তথ্য দেয়নি।
গত শনিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরে নবীনগর হাউজিংয়ের একটি বহুতল ভবনের চারতলা থেকে শিকলবন্দি অবস্থায় এক তরুণীকে উদ্ধার করে পুলিশ। উদ্ধারের পর জানা যায়, ২৫ দিন ধরে ওই তরুণীকে শিকল দিয়ে বেঁধে নির্যাতন এবং ধর্ষণ করা হচ্ছিল। শনিবার রাতে সুযোগ পেয়ে ওই তরুণী চিৎকার করলে স্থানীয়রা জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিলে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। পরে ওই রাতেই তরুণী মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন। এর পরদিন রোববার রাতভর অভিযান চালিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে তরুণীকে বন্দি অবস্থায় ধর্ষণ, নির্যাতন ও ভিডিও ধারণের ঘটনায় জড়িত চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তাররা হলো তরুণীর কথিত প্রেমিক সান ও তার দুই বন্ধু হিমেল, রকি এবং সালমা ওরফে ঝুমুর।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারের পর আসামিদের আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে নেওয়া হয়। তবে এখন পর্যন্ত আসামিরা তেমন কোনো তথ্য দেয়নি। প্রাথমিকভাবে জানা যায়, মাসুদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল ওই তরুণীর। তারা লিভ টুগেদার করত। মাসুদ বিদেশ চলে যাওয়ার কারণে ওই তরুণীকে দেখভালের জন্য রেখে গিয়েছিলেন সালমাকে। তবে সালমা তরুণীকে সানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলে তাদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে ব্যারিস্টার প্রতিশোধ নিতে টাকার প্রলোভন দেখিয়ে সান ও তার বন্ধুদের দিয়ে এ তরুণীকে শিকলে বেঁধে পৈশাচিকভাবে শারীরিক ও যৌন নির্যাতন চালায়। এতে সহযোগিতা করে সালমা। নির্যাতন ও বিকৃত যৌনাচারের ভিডিও ধারণা করে মাসুদের কাছে পাঠাত তারা। তরুণীকে নির্যাতনের বেশিরভাগ ভিডিও ও ছবি সালমার মোবাইলে। তবে সে মোবাইলটি পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে ভুক্তভোগী তরুণীর মোবাইলটির সন্ধানও এখনো পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে এ পৈচাশিক নির্যাতনের পেছনের মূল রহস্য কী, তা এখনো বের হয়নি। আর এ ব্যারিস্টার আসলে কে, কী তার আসল পরিচয়, সে সম্পর্কেও এখন পর্যন্ত কিছুই জানা যায়নি। জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরাও এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত মুখ খোলেনি।
এদিকে তরুণীকে উদ্ধারের পর শারীরিক অসুস্থতার কারণে তাকে সেফ কাস্টডির মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এজন্য এখন পর্যন্ত তাকে বেশি জিজ্ঞাসাবাদের সুযোগ পায়নি পুলিশ। তবে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই তরুণীর কিছু তথ্যে গরমিল পাওয়া গেছে। শুরুতে ব্যারিস্টারের সঙ্গে ভগ্নিপতি পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল বললেও, তাদের দুজনকে যখন সামনাসামনি জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, তখন তরুণী জানান তিনি নিজেই ব্যারিস্টারের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছেন। ভগ্নিপতিও পুলিশকে জানান, তিনি জীবনে কখনো ব্যারিস্টার মাসুদের নাম শোনেননি। এ ঘটনায় তরুণীর বাবাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। তিনিও এ ঘটনার সঙ্গে মেয়ের জামাইয়ের জড়িত থাকার বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, সালমা এবং ওই তরুণীর মোবাইল ফোনগুলো উদ্ধার হলেই এ ঘটনার রহস্য বের হয়ে আসবে। এ ব্যারিস্টার আসলে কে, আদৌ এ লোকের কোনো অস্তিত্ব আছে কি না, সে বিষয়েও নিশ্চিত হওয়া যাবে।
তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মৃত্যুঞ্জয় দে সজল কালবেলাকে বলেন, সব দিক বিবেচনা করেই আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। দরকার হলে আসামিদের আবারও রিমান্ডে নেওয়া হবে। আশা করি, দ্রুতই এ ঘটনার পেছনের কাহিনি উন্মোচিত হবে।
জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি: তরুণীকে শিকলে বেঁধে ২৫ দিন আটকে রেখে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) সহ কয়েকটি সংগঠন। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি বাসায় নির্যাতনের শিকার তরুণীর সুচিকিৎসা নিশ্চিতকরণেরও দাবি জানিয়েছে সংগঠনগুলো।
গতকাল এক বিবৃতিতে মহিলা পরিষদ ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন এ তথ্য জানায়। একই সঙ্গে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।