বাংলাদেশের অবকাঠামো প্রকল্প থেকে ৩ দশমিক ৯ বিলিয়ন পাউন্ড (৫৯ হাজার কোটি টাকা) আত্মসাতের অভিযোগের তদন্তে যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিকের নাম এসেছে। তাঁর পরিবার এই অর্থ আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক মিনিস্টার (ইকোনমিক সেক্রেটারি) টিউলিপ সিদ্দিক দেশটির আর্থিক খাতে দুর্নীতি বন্ধের দায়িত্বে আছেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি বাংলাদেশে বেশি অর্থ ব্যয়ে একটি নতুন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি করার ক্ষেত্রে ২০১৩ সালে মধ্যস্থতা করেছিলেন।
আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দেশটির দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যে তদন্ত করছে, তার আওতায় রয়েছে দুর্নীতির এই অভিযোগ। শেখ হাসিনা টিউলিপ সিদ্দিকের খালা।
টিউলিপ সিদ্দিকের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বলেছে, এগুলো মিথ্যা অভিযোগ। সূত্রটি আরও বলেছে, অভিযোগগুলো পুরোপুরি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁর খালার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট বলেছে, টিউলিপ সিদ্দিকের ওপর প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমারের আস্থা রয়েছে। তিনি তাঁর দায়িত্ব চালিয়ে যাবেন। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্র বলেছেন, অর্থ আত্মসাতের সম্পৃক্ততার যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তাতে কোনো ধরনের যুক্ততার কথা অস্বীকার করেছেন টিউলিপ সিদ্দিক।
দুদক এই তদন্ত করছে ববি হাজ্জাজের অভিযোগের ভিত্তিতে, যিনি শেখ হাসিনার বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরের নেতা।
বিবিসি জানতে পেরেছে, এই তদন্তের অংশ হিসেবে টিউলিপ সিদ্দিকের সঙ্গে দুদকের কোনো যোগাযোগ হয়নি।
দুদক শেখ হাসিনা পরিবারের আরও বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে। তাঁদের মধ্যে টিউলিপ সিদ্দিকের মা শেখ রেহানা সিদ্দিক এবং শেখ হাসিনা সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা রয়েছেন।
২০ বছরের বেশি বাংলাদেশের নেতৃত্বে থাকা শেখ হাসিনাকে দেখা হতো একজন একনায়ক হিসেবে, যাঁর সরকার নির্দয়ভাবে ভিন্নমতের ব্যক্তিদের দমন করত।
শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে বহু অপরাধের অভিযোগ এনেছে বাংলাদেশের নতুন সরকার। ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের’ অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিটি)। সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় এই অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল। ওই আন্দোলনে সহিংসতায় কয়েক শ ব্যক্তি নিহত হয়েছিলেন।
সাবেক সরকারের মন্ত্রীসহ আরও ৪৫ জনের বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। ওই সব মন্ত্রীও দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন।
শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য শাখার সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ফারুক এসব অভিযোগকে বানোয়াট বলেছেন।
টিউলিপ সিদ্দিক ২০১৫ সালের নির্বাচনে লন্ডনের হ্যাম্পস্টিড ও হাইগেট আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। তাঁর পাশের আসন হলবর্ন অ্যান্ড সেন্ট প্যানক্রাসের এমপি দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টার্মার।
বিবিসির দেখা আদালতের নথি অনুযায়ী, ববি হাজ্জাজ অভিযোগ করেছেন, টিউলিপ সিদ্দিক ১০ বিলিয়ন পাউন্ডের সমপরিমাণ অর্থে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণে মধ্যস্থতা এবং বাংলাদেশ ও রাশিয়ার সরকারি কর্মকর্তাদের বৈঠকের সমন্বয় করেছেন।
নথিতে অভিযোগ করা হয়েছে, চুক্তিতে এই প্রকল্পের ব্যয় ১ বিলিয়ন পাউন্ড বাড়ানো হয়েছে, যার ৩০ শতাংশ অর্থ টিউলিপ সিদ্দিক ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংক ও বিদেশি কোম্পানির মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে।
ববি হাজ্জাজের অভিযোগ, শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্য ও মন্ত্রীরা এই প্রকল্প থেকে মোট ৩ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার সরিয়েছেন।
এপির একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, ২০১৩ সালে ক্রেমলিনে শেখ হাসিনা ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের চুক্তি সই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন টিউলিপ সিদ্দিক।
সূত্রঃ প্রথম আলোর
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |