
হেড লাইন: রাজধানীর পুরান ঢাকার একটি মেস থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাবরিনা রহমান শাম্মীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ স্বজনেরা। একই সঙ্গে শোকের ছায়া নেমে এসেছে নিজ জেলা যশোরের চৌগাছার নারায়ণপুর গ্রাম। তার বাবার নাম জাহিদুর রহমান। তিনি যশোরের কেশবপুর উপজেলার একটি ইউনিয়নের ভূমি কর্মকর্তা। মেয়ের দুঃসংবাদ শুনে শাম্মীর বাবা জাহিদুর রহমানসহ পরিবারের সবাই রোববার (২৬ জানুয়ারি) সকালে ঢাকায় ছুটে যান। বিকেল পর্যন্ত বাড়িতে ফেরেননি তারা। ফলে বাড়িতে গিয়ে পাওয়া যায়নি কাউকে। তবে কয়েকজন প্রতিবেশী জানান, শাম্মীরা দুই বোন। শাম্মীর বয়স যখন সাত তখন তার মা শাম্মী ও তার চার বছরের আরেক ছোট বোনকে রেখে অন্যত্র বিয়ে করেন। এর কিছুদিন পর তার মা দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে পারিবারিক কলহে সেখানে আত্মহত্যা করে। ছোট বেলা থেকে মা হারানো বলেই অনেক আদরের ছিলো শাম্মী। ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছিলেন শাম্মী।
স্থানীয় নামকরা স্কুল ও কলেজ থেকে সাফল্যের সঙ্গে পাস করে ভর্তি হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভর্তি হয়ে সেখানেই একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি বিসিএস পরীক্ষারও প্রস্তুতিও নিচ্ছিলো। আব্দুল মালেক নামে এক প্রতিবেশী বলেন, চলতি বছরের প্রথম সপ্তাহে দিকে কয়েকদিনের জন্য গ্রামেও এসেছিলো শাম্মী। তখন সে বলেছিলো এ মাসের শেষের দিকে আবার বাড়িতে আসবেন। এলো ঠিকই; কিন্তু জীবিত ফিরতে পারলো না। শাম্মীর বাবা জাহিদুর রহমান যশোরের কেশবপুর উপজেলার একটি ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ছোট বেলা থেকেই মেধাবী ছিলো শাম্মী। তার স্বপ্ন ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। নিজে না পড়তে পারলেও সেই স্বপ্নটা দেখতে থাকেন ছোট বোনকে ঘিরে। তাই কয়েক মাস আগে ছোট বোনকে ঢাকার ফার্মগেট এলাকার একটি কোচিং সেন্টারে নিয়ে যায়। তার পছন্দের কোচিং সেন্টারে ভর্তি করে ও পাশে একটি মেসে রেখে আসে। শনিবার ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা। সেখানে অংশ নেয় তার ছোট বোন। এরপর তারা দুইবোন ঘুরাঘুরি করে ছোটবোনের বাসাতে রেখে আসে। এরপর সন্ধ্যায় শাম্মীর মেসে ফিরে। তখন তার সঙ্গে শেষ কথা হয়। সে আমাকে কিছু টাকা দিতে বলে; আমি তার চাহিদা অনুযায়ী কিছু টাকাও পাঠায়। শেষ কথা বলার সময়ও শাম্মীর কথাবার্তার ভিতর কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করিনি। রোববার সকালে আমার এক ভাই আমাকে জানালো শাম্মী আর নেই।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, বাবা হলেও শাম্মীর সঙ্গে মিশতাম বন্ধুর মতো। ওর স্বপ্ন ছিলো বিসিএস ক্যাডার হয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হওয়ার। কিন্তু হঠাৎ কি হলো! আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হলো? সব স্বপ্নই ভেঙে চুরমার করে দিলো। সবসময় উচ্ছ্বাস-আনন্দে মেতে থাকা মেয়েটা কেন এমন করলো! তিনি বলেন, গেল বার বাড়িতে এসে বলেছিলো এই সপ্তাহে আবার বাড়ি ফিরবে, বাড়ি সে ফিরলো; তবে লাশ হয়ে। কোনো ছেলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিলো কিনা এমন কোনো প্রশ্নের উত্তর দেননি তিনি। স্থানীয় কয়েকজন জানান, বুয়েটের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে শাম্মীর প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। প্রেমের অবনিত হওয়াতে আত্মহত্যা করেছে বলে শুনেছি। শাম্মীর প্রতিবেশী রনি মৃধা বলেন, ছোট বেলা থেকেই শাম্মি মেধাবী ছিলো। এলাকায় তাকে দিয়েই আমরা উদাহরণ দিতাম। তার এই অকাল মৃত্যুতে এলাকায় শোকে ছায়া নেমে এসেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তাজাম্মুল হক বলেন, মৃত্যুর খবর পেয়ে আমরা মিডফোর্ড হাসপাতালে যাই। প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি প্রেম-ঘটিত কারণে মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে। কারণ পুলিশ জানিয়েছে, ফাঁস দেয়ার সময় প্রেমিককে কলে রেখে আত্মহত্যা করেছে এই শিক্ষার্থী। প্রসঙ্গত, ২০২২ সালে শাম্মী ঢাকার কাঠেরপুলের তনুগঞ্জ লেনের একটি ছাত্রী মেসে উঠেন। তিনি ওই মেসের একটি কক্ষে একাই থাকতেন। রোববার ভোর সাড়ে চারটার দিকে স্থানীয়দের খবরে ঘটনাস্থলে গিয়ে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে সূত্রাপুর থানার পুলিশ। রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে ময়নাতদন্ত শেষে রাতে চৌগাছাতে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।