প্রচ্ছদ সারাদেশ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাবা, ঈদগাঁ যাওয়া হলো না তাদের

জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাবা, ঈদগাঁ যাওয়া হলো না তাদের

সারাদেশ: ‘বাবা বলেছিল এবার আমাদের সাথে ঈদ করবে। আমাদের ঈদগাঁ মাঠে নিয়ে যাবে। কিন্তু বাবা আসে নাই আমাদের ঈদগাঁ নিয়ে যায়নি। কবে আসবে বাবা? বাবার হাত ধরে ঈদগাঁ যেতে চাই। আমার বাবারে আইনা দেন।’কান্নাজড়িত কণ্ঠে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজের ফাইটার হিসেবে কর্মরত আহমেদ মো. সালেহের (৪৮) বড় মেয়ে রিয়াজুল জান্নাত তাসফি (১৪)। সে চাটখিল পাঁচগাও উচ্চবিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ে। একই বিদ্যলয়ের ষষ্ঠ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ফাহমিদা আক্তার ফাইজা (১২) সালেহ আহমেদের মেজ মেয়ে। বয়সের কারণে এবং বাবা বেশিরভাগ সময় জাহাজে থাকেন বলে বাবার অনুপস্থিতি তেমনটা টের পাচ্ছে না সে। ঘরের বড়দের কান্নাকাটি দেখে সেও মন খারাপ করে, কান্না করে। বাবার কথা জানতে চায়।

ফিট থাকতে সবার আগে চিনি বাদ দিন, প্রাকৃতিক ও নিরাপদ জিরোক্যাল-এর মিষ্টি স্বাদ নিন। ছোট মেয়ে হাফসা বিনতে সালেহর বয়স মাত্র তিন বছর। তেমন কিছু বুঝতে না পারলেও ঘরের অন্যদের মলিন মুখে অপলক চেয়ে থাকে মেয়েটি। আহমেদ মো. সালেহ নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার নোয়াখলা ইউনিয়নের সিংবাহুড়া গ্রামের মুন্সি বাড়ির মৃত সাখাওয়াত উল্লাহর ছেলে। চার ভাই এক বোনের মধ্যে মো. সালেহ সবার বড়। তার স্ত্রী ও তিন কন্যা সন্তান রয়েছে।

জানা যায়, আহমেদ মো. সালেহ পরিবারের ঈদ আনন্দ মহাসাগরে তলিয়ে গেছে, শঙ্কা-প্রতীক্ষায় কাটছে তাদের দিন। স্ত্রী ও তিন মেয়েকে নিয়ে তার ছোট পরিবার। তিনিই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। ছালেহ আহমদ গত বছর ঈদ করেছেন কর্মস্থলে। স্ত্রী ও তিন কন্যার আশা ছিল এবার তাদের সঙ্গে ঈদ করবে। কিন্তু স্বামী জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার খবরে এলামেলো হয়ে যায় স্বাভাবিক জীবন। তিন মেয়েকে নিয়ে অনেকটা বাকরুদ্ধ ছালেহের স্ত্রী তানিয়া আক্তার। যেন তারা বেঁচে থেকেও মৃত। তানিয়া ছোট ছোট তিন মেয়েকে নিয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে শঙ্কা নিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনছে স্বামীর। একেবারে নিকট আত্মীয় ছাড়া কারও সঙ্গে কথা বলছেন না।

আহমেদ মো. সালেহের ভাই তানজিমুল হাসান ফাহিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার ভাইসহ অপহৃত নাবিকদের ভাগ্যে কি ঘটেছে সেই শঙ্কায় ঈদের আনন্দ নেই আমাদের পরিবারে। আমাদের প্রত্যাশা এমন উৎকন্ঠার সময় পেরিয়ে ফিরে আসুক সবাই। আমাদের বাবা-মা নেই। আমরা চার ভাই এক বোন। আমার ভাই অত্যন্ত ভালো মানুষ। তিনি কারও সঙ্গে উত্তেজিত হয়ে কথা পর্যন্ত বলতেন না। তিনি আমাদেরকে বড় করেছেন। উনার মতো মানুষ হয় না। যত দ্রুত সম্ভব সরকার সবাইকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করুক। এটাই আমাদের চাওয়া। সালেহের স্ত্রী তানিয়া আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, কোম্পানির লোকজন নিয়মিতভাবে খোঁজ খবর নিচ্ছেন। এতোদিন ঈদের আগে মুক্ত হবেন বলে আশায় ছিলাম। এখন আবার খুব টেনশন হচ্ছে। সে মুক্ত হওয়ার আগে আমাদের দুশ্চিন্তা কিছুতেই কমবে না। দিনদিন বেড়েই চলেছে। এই শঙ্কার মধ্যেও নিজের জন্য এখনো কিছু না নিলেও বাচ্চাদেরকে ঈদের নতুন জামা-কাপড় কিনে দিয়েছেন মো. সালেহ আহমেদের স্ত্রী তানিয়া আক্তার।। চাটখিল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দীন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি নতুন এসেছি। আপনার কাছেই জানলাম চাটখিলে জিম্মি নাবিকের পরিবার আছে। আমি ঈদের পরে তাদের বাড়িতে যাব। তাদের খোজ খবর নেব।