
সারাদেশ: আন্দোলনে আহতদের সেবা দেওয়ার জন্য আমি মেডিকেল টিমের লিড হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছি জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে। আমি এখানে বিনা বেতনে কাজ করছি।
গত সপ্তাহে আমাদের টিম থেকে কী কী করেছি, সেই আপডেট আপনাদের সাথে শেয়ার করবো, যাতে করে জবাবদিহিতা থাকে। সাথে অনুরোধ করবো: আন্দোলনে আহত হওয়ার পর প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাচ্ছে না এমন কাউকে চিনলে এই নম্বরে কল দিতে বলবেন: ১৬০০০।
আমি জানি যে আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা যেভাবে হওয়া উচিত ছিলো, অনেক ক্ষেত্রেই সেভাবে হয় নি। তবে দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি সকলের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে। আপনারা শুধু আহতদেরকে আমাদের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিন।
কাজের আপডেট: গত সপ্তাহে ৭৭ জন আমাদের কাছে চিকিৎসা সহায়তার জন্য এসেছিলেন। এর মধ্যে আমরা ৬৭ জনকে সেবা দিয়েছি।
এই সেবার মধ্যে ছিল:
১। চিকিৎসা পরামর্শ প্রদান
২। প্রয়োজন অনুযায়ী বিশেষায়িত হাসপাতালে (যেমন পিজি হাসপাতাল, সিএমএইচ) ভর্তির ব্যবস্থা করা
৩। হাসপাতালে ভর্তির পর রোগীদের সেবার মান নিশ্চিত করার জন্য ফলো-আপ এবং অভিযোগ থাকলে তা সমাধানের চেষ্টা
গুরুতর রোগীদের ক্ষেত্রে: যে ৭৭ জন যোগাযোগ করেছিলেন তাদের মধ্যে ৮ জনের অবস্থা এমন ছিলো যে হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া প্রয়োজন।
আমরা তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন হাসপাতালের সাথে কাজ করছি: – ৩ জনের সিএমএইচ ট্রমা ম্যানেজমেন্ট সেন্টারে, ২ জনের বিএসএমএমইউ (পিজি হাসপাতাল) এবং ১ জনের ইস্পাহানি ইসলামিয়া আই ইনস্টিটিউটে চিকিৎসার গ্রহণের ব্যবস্থা করেছি। এসব ক্ষেত্রে আমরা আগে থেকে হাসপাতালের সাথে কথা বলি যাতে তারা রোগীর জন্য রেডি থাকে। রোগীর সাথে যোগাযোগ রাখি যাতে তারা কোন অসুবিধার সম্মুখীন হলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারি।
– ১ জন রোগী অর্থোপেডিক্সে ঢাকার বাইরে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ চেয়েছিলেন। তার জন্য আমরা একজন বিশেষজ্ঞের কাছে অ্যাপয়েন্টমেন্টের ব্যবস্থা করেছি। এটা করার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের রেসিডেন্ট সার্জন আন্তরিকতার সাথে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।
– ১ জনের মিটফোর্ড হাসপাতালের আইসিইউ-তে ভর্তি করার ব্যবস্থা করেছি ও তার চিকিৎসার ব্যপারে সার্বক্ষণিক সহায়তা দেয়ার চেষ্টা করেছি।
বিদেশে চিকিৎসা: আমাদের কাছে ২জন রোগী এসেছেন যাদের বিদেশে যাওয়ার রেফারেল লেটার আছে হাসপাতাল থেকে, কিন্তু বিদেশে যাওয়ার কোন ব্যবস্থা হয় নি। আমরা এই দুইজন রোগীকে বিদেশে পাঠানোর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য মিনিস্ট্রির সাথে যোগাযোগ করেছি। মিনিস্ট্রির কাছে রোগীর সকল প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট গুছিয়ে সাবমিট করেছি। আগের সপ্তাহেও ২জন রোগীর বিদেশে যাওয়ার জন্য কাগজপত্র রেডি করে সাবমিট করেছিলাম। মিনিস্ট্রির কাছ থেকে নিয়মিত আপডেট নিচ্ছি এই ৪ জন রোগীর বিদেশে পাঠানোর বর্তমান অবস্থা কী এবং রোগীকে সে বিষয় অবহিত করে রাখছি। এছাড়া একজন রোগী এসেছেন যিনি চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে চান। তাকে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে অ্যাপয়েন্টমেন্টের ব্যবস্থা করেছি। পরীক্ষা নিরীক্ষার পর সেখান থেকে যে ফলাফল আসবে আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
বিদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে যে কাজগুলো করে আমরা সাহায্য করার চেষ্টা করি: রোগীর জন্য বিদেশে কোন হাসপাতাল সবচেয়ে ভালো হবে, কোন ডাক্তারের কাছে গেলে ভালো হবে, সেটা বিভিন্ন দেশের এক্সপার্টদের সাথে কথা বলে খুঁজে বের করি। যেমন আমরা থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মিশর, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের ডাক্তারদের সাথে কথা বলেছি ও পরামর্শ নিয়েছি। এসব পরামর্শ নেয়ার পর যে হাসপাতাল বা ডাক্তার সবচেয়ে ভালো হবে তাদের সাথে যোগাযোগ করে রোগীর সম্পর্কে বিস্তারিত জানাই। তাদের কাছ থেকে ট্রিটমেন্ট প্লান ও অনুমানিক খরচ সংগ্রহ করতে কাজ করি।
মানসিক স্বাস্থ্য সেবা: আন্দোলনে আহত অনেকেই মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। যেমন ডিপ্রেশন, পিটিএসডি, প্যানিক ডিজঅর্ডার, ইত্যাদি। আমরা ৪৯ জন রোগীর প্রাথমিক মানসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করেছি। ১১ জন রোগীর দীর্ঘমেয়াদি কাউন্সেলিং প্রয়োজন ছিল। তাদের সেবা নিশ্চিত করার জন্য আমরা জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (NIMH) এবং সাজিদা ফাউন্ডেশনের সঙ্গে কাজ করে প্রয়োজনীয় সেবা নিশ্চিত করেছি।
আর্থিক সহায়তা: ৫ জন জরুরি আর্থিক সহায়তা চেয়ে যোগাযোগ করেছিলেন। তাদের দ্রুত সহায়তা নিশ্চিত করতে ফাউন্ডেশনের ভেরিফিকেশন এবং ফাইনান্স টিমের সঙ্গে কাজ করছি।
যোগাযোগের সমস্যা: যে ১০ জন রোগীর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি (ফোন ধরেননি, কল কেটেছেন, বা ফোন বন্ধ ছিল), আমরা তাদের সাথে আবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করব।
অন্য কাজ: চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছি। বর্তমানে সমস্ত ডকুমেন্টেশন গুগল শিটের মাধ্যমে করা হচ্ছে। এই কাজটা এফিশিয়েন্টলি করতে আমাদের একটা সফটওয়ার তৈরি করা প্রয়োজন, যেখানে রোগীর সাথে প্রতিটি কথোপকথন নোট করা থাকবে। কোথায় কোন রোগীর সেবা দিতে দেরি হচ্ছে, কার টেবিলে যেয়ে কাজ আটকে থাকছে, সেটা দ্রুত বের করতে পারবো। এতে জবাবদিহিতা বাড়বে ও কাজে আরও গতিশীলতা আসবে। এই সফটওয়্যার তৈরি করতে আমি একটি প্রোডাক্ট রিকোয়ারমেন্ট ডকুমেন্ট (PRD) তৈরি করেছি এবং টেক টিমকে সেটা বুঝিয়ে দিয়েছি। সফটওয়্যারটি তৈরি হলে আমাদের কার্যক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পাবে।
আমাদের টিমটা খুব ছোট, তবে আমরা চেষ্টা করছি যত দ্রুত ও যত ভালভাবে সম্ভব আমাদের কাছে যারা আসছেন সকলের সুচিকিৎসা ও সেবা দিতে। কোনো দিনই আমাদের কাজ বিকাল ৬টায় শেষ হয় না। রাত ১২টা-১টাও বেজে যায়। ছুটির দিনেও আমরা কাজ করি।
আবারও অনুরোধ করছি, আপনার পরিচিত কোন আহত ব্যাক্তির চিকিৎসা সংক্রান্ত কোন সহায়তা লাগলে আমাদের জানাবেন। ১৬০০০ নম্বরে কল দিয়ে। আমরা সবসময় আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে প্রস্তুত আছি; আপনারা শুধু আমাদের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিন।