
দেশজুড়ে : তিনশ কিলোমিটার দূরে কর্মরত থেকেও ডাকাতি মামলার আসামি হয়েছেন এক ব্যাংক কর্মকর্তা। মাত্র চার দিনের ব্যবধানে ওই পরিবারের সদস্যদের নামে অস্ত্র, চাঁদাবাজি ও ডাকাতির তিনটি মামলা হয়েছে।
নারী আসক্ত এক প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতার রোষানলে পড়ে মিথ্যা মামলায় জর্জরিত অসহায় নারীর পরিবারটি। ওই পরিবারের নামে কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের দ্রুত বিচার আইনের একটি মামলার তদন্ত করতে গিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছেন পিবিআই কর্মকর্তারা।
‘স্বামীকে জেলহাজতে আটক রেখে নিজের মনের বাসনা পূর্ণ করতে ওই নারীর পরিবারের সদস্যের নামে একাধিক মিথ্যা মামলা করেছেন নারী আসক্ত আতাহার আলী। স্বামীর সঙ্গে ওই নারীর বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে চাঁদাবাজির মতো ঘটনার নাটক সাজিয়ে আদালতে দ্রুত বিচার আইনে মামলা করা হয়েছে’ বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন কুষ্টিয়া পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
মিথ্যা মামলা থেকে বাঁচতে এবং প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করতে উচ্চতর কোনো সংস্থাকে দিয়ে নিরপেক্ষ তদন্তের অনুরোধ করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিত আবেদন করেছেন শাহানাজ পারভীন নামে ভুক্তভোগী ওই নারী।
শাহানাজ পারভীনের অভিযোগ, ‘আতাহার আলী অনেক ক্ষমতাধর ব্যক্তি। সব জায়গায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নাম ব্যবহার করছেন। যেখানে যাচ্ছি সেখান থেকে আমাকে বলছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফোন দিয়েছিলেন। আমাদের অনেক চাপ আছে।’
মেহেরপুর জেলায় সাজানো ডাকাতির সময় শাহানাজ পারভীনের ছোট বোনের স্বামী মনির হোসেন গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন। ব্যাংকের হাজিরা খাতার স্বাক্ষর ও সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে ওইদিন অফিস করছেন মনির হোসেন। কালীগঞ্জ থানা পুলিশ সিসিটিভির ফুটেজ ও হাজিরা খাতার ফটোকপিসহ তদন্ত প্রতিবেদন মেহেরপুর থানায় পাঠিয়েছে। তারপরও সাড়ে তিন বছর আদালতের বারান্দায় ঘুরছেন ব্যাংক কর্মকর্তা মনির হোসেন।
বুধবার দুপুরে গাজীপুর থেকে মেহেরপুর আদালতে হাজিরা দিতে আসেন তিনি। আদালতের বারান্দায় দাঁড়িয়ে মনির হোসেন বলেন, ‘মামলার বাদীকে আমি চিনি না। আমি কোনো সময় মেহেরপুর জেলায় আসিনি। ডাকাতির মতো একটি মামলা তদন্ত ছাড়া কীভাবে হতে পারে আমার জানা নেই। সে সময় তদন্ত করলে আমাকে মিথ্যা মামলায় বছরের পর বছর ধরে হ্যারেজমেন্ট হতে হতো না।’
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২০ সালের ১ নভেম্বর পকেটে ছুরি দিয়ে শাহনাজ পারভীনের স্বামী নাজমুল ইসলামকে ডিবি পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেন আতাহার আলী। দুদিন পর ৩ নভেম্বর জামিনে ছাড়া পান নাজমুল ইসলাম। পরদিন ৪ নভেম্বর রাতে ফের অস্ত্র নিয়ে হামলার নাটক সাজিয়ে নাজমুলের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া আদালতে দ্রুত বিচার আইনে মামলা করেন আতাহার আলী। ওই ঘটনার মাত্র ৯ ঘণ্টা পর এবার পার্শ্ববর্তী মেহেরপুর জেলার আদালতে আরেকটি ডাকাতি মামলা করা হয়। ওই মামলার বাদীও আতাহার আলী। ডাকাতির ওই মামলায় শাহানাজ পারভীনের স্বামী ছাড়াও আপন ভাইসহ দুই খালাত ভাই ও ছোট বোনের স্বামী এবং বাড়ির ভাড়াটিয়াকে আসামি করা হয়। অথচ ওইদিন দুই খালাত ভাই নয়ন ও সোহান ঢাকার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন এবং ছোট বোনের স্বামী মনির হোসেন ওইদিন ঢাকার গাজীপুরে একটি ব্যাংকের কালীগঞ্জ শাখায় কর্মরত ছিলেন। আপন ছোট ভাই পাভেল পরিবারসহ দীর্ঘদিন ঢাকায় থাকেন এবং সেখানে ব্যবসা করেন।
ভুক্তভোগী নারী শাহানাজ পারভীন বলেন, ‘আতাহার একজন দুশ্চরিত্রের লোক। আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে তিনি আমাকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করে আসছিলেন। পরে আমি বিয়ে করলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে মাত্র চার দিনের মধ্যে আমার পরিবারের সদস্যদের নামে একটি ডাকাতি ও দুটি অস্ত্রসহ মোট তিনটি মিথ্যা মামলা করেছেন। আমাকে সব সময় হুমকি দেওয়া হয় আমার স্বামীকে ডিভোর্স না দিলে আরও মামলা দেওয়া হবে। দ্বারে দ্বারে অনেক ঘুরেছি, কারও কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পাইনি। তাই আমার পরিবারকে বাঁচাতে সর্বশেষ ভরসাস্থল প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিত আবেদন করেছি।’
গত শনিবার দুজনকে গুলি করার ঘটনায় আতাহার আলীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বর্তমানে তিনি জেলহাজতে রয়েছেন। তার স্ত্রী আইরিন পারভীন বলেন, ‘এসব মিথ্যা কথা। ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে বলেই মামলা হয়েছে।’