প্রচ্ছদ আন্তর্জাতিক রহস্যজনক ‘এইচএমপিভি’ ভাইরাসে কি অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে? যা বললেন চিকিৎসক

রহস্যজনক ‘এইচএমপিভি’ ভাইরাসে কি অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে? যা বললেন চিকিৎসক

করোনাভাইরাসের মহামারির ভয়াবহতার পর শনাক্ত হয়েছে হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি)। এর আতঙ্কে উদ্বিগ্ন বিশ্ববাসী। কীভাবে এই সংক্রমণের শুরু হলো, এর প্রতিরোধে করণীয় কী―এমন নানা প্রশ্ন সবার। এ অবস্থায় অনেকেই অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের কথা বলছেন।

সাধারণত মাথাব্যথা, পেটব্যথা, জ্বর কিংবা অন্যান্য কোনো সমস্যায় অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে থাকেন মানুষ। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এইচএমপিভির ক্ষেত্রে কি অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করতে পারে? সম্প্রতি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এইচএমপিভির বিরুদ্ধে অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকরী নয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অ্যান্টিবায়োটিক মূলত ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য তৈরি করা হয়েছে, কোনো ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য নয়। এইচএমপিভি হচ্ছে একটি শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাস, যা প্রাথমিকভাবে ফুসফুস ও শ্বাসনালীকে প্রভাবিত করে। যা প্যারামাইক্সোভাইরাস পরিবারের অন্তর্গত এবং শ্বাসতন্ত্রের সিনসিটিয়াল ভাইরাসের (আরএসভি) সঙ্গে মিল রয়েছে। এটি সাধারণ ভাইরাস এবং যা তরুণ থেকে বৃদ্ধ, সব বয়সের মানুষকেই সংক্রমিত করতে পারে।

অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার মূল সেলুলার ফাংশন ব্যাহত করে যেমন, প্রোটিন উৎপাদন বা ডিএনএ প্রতিলিপির মতো ব্যাকটেরিয়ার মূল সেলুলার ফাংশনগুলো ব্যাহত করে এবং মানব কোষের ক্ষতি না করে তাদের হত্যা করে।

এইচএমপিভিসহ ভাইরাসগুলো গঠন ও কার্যকারিতার ক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়া থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে আলাদা। যা অনেক ছোট এবং কোষ প্রাচীর, রাইবোজোম বা সাইটোপ্লাজমের মতো সেলুলার কাঠামোর অভাব রয়েছে। বিপরীতে ভাইরাস একটি প্রোটিন আবরণে আবদ্ধ জেনেটিক উপাদান নিয়ে গঠিত।

ভাইরাসগুলোয় যেহেতু অ্যান্টিবায়োটিকগুলো লক্ষ্য করে এমন উপাদান নেই যেমন, কোষ প্রাচীর বা রাইবোজোম, এ জন্য অ্যান্টিবায়োটিকগুলো তাদের বিরুদ্ধে কাজ করে না। অর্থাৎ, এইচএমপিভিসহ ভাইরাল সংক্রমণের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক উপশম করবে না বা কাজ করবে না।

ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ না থাকার পরও যদি কেউ অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করে, তাহলে কী হয়? এ প্রশ্নও স্বাভাবিক। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক নিলে শরীরকে নির্দিষ্ট অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী করে তোলে। এমনকি ভবিষ্যতে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের চিকিৎসা করা শরীরের পক্ষে কঠিন হয়ে যায়। অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের জন্য বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া ও অ্যালার্জির মতো সমস্যাও হতে পারে।

এইচএমপিভির লক্ষণ: এটি হচ্ছে শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাস, যা প্রাথমিকভাবে উপর ও নিম্ন শ্বাসতন্ত্রকে প্রভাবিত করে। ২০০১ সালে শনাক্ত এই সংক্রমণ তখন থেকে বিশ্বজুড়ে শ্বাসতন্ত্রের অসুস্থতার জন্য স্বীকৃত। কোনো ব্যক্তি এই ভাইরাসে সংক্রমিত হলে শ্বাসতন্ত্রের ছিদ্রের মাধ্যমে তা ছড়িয়ে পড়ে।

ফরিদাবাদের ফোর্টিস এসকোর্টস হাসপাতালের ডিরেকটর ও এইচওডি ড. রবি শেখর ঝাঁ বলেন, এইচএমপিভি সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে দূষিত বিষয়গুলো শীত ও বসন্তের শুরুতে অন্যান্য শ্বাসতন্ত্রের ভাইরাসের মতোই বিস্তার করে। এছাড়া অন্যান্য লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে কাশি, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, গলাব্যথা, জ্বর হওয়া ইত্যাদি। কেউ কেউ আবার হালকা ঠান্ডার মতো অনুভব করেন। এই ভাইরাস গুরুতর শ্বাসতন্ত্রের অসুস্থতা যেমন ব্রঙ্কিওলাইটিস ও নিউমোনিয়া হতে পারে। বিশেষ করে অল্পবয়সী শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে।

সূত্র : চ্যানেল ২৪