আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজকে অপহরণ করে মোটা অংকের মুক্তিপণ আদায় করা হয়েছে বলে সিলেটের রাজনৈতিক অঙ্গণ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খবর ছড়িয়ে পড়েছে। অন্তত ২৫ লাখ টাকা দিয়ে প্রাণে বেঁচেছেন মিসবাহ সিরাজ। অপহরণকারীরা তাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত করে পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করেছে। গুরুতর আহত মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ সিলেটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে গ্রেপ্তার এড়াতে লাপাত্তা হয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে।
পুলিশও বলছে, ‘একাধিক মামলার আসামি মিসবাহ উদ্দিন সিরাজকে তারাও খুঁজছেন। তাকে অপহরণ করে মারধর ও মুক্তিপণ আদায়ের একটি ঘটনা বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়েছে, বিষয়টি পুলিশেরও নজরে এসেছে। তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন।’
জানা যায়, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকেই আত্মগোপনে ছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক তিন বারের সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। তার বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলার অভিযোগে একাধিক মামলা হয়েছে। গত শুক্রবার ভোর রাতে সিলেট নগরীর সাগরদিঘিরপাড় এলাকা থেকে মিসবাহ সিরাজকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে তিনি অপহৃত হন। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে গোপনীয়তা অবলম্বন করা হয়। অবশ্য সিলেট আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বিষয়টি ফেসবুকে প্রচার করেন। এরপর থেকে চলছে তোলপাড়।
শুক্রবার রাতে এক ফেসবুক পোস্টে সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী লিখেন- ‘আওয়ামী লীগের তিন বারের নির্বাচিত সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজকে হত্যার উদ্দেশ্যে ন্যাক্কারজনক হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। সিলেটের ইতিহাসে এই ঘটনা এক কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে। পুণ্যভূমি সিলেটে কোনো রাজনৈতিক দলের সিনিয়র নেতার ওপর কোনো কালেই এমন ঘৃণ্য কাপুরুষোচিত হামলার ঘটনা ঘটেনি। এই ঘটনার সাথে জড়িতদের বিচার ইনশাআল্লাহ এই সিলেটের মাটিতে সিলেটের মানুষকে সঙ্গে নিয়েই করা হবে।’
তিনি আরও লিখেন, ‘মিসবাহ ভাইকে গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাত ১২টায় সিএনজি অটোরিকশা থেকে অপহরণ করে নির্মম অত্যাচার নির্যাতন ও ছুরিকাঘাত করে পায়ের রগ কেটে রাস্তায় ফেলে রাখে সন্ত্রাসীরা। বর্তমানে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।’
মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের ওপর হামলার ঘটনা শুনেছেন জানিয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (গণমাধ্যম) সাইফুর ইসলাম বলেন,‘মিসবাহ উদ্দিন সিরাজকে অপহরণ, মারধর ও মুক্তিপণ আদায় করা হয়েছে হয়েছে বলে শুনেছি। কিন্তু বিস্তারিত কিছু জানি না। পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশকে কোন তথ্য জানানো হয়নি। তারা পুলিশকে এড়িয়ে চলছেন।’
শিবচরে পাওনা ৪০ টাকা নিয়ে সংঘর্ষে আহত ৭শিবচরে পাওনা ৪০ টাকা নিয়ে সংঘর্ষে আহত ৭
তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশ এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছে। যে এলাকায় ঘটনা ঘটেছে বলে শোনা যাচ্ছে সেখানকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। কারা এর সাথে জড়িত তা খোঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি নগরীর আল হারামাইন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন এই প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে বর্তামানে তার অবস্থান কোথায় তা জানা নেই। তার বিরুদ্ধে ৭টি মামলা রয়েছে।’
মিসবাহ সিরাজের স্বজনসহ একাধিকসূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ সিএনজি অটোরিকশাযোগে নগরীর সুবিদবাজারের মিয়া ফাজিলচিশত এলাকার একটি বাসায় যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে ওই এলাকার মাসালাবাজার নামক প্রতিষ্ঠানের সামনে পৌঁছামাত্র কয়েকটি মোটরসাইকেলে আসা দুর্বৃত্তরা তার অটোরিকশার গতিরোধ করে। অস্ত্রেরমুখে তাকে অন্য একটি অটোরিকশায় তুলে নিয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পর মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের মোবাইল ফোন থেকে তার স্ত্রী ও মেয়ের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করে অপহরণকারীরা। তারা এক কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পরে ২৫ লাখ টাকা দিয়ে বিষয়টির দফারফা হয়। রাত সাড়ে ৩টার দিকে মুক্তিপণের টাকা প্রদানের পর মিসবাহ উদ্দিন সিরাজকে রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় সাগরদিঘিরপাড় এলাকায়। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে নগরীর সোবহানীঘাট এলাকার আল হারামাইন হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। ভোররাত ৪টার দিকে ওই হাসপাতালে তার পায়ে অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে তিন ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়। শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে তিনি ওই হাসপাতাল থেকে অজ্ঞাত স্থানে চলে যান।
এ ব্যাপারে আল হারামাইন হাসপাতালের পরিচালক ডা. চৌধুরী নাহিয়ান বলেন, ‘ভোররাত ৪টার দিকে মিসবাহ উদ্দিন সিরাজকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এরপর তার পায়ে অস্ত্রোপচার করা হয়। যদিও স্বজনেরা বলেছেন তিনি দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন। অস্ত্রোপচারের পর স্বজনরা তাকে নিয়ে যান।’
এ বিষয়ে জানতে মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ ও তার স্ত্রীর মোবাইল ফোনে কল করে তা বন্ধ পাওয়া যায়। তবে মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের মেয়ে মুনতাহা আহমদ একটি গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘তার বাবা গুরুতর আহত। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় নেওয়া হয়েছে।’ মুক্তিপণের বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |