প্রচ্ছদ দেশজুড়ে এখন আমার কি হবে, মনুরে লইয়া কোন পথে যামু

এখন আমার কি হবে, মনুরে লইয়া কোন পথে যামু

দেশজুড়ে: জন্ম থেকে প্রতিবন্ধী শহিদুল খান (৪৬)। মানসিক অবস্থা ভালো থাকলেও তার দু’পা ছিলো বিকলাঙ্গ। হাতে ভর করে পাছায় টিউব বেধে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ভিক্ষা করে সংসার চালাতেন শহিদুল।

৮ বছর বয়স থেকেই ঝালকাঠির গাবখান ফেরিঘাটে ও ফেরিতে তার ভিক্ষা করা শুরু । গত ৪/৫ বছর যাবৎ তাকে নিয়মিত দেখা যেতো গাবখান সেতুর পূর্বপাড়ে টোল প্লাজায়।

সেতুর টোল প্লাজার কর্মী হিসেবে কাজ করে তার আপণ দুই ছোট ভাই। বুধবার দুপুরে প্রতিদিনের মত রামনগর গ্রামের বাড়ি থেকে মাত্র দুইশগজ দূরত্বে গাবখান সেতুর টোলে ভিক্ষা করছিল শহিদুল।

সেদিন সিমেন্ট বোঝাই ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি প্রাইভেভটকার ও ৩টি অটোরিক্সাকে চাপা দিয়ে খাদে পড়ে যায়। গুরুতর আহত হন প্রতিবন্ধী শহিদুলও।বিকেল ৪টায় বরিশাল শেরই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল)সকাল ১০টায় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। গাবখান সেতুর টোলে আর কোনদিন দেখা যাবে না শহিদুলকে।

শহিদুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্ত্রী হেলেনা বেগম স্বামী হারানোর শোকে বার বার মুর্ছা যাচ্ছেন। আড়াই বছর বয়সি ছোট মেয়েকে কোলে নিয়ে করুণ ভাষায় বিলাপ করে বলছেন ‘আল্লাহরে এখন আমার কি হবে, মনুরে লইয়া কোন পথে যামু, কেমনে বাঁচমু। ও আল্লাহ তুমি এ কেমন বিচার করলা’।

দাম্পত্য জীবনে শহিদুলের আড়াই বছর বয়সী সায়মা আক্তার নামে এক কন্যা সন্তান রয়েছে। ভিক্ষার টাকায় চলতো শহিদুলের সংসার। শহিদুলের বাবা বাদশা খান ছিলেন নৌকার মাঝি। ঝালকাঠির অতুল মাঝির খেয়াঘাট আর গাবখান নদীতে সে খেয়া নৌকা চালাতো। তার আপন দুই ভাই সাইদুল ও সাদ্দাম গাবখান সেতুর টোলে টোল আদায়ের কাজ করে।

ছোট ভাই সাদ্দাম বলেন, আমি বুধবার টোলের ডিউটি শেষ করে দুপুরে খাবারের জন্য বাড়িতে আসার পরে গোসলে যাই। হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পাই। পরে দৌড় দিয়ে টোলের সামনে গিয়ে দেখি আমার ভাই ঘাতক ট্র্রাকের নিচে চাপা পড়ে আছে।

সাদ্দাম আরও বলেন স্থানীয়রা তাকে ট্রাকের নিচ থেকে বের করার চেষ্টা চালাচ্ছে। পরে তাকে উদ্ধার করে বরিশাল শেবাচিমে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থা ভাই আমাদের ছেড়ে চলে যায়। ভাই আর কোনদিন ফিরেও আসবে না, আর মানুষের কাছে হাতও পাতবে না।