প্রচ্ছদ অপরাধ একাধিক ছাত্রীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক যে শিক্ষকের নেশা!

একাধিক ছাত্রীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক যে শিক্ষকের নেশা!

অপরাধ: নওগাঁর মান্দায় মুক্তিযোদ্ধা মেমোরিয়াল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আকরাম হোসেনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, নিয়োগ বাণিজ্যসহ ছাত্রীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের অভিযোগ উঠেছে। এর আগেও অবৈধ সম্পর্কের মাধ্যমে তিনি একাধিক ছাত্রীকে বিয়ে করেছেন বলে জানা গেছে।

তিনি উপজেলার কুসুম্বা ইউপির হাজী গোবিন্দপুর গ্রামের সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আফসার আলীর ছেলে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান হওয়ায় এসব বিষয়ে আকরাম হোসেনের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না। এসব বিষয় নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করলে ক্ষমতার অপব্যবহার ও দাম্ভিকতা দেখিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানোর হুমকি দেন তিনি।

নিজে প্রধান শিক্ষক এবং বাবা আজীবনের জন্য সভাপতি হওয়ার কারণে একক আধিপত্য বিস্তার করে চলেছেন তিনি। জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে তার মতো একজন বিতর্কিত শিক্ষককে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক হিসেবে নির্বাচিত না করার জন্য মান্দার সচেতন শিক্ষক সমাজের পক্ষে বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ করেন মো. আসলাম আলী নামে এক ব্যক্তি। অথচ, সে অভিযোগটি আমলে নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এতে করে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা মেমোরিয়াল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আকরাম হোসেন একজন ফাঁকিবাজ ও দুর্নীতি পরায়ণ শিক্ষক। তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি দেখলেই পাওয়া যাবে বছরের অধিকাংশ দিনই তিনি রাজশাহী, ঢাকা, নওগাঁসহ দেশের বাইরে ঘুরাফেরা করেন। তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বলার মতো নয়। কুকর্ম ঢাকতে ছাত্রীকে বিয়ে করেছেন। যা তার বর্তমান দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে রয়েছে।

এছাড়াও তৎকালীন এমপির নাম ভাঙিয়ে ৪ জন কর্মচারী ও ১ জন সহকারী নিয়োগ দিয়ে অবৈধভাবে প্রায় ৬০ লাখ টাকা অর্জন করে বিলাসবহুল একাধিক বাসা-বাড়ি, রাজকীয় অফিস, প্রাইভেটকারে চলাফেরা, অধিকাংশ সময় বিমানে যাতায়াত, একাধিক ছাত্রীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের পর বিয়ে করেও পার পেয়ে যান কিভাবে? তার খুঁটির জোর কোথায়? এমন বিতর্কিত মানুষকে সেরা নির্বাচিত না করার জোর দাবি জানান অভিযোগকারী।

এরপরেও শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। গত কয়েকবছর ধরে ধারাবাহিকভাবে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টিও জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা জানান, সম্প্রতি ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের এক মেধাবী শিক্ষার্থীর সঙ্গে প্রধান শিক্ষকের অবৈধ সম্পর্কের পর ৪ মাসের অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় তাকে বিয়ে করার গুঞ্জন চলছে। ওই শিক্ষার্থীর বাড়ি একই গ্রামের বাগদেওয়ান পাড়ায়।

ওই শিক্ষার্থীর মা প্রধান শিক্ষকের দ্বিতীয় স্ত্রীর বান্ধবী এবং বাবা পেশায় একজন সবজি বিক্রেতা। শিক্ষার্থীর গ্রামের বাড়ি আর ওই শিক্ষার্থীর নানার বাড়ি একই জায়গায় বলেও জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে জানান,মেয়েটি স্কাউটস এর সদস্য হওয়ায় তাকে বিভিন্ন ইভেন্টে অংশগ্রহণের কথা বলে নওগাঁ,রাজশাহী ও জয়পুরহাট নিয়ে যেতেন প্রধান শিক্ষক। এরই এক পর্যায়ে তাদের অবৈধ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু ভুক্তভোগী মেয়েটি গরিব পরিবারের হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। অথচ, বিষয়টি জানাজানি হলে মেয়েটির বাবা-মা ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে প্রতিবাদ জানান। এরপর ওই প্রধান শিক্ষক মেয়েটিকে স্কুলে যেতে নিষেধ করেন। এমন পরিস্থিতিতে কোনো প্রতিকার না পেয়ে বিব্রতবোধ করছেন মেয়েটির পরিবারের লোকজন।

অপরদিকে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের লোকজন প্রভাবশালী হওয়ায় ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। এমতাবস্থায় সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে লম্পট প্রধান শিক্ষকের বিচার দাবি করেন স্থানীয়রা। ভুক্তভোগী ছাত্রীর মা-বাবা বলেন, ওই প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকের কাছে গিয়ে অভিযোগ করলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

তাদের দাবি, এত অল্প বয়সের সুন্দরী এবং মেধাবী মেয়েটাকে একাধিক বিবাহিত একজন পুরষের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না! কেননা ওই শিক্ষকের বর্তমানে একাধিক স্ত্রী রয়েছে। প্রথম স্ত্রীর কোনো সন্তান না হওয়ায় ওই স্কুলের এক ছাত্রীকে বিয়ে করেন আকরাম মাস্টার। আমরা গরিব হতে পারি। কিন্তু সবারই একটা আত্মসম্মানবোধ আছে। এর খেসারত দেবে কে?

মুক্তিযোদ্ধা মেমোরিয়াল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আকরাম হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, একটি চক্রান্তকারী মহল প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এসব প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। এসবের কোনো সত্যতা নেই।

মুক্তিযোদ্ধা মেমোরিয়াল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি আফসার আলী বলেন, প্রতিষ্ঠানটি ১৯৯৮ সালে স্থাপিত। শিক্ষার্থীর সংখ্যা এবং শিক্ষার গুণগত মানও ভালো। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এসব প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। বিষয়টি জানার পর সত্যতা যাচাইয়ের জন্য অত্র প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়ে একটি জরুরি মিটিং করেছি। এসবের কোনো সত্যতা নেই।

কুসুম্বা ইউপি চেয়ারম্যান নওফেল আলী মন্ডল বলেন, স্থানীয়দের মাধ্যমে বিষয়টি শুনেছি। তবে, কতদূর সত্য তা জানা নেই। আদা খাবে যে, ঝালে বুঝবে সে। মান্দা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ আলম সেখ বলেন, প্রতিবছর জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে আবেদনের প্রেক্ষিতে যাচাই-বাছাই করে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত করা হয়। এবারে যারা আবেদন করেছিলেন তাদের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে তাকে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত করা হয়েছে। তবে, তার বিরুদ্ধে পুনরায় একছাত্রীকে বিয়ের আগেই ৪ মাসের অন্তঃস্বত্ত্বা এবং তাকে বিয়ে করার বিষয়টি জানা নেই। অভিযোগের সত্যতা পেলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মান্দা থানার ওসি মো. মোজাম্মেল হক কাজী বলেন, বিষয়টি অবগত নই। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে।