নতুন এই সরকারের অংশ হতে চায় নির্বাচনে আসন জেতা সব দলই। এমনকি আওয়ামী লীগের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসনে জেতা জাতীয় পার্টিও (জাপা) বিরোধী দল হওয়ার চেয়ে সরকারে থাকতেই বেশি আগ্রহী। এ জন্য আওয়ামী লীগের সঙ্গে দর-কষাকষি করছে দলটি। গতকাল জাপার পক্ষ থেকে দলের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের এখনই শপথ না নেওয়ার যে তথ্য জানানো হয়, তা দর-কষাকষির অংশ ছিল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত রোববার দেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে ২৯৮ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২২২, জাপা ১১, ওয়ার্কার্স পার্টি ১, জাসদ ১, কল্যাণ পার্টি ১ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৬২টি আসনে বিজয়ী হন। এর মধ্যে জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টি দুটি আসন জিতেছে আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা নিয়ে। আর জাতীয় পার্টিও জিতেছে সমঝোতার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের ছেড়ে দেওয়া আসনে। তারপরও আওয়ামী লীগের পর সর্বোচ্চ আসন পাওয়া দল হিসেবে জাতীয় পার্টির বিরোধী দল হওয়ার কথা। কিন্তু দলটি শুধু বিরোধী দলে থাকতে চাইছে না এবার। আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, জাতীয় পার্টির একাধিক নেতা নতুন মন্ত্রিসভায় থাকার জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে তদবির করছেন।
বিএনপি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করায় সেবার জাপা নির্বাচন-পরবর্তী সরকারে যেমন ছিল, তেমনি সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকায়ও ছিল। ওই নজির টেনে এবারও সরকারে স্থান পেতে চাইছে দলটি। জাতীয় পার্টি সংসদের বিরোধী দলের পাশাপাশি সরকারের অংশ হতে চাইলেও আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে তাদের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।
বিরোধী দলে যাওয়া নিয়ে জাতীয় পার্টির এমন দর-কষাকষির কারণে সংসদে বিরোধী দল কারা হবে, তা নিয়েও ধোঁয়াশা থেকে গেছে। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক নেতা জানিয়েছেন, জাতীয় পার্টিকে সামনে রেখেই সবকিছু ভাবা হচ্ছে। জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র এমপিদের নিয়ে সংসদে একটি জোট করার সম্ভাবনা রয়েছে। সেটির মধ্য দিয়ে বিরোধী দলের আসনে কে বসবে, সেই সমাধানে আসা যাবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিরোধী দলের বিষয়টি সংবিধান ও সংসদের কার্যপ্রণালি বিধির সমন্বয়ে ঠিক হবে। যেটা বিধিসম্মত ও ভালো হয়, সেভাবে সংসদ নেতা ঠিক করবেন।
স্বতন্ত্রদের নিয়ে কী চিন্তা নির্বাচনে জেতা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে ৩ জন বাদে ৫৯ জনই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত; যাঁদের মধ্যে ১৫ জনই আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হিসেবে সংসদে ছিলেন। অন্যরা আওয়ামী লীগের জেলা, উপজেলা পর্যায়ের নেতা, দলীয় মনোনীত জনপ্রতিনিধি ছিলেন। শুরু থেকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত থাকায় তাঁরা এখন সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসতে চান না।
তবে স্বতন্ত্ররা আওয়ামী লীগের কেউ নয় বলে দাবি করেছেন বর্তমান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে তিনি বলেন, যাঁরা স্বতন্ত্র হিসেবে জয়ী হয়েছেন, তাঁরা যদি মনে করেন, তারা স্বতন্ত্র হিসেবে থাকবেন। তাহলে দেখা যাবে, কতজন স্বতন্ত্র হিসেবে থাকলেন। যদি দেখা যায়, তাঁরা একটা মোর্চা করবেন, তখন অবশ্যই বিরোধী দল কে হবে পরিষ্কার হয়ে যাবে। সে জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
অবশ্য বিরোধী দল নাকি সরকারে থাকবে, তা নিয়ে স্বতন্ত্রদের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন মত আছে। কুষ্টিয়া-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেছেন কামারুল আরেফিন। মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা আরেফিন বলেন, ‘আমি আমার নেত্রীর সঙ্গে আছি। আমি বঙ্গবন্ধুর সৈনিক, তাঁর আদর্শ নিয়ে চলব। জোট করে বিরোধী দল করার চিন্তা নেই।’
অন্যদিকে ফরিদপুর থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য এ কে আজাদ জানান, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা চাইলে তিনি বিরোধী দলের নেতা হতে রাজি। গতকাল ফরিদপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘অলরেডি আমাকে অনেক বিদেশি ফোন করেছে বলেছে যে আপনাকে নিয়ে চিন্তা করা হচ্ছে, আপনি বিরোধী দলের নেতা হতে রাজি আছেন কি না। আমি বলেছি, সবকিছুই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে, তাঁর আলোচনার বাইরে তো আমরা যেতে পারব না।’
স্বতন্ত্রভাবে বিজয়ী হয়ে বিরোধী দলের আসনে বসার বিষয়ে জানতে চাইলে হবিগঞ্জ-২ আসন থেকে নির্বাচিত স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কী হবে না হবে, তা শিওর না। আমরা আগে যাই, সব স্বতন্ত্র এক জায়গায় বসি, তারপর এ নিয়ে কথা বলা যাবে। তবে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে ব্যক্তিগতভাবে আমি প্রস্তুত।’
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |