
ভালো বেতনে চাকরি পাইয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের এক নারীকে পাচার করা হয় সৌদি আরবে। সেখানে তাকে একটি গোপন আস্তানায় আটকে রেখে ‘যৌনদাসী’ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাকে দিয়ে গৃহস্থালির ভারী কাজ করানো হলেও পারিশ্রমিকের অর্থ পাচার চক্রের সদস্যরা রেখে দেয়। সম্প্রতি হোয়াটসঅ্যাপ ‘ভয়েস কলে’ এমন নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন ভুক্তভোগী ওই নারী।
ঢাকাস্থ মতিঝিলের সেভেন স্টার ম্যানপাওয়ার সার্ভিসেসের মাধ্যমে গত ১৯ মার্চ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে সৌদি আরবে পাড়ি জমান ওই নারী। সেখানে স্থানীয় পাচার চক্রের কাছে বিক্রি করা হয় তাকে।
গত বুধবার হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগের পর ভুক্তোভোগী নারীর ভাই সালাউদ্দীন জাহাঙ্গীর শ্যামনগর থানায় মানব পাচারের মামলা করেছেন। ওই মামলায় উপজেলার শংকরকাটি গ্রামের মোমিন খাঁর ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান চঞ্চল (২৮), তার মা তাসলিমা বেগম (৪৭) ও সেভেন স্ট্যার ম্যানপাওয়ার সার্ভিসেসের ম্যানেজার মো. রাসেল আকন শিমুলের (৩৩) নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও দু-তিনজনকে আসামি করা হয়েছে। এরই মধ্যে চঞ্চলকে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ।
শ্যামনগর থানার ওসি মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘মানব পাচারের অভিযোগে ভুক্তোভোগী নারীর ভাই মামলা করেছেন। আসামিদের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভিকটিমকে উদ্ধারে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।’
এ বিষয়ে ভুক্তভোগীর ভাই সালাউদ্দীন বলেন, ছয় মাস আগে বোনের বিবাহবিচ্ছেদ হলে বাবার বাড়িতে চলে আসে সে। তখন এলাকার পূর্বপরিচিত তাসলিমা এবং তার ছেলে মোস্তাফিজুর আমার বোনকে সৌদি আরবে চাকরির প্রস্তাব দেয়। পরে পাসপোর্ট তৈরির পর আমার বোন ১৭ মার্চ তাদের সঙ্গে ঢাকায় চলে যায়।
তিনি অভিযোগ করেন, সৌদি আরব যাওয়ার পর বোনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেয়া হয়নি। তবে সে ভালো জায়গায় কাজ করছে বলে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়। কিন্তু হঠাৎ গত ১৬ এপ্রিল দুপুর ২টা ৪৬ মিনিটে আমার হোয়াটসঅ্যাপে ‘ভয়েস কল’ পাঠিয়ে আমার বোন নিজেকে বাঁচানোর আকুতি জানায়।
কান্নাজাড়িত কণ্ঠে ভুক্তভোগীর ভাই বলেন, সৌদিতে পৌঁছানোর পরই তার ফোন ছিনিয়ে নিয়ে তাকে একটি কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়। অসুস্থতার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ নিয়ে গেলেও সেগুলোও ছিনিয়ে নেয় তারা। চিকিৎসা করাতে না পেরে ক্রমেই শরীরের অবস্থার অবনতি হচ্ছে। তাকে একটি কক্ষে আটকে রেখে যৌনদাসী হিসেবে বিভিন্ন স্থানে পাঠানোর পাশাপাশি মাঝেমধ্যে দৈনিক ভিত্তিতে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে গৃহস্থালির ভারী কাজ করানো হয়। কিন্তু পারিশ্রমিকের অর্থ পাচার চক্রের সদস্যরাই রেখে দেয়।
বোনের বরাত দিয়ে সালাউদ্দীন আরও বলেন, কাজে যেতে রাজি না হলে কিংবা দেশে ফিরতে চাইলে তাকে মারধর করা হচ্ছে। পাশাপাশি বাথরুমের পানি খেতে দেয়া হচ্ছে। তাকে ঠিকমতো খেতেও দেয়া হয় না। পেটে ক্ষুধা নিয়ে সে কাজ করতে না পারলে তার ওপর চরম অত্যাচার করা হয়। দ্রুত উদ্ধার করা না হলে মারা যাওয়ার শঙ্কার কথাও জানিয়েছে সে।
সালাউদ্দীন বলেন, রাসেল আকন, তাসলিমা, মোস্তাফিজুরসহ আরও অপরিচিত দু-তিনজন এই মানব পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত। তারা মতিঝিলের সেভেন স্ট্যার ম্যানপাওয়ার সার্ভিসেসের মাধ্যমে গ্রামের সহজ-সরল, অভাবী এবং ডিভোর্সি নারীদের টার্গেট করে বলেও আমার বোন জানিয়েছে।
ভুক্তভোগীকে উদ্ধারের বিষয়ে তার ভাই বলেন, বোনের দুরবস্থার কথা জানতে পেরে আমি লাইসেন্স মালিক শিমুলের সঙ্গে কথা বলেছি। তবে তারা আমার বোনকে ফিরিয়ে আনার বিনিময়ে দুই লাখ টাকা দাবি করেছে। বাধ্য হয়ে অন্য লাইসেন্স মালিককে দিয়ে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি।
অন্যদিকে, ভুক্তভোগী ওই নারীর পরিবারের কাছে দুই লাখ টাকা দাবির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সেভেন স্টার ম্যানপাওয়ার সার্ভিসের ম্যানেজার শিমুল। তিনি বলেন, ‘সৌদি আরবের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে।’