প্রচ্ছদ জাতীয় শেখ হাসিনার বিচার না হওয়া পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যাব, থামব না

শেখ হাসিনার বিচার না হওয়া পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যাব, থামব না

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব হলো জুলাই মাসে গণঅভ্যুত্থানের সময় যারা বিক্ষোভকারীদের হত্যা করেছিল তাদের বিচার করা। আমাদের কাজ হলো কসাই শেখ হাসিনাকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য তার বিচার করা।

তিনি বলেন, যারা মনে করেন আমি রাজনীতি নিয়ে কিংবা আওয়ামী লীগ ও এর হত্যাকাণ্ড এবং বিশাল চুরি সম্পর্কে খুব বেশি বেশি কথা বলছি তারা আওয়ামী লীগের প্রতি দয়াশীল গ্রুপ। আমরা জানি আপনারা এত বছর কী করেছেন। আমি আমার দায়িত্বের শেষদিন পর্যন্ত এ কাজ চালিয়ে যাব, থামব না। আমি জানি আমি কী করছি। আমার কাজের পরিণতিও আমি মেনে নিতে প্রস্তুত।

রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) রাতে ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলে একটি স্ট্যাটাস দেন তিনি। সেখানে শফিকুল আলম বলেন, শনিবার একুশে বইমেলা নিয়ে আমার ফেসবুক পোস্ট ঘিরে অনেক হইচই হয়েছে। এ বিষয়ে আমার স্পষ্ট বক্তব্য দেওয়া উচিত বলে মনে করছি।

১. অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কেবল তার অংশীদারদের প্রতি নিরপেক্ষ। শিক্ষার্থী এবং সেসব রাজনৈতিক দল যারা শুধু জুলাই অভ্যুত্থান নয়, বরং বছরের পর বছর ধরে আমাদের চুরি করা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ভূমিকা পালন করেছে আমরা সরকারে তাদের অংশীদার বলে মনে করি।

২. দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে নৃশংস একনায়কতন্ত্র চাপিয়ে দেওয়া, মানবতাবিরোধী গুরুতর অপরাধ এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠন করা দলের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অবস্থান দৃঢ় ও অনমনীয়, যা হওয়াই স্বাভাবিক।

৩. অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব হলো জুলাই মাসে গণঅভ্যুত্থানের সময় যারা বিক্ষোভকারীদের হত্যা করেছিল তাদের বিচার করা। আমাদের কাজ হলো কসাই শেখ হাসিনাকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য তার বিচার করা।

৪. গণহত্যা, হাজার হাজার বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, হাজার হাজার বলপূর্বক গুম এবং কয়েকশ বিলিয়ন ডলার লুটপাটের অপরাধে আওয়ামী লীগ, এর সমর্থক, দলটির প্রতি দয়াশীল এবং এর দালালদের জবাবদিহি করতে হবে। এ ব্যাপারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বদ্ধপরিকর। আমাদের ম্যান্ডেট হলো এসব অপরাধের বিচার করা।

৫. প্রধান উপদেষ্টার মুখপাত্র হিসেবে যখন আমরা কথা বলি আমরা সাধারণত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অগ্রগতি এবং অর্জন সম্পর্কে আপডেট দিই। আমরা শেখ হাসিনার অপরাধ এবং তার তৈরি ও তত্ত্বাবধানে পরিচালিত চোরতন্ত্র ও খুনতন্ত্র সম্পর্কেও বিস্তারিত আলোচনা করি, যাতে সেগুলো মানুষের মনে স্পষ্ট থাকে।

৬. যারা মনে করেন আমি রাজনীতি নিয়ে কিংবা আওয়ামী লীগ ও এর হত্যাকাণ্ড এবং বিশাল চুরি সম্পর্কে খুব বেশি বেশি কথা বলছি তারা আওয়ামী লীগের প্রতি দয়াশীল গ্রুপ। আমরা জানি আপনারা এত বছর কী করেছেন। আমি আমার দায়িত্বের শেষদিন পর্যন্ত এ কাজ চালিয়ে যাব, থামব না।

৭. রুচির সংজ্ঞা কী? সুরুচি নির্ধারণ করে কে? শালীনতার সংজ্ঞা কী? কার কাছে আমাদের শালীনতা প্রদর্শন করা উচিত? এগুলো গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। শেখ হাসিনা বিশ্বের সবচেয়ে নিষ্ঠুর এবং দুর্নীতিগ্রস্ত স্বৈরশাসকদের একজন। আমি আমাদের জনগণকে বারবার মনে করিয়ে দিতে দ্বিধা করি না যে তিনি একজন খুনি এবং গুম জননী ছিলেন! এটি একটি নৈতিক অবস্থান। তাছাড়া আমরা যদি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, তাহলে আমাদের অবশ্যই হাসিনার বিরুদ্ধে কথা বলতে সক্ষম হতে হবে– গণতন্ত্রে আমরা যে ব্যক্তি স্বাধীনতার কথা বলি, এটিই বাকস্বাধীনতা।

৮. আমার ইতিহাস সম্পর্কে ভালোভাবে জানা আছে। আমি খুব ভালো করেই জানি যে কীভাবে সম্মিলিতভাবে আমাদের স্মৃতি বিভ্রাট ঘটছে। কীভাবে আমরা আমাদের ইতিহাসের কিছু মারাত্মক ভয়াবহতা ভুলে গেছি। বিজয়ীরা আমাদের ইতিহাস লিখেছেন, কিছু বিতর্কিত ব্যক্তিত্বকে আমাদের নায়ক বানিয়েছেন। আমরা এটি ঘটতে দেব না। আমরা একজন সোশিওপ্যাথকে সোশিওপ্যাথ বলব, আমরা একজন গণহত্যাকারীকে গণহত্যাকারী বলব।

৯. গণঅভ্যুত্থানের ছয় মাস পার হলেও আওয়ামী লীগ এখনো ডিনায়ালে আছে, এখনো তাদের কৃতকর্ম অস্বীকার করছে। দলটির সমর্থক, নেতা, আওয়ামীপন্থি সাংবাদিক, এর বিদেশি সমর্থক এবং পৃষ্ঠপোষকরাও ডিনায়ালে আছে। তারা একটি বিকৃত ইতিহাস তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছে। তাদের বয়ানে, তারাই ভুক্তভোগী আর পুলিশের কোনো দায় নেই।

১০. সাংবাদিকতার ভাষায়, তারা একটি ন্যারেটিভ তৈরি করতে চাইছে যে এই অভ্যুত্থান কেবল একটি ইসলামপন্থি দখল ছাড়া আর কিছুই ছিল না। এটি ‘ওয়ার অন টেরর’ এর ন্যারেটিভ, যা আওয়ামী লীগ ২০০৭ সাল থেকে ব্যবহার করে আসছে। আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করলেই তাকে ইসলামী মৌলবাদী হিসেবে চিহ্নিত করাটাই হলো এর মূলমন্ত্র। আওয়ামী লীগ বিদেশে বসে লাখ লাখ টাকা ঢালছে এবং এ ন্যারেটিভ তৈরির জন্য কিছু শীর্ষ ভারতীয় মিডিয়াকে সঙ্গী হিসেবে খুঁজে পেয়েছে।

১১. এটা একটা বিপজ্জনক খেলা। যদি তারা সফল হয়, তাহলে তারা আমাদের যে কাউকে হত্যা করার লাইসেন্স পাবে এবং বিশ্ব বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চোখ বন্ধ করে থাকবে। আমাদের কাজ হলো যেকোনো মূল্যে আওয়ামী লীগের এই বিলিয়ন ডলারের প্রকল্পকে ব্যর্থ করা। আমাদের যেকোনো উপায়ে লড়াই করতে হবে। অন্যথায় আমাদের সঙ্গে এমন আচরণ করা হবে যেমনটা সারা দেশের জেনেভা ক্যাম্পে উর্দুভাষী মানুষদের সঙ্গে করা হয়েছিল।

১২. আমার সমস্ত আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু যারা আওয়ামী লীগের ট্রল বাহিনীর টার্গেটে পরিণত হয়েছেন, আমি আপনাদের কাছে গভীরভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। আমি আমার আরামদায়ক, লাভজনক চাকরি ছেড়ে এসেছি শুধু অন্তর্বর্তী সরকারে একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করব বলে। আমি দুঃখিত যে আমার শেয়ার করা ছবির জন্য আওয়ামী লীগের ট্রল বাহিনী আপনাদের টার্গেট করেছে। আপনারা আমাকে আনফ্রেন্ড করতে পারেন, সবচেয়ে ভালো হয় যদি ব্লক করেন।

একইসঙ্গে আপনাদের ধৈর্যের জন্য ধন্যবাদ। আমি জানি আমি কী করছি। আমার কাজের পরিণতিও আমি মেনে নিতে প্রস্তুত।

সূত্র: ঢাকা পোস্ট

প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে।