
বগুড়ায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে অন্যতম হলো রথযাত্রা। এই রথযাত্রা দেখার জন্য ব্যাপক আনন্দ আর উৎসাহ নিয়ে বগুড়া সেউজগাড়ি ইস্কন মন্দিরের এসেছিলেন জেলার শিবগঞ্জ উপজেলা থেকে অলক কুমার দম্পতি। স্বামী অলক কুমারের হাত ধরে এসেছিলেন স্ত্রী সবিতা রানী আর বাড়ি ফিরলেন নিথর ঝলসানো মরদেহ নিয়ে। স্বামীর মৃত্যু কয়েক মিনিট আগেও ফেসবুকে লাইভে আনন্দ উল্লাস করেছিলেন সবিতা।
বগুড়া শহরের সেউজগাড়ি ঐতিহ্যবাহী শ্রী শ্রী জগন্নাথ ইস্কন মন্দিরের বর্ণাঢ্য রথযাত্রা দেখতে প্রতিবছরই জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে ভক্তরা এসে থাকেন। এবারো রোববার (৭ জুলাই) জেলার বিভিন্ন উপজেলার রথযাত্রার ভক্তরা এনেছিলেন। এরমধ্যে এসেছিলেন শিবগঞ্জ উপজেলার অলক কুমার দম্পতি। অলক কুমার আর সবিতা রানী নবদম্পতি।
সবিতার এই প্রথম সেউজগাড়িতে রথযাত্রা দেখতে আসা। তাই মন্দির থেকে দুইশ গজ দূরের বাস টার্মিনাল থেকে স্বামীর হাত ধরে অনেক আনন্দে হেঁটে এসেছিলেন। মন্দির প্রাঙ্গণে এসে দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে সব আয়োজন উপভোগ করেছেন। রথযাত্রা রেব হওয়ার কয়েক মিনিট আগে অলক কুমারের স্ত্রী সবিতা রানী তার ফেসবুকে লাইভে আনন্দ উল্লাস করেছেন। এরপর সবিতাকে পরিচিতজনদের সঙ্গে রেখে স্বামী অলক কুমার রথযাত্রার গম্বুজের কাছে অবস্থান নিয়ে বের হয়।
মন্দির থেকে একশগজ দূরে এগিয়ে যেতেই রাস্তার ওপর দিয়ে যাওয়া বিদ্যুতের হাই ভোল্টেজের তারের সঙ্গে রথযাত্রার গম্বুজ লেগে আগুন জ্বলে। এতে ঘটনাস্থলে শতাধিক ভক্তরা নিমিষেই ছিটকে রাস্তায় পড়ে যায়। এরমধ্যে কারো শরীর পুড়ে যায়, কারো সামান্য ঝলছে যায়। ঘটনাস্থলটি মুহূর্তেই নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। এ সময় অ্যাম্বুলেন্সে অর্ধ শতাধিক নারী-পুরুষ ও শিশুকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে তিন নারী ও দুই পুরুষ মারা যান। নিহতের মধ্যে ছিল শিবগঞ্জ উপজেলার অলক কুমার (৪০)। অলক কুমার উপজেলার কুলুপাড়ার মৃত নরেন্দ্র কুমারের ছেলে।
দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলে ও আশেপাশে স্বামী অলক কুমার অনেক খুঁজেছেন স্ত্রী সবিতা রানী। সেখানে না পেয়ে শহিদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান তিনি। সেখানে গিয়ে দেখেন হাসপাতালের তৃতীয় তলায় আইসিইউ রুম থেকে ট্রলি করে বের করা হচ্ছে ঝলসানো নিথর মরদেহ। সেই নিথর দেহটি অলক কুমারের বলে নিশ্চিত করে স্ত্রী সবিতার আহাজারি শুরু করেন। এ সময় আহাজারি করতে করতে বলেছিলেন, এসেছি স্বামীর হাত ধরে এখন তার মরদেহ নিয়ে কেমনে যাব বাড়িতে। এরপর রোববার রাতেই অ্যাম্বুলেন্সেযোগে জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার কুলুপাড়ায় নিহত অলক কুমারের মরদেহ পৌঁছানো হয়।
বগুড়া সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শুভাশিষ পোদ্দার লিটন জানান, নিহত পাঁচজনের মধ্যে অলক কুমারের বাড়ি জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায়। তার স্বজনেরা হাসপাতালের এসেছিলেন। তার মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সযোগে গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে।