আর কখনও হাসবে না জয়নব খাতুন। তার হাসিমুখ দেখবে না সহপাঠী ও প্রতিবেশীরা। স্বপ্ন ভেঙে গেছে পরিবারের। অসচ্ছল পরিবারের সন্তান জয়নব। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিদ্যা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। ভ্রমণ করা ছিল প্রথম শখ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভ্রমণপিপাসুদের সংগঠন ভ্রমণকন্যা’য় জড়ান তিনি। মাঝেমধ্যে ভ্রমণেও যেতো। কে জানতো এটিই হবে শেষ ভ্রমণ। পড়ার পাশাপাশি ট্যুরিস্ট সাইটে কাজ করতেন বলে জানা গেছে তার বন্ধুদের মাধ্যমে।
কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলা শহরের মন্ডলপাড়ার আব্দুল জলিল মিয়ার তিন সন্তানের সবার ছোট জয়নব। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন মেধাবী। রৌমারী সি.জি জামান হাইস্কুল থেকে এসএসসি এবং রৌমারী সরকারি ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসিতে ভালো ফল করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ করে নেন তিনি
সেসময় সুযোগ পেলেও পরিবার থেকে ভর্তির খরচ বহন করার সাধ্য ছিল না। পরে ওই এলাকার বিভিন্ন চাকরিজীবীরা জয়নবের ভর্তির ব্যবস্থা করে দেন। তার বন্ধু ও প্রতিবেশীদের কাছ থেকে এমনটাই জানা গেছে।
ব্যক্তিজীবনে খুব সহজ-সরল ও মিশুক ছিলেন জয়নব। তার বন্ধু সাবিফ জানান, জয়নব একজন অন্যরকমের বন্ধু। সে খুব মিশুক ছিল। সবসময় মুখে হাসি থাকতো তার। ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে গেলে যেখানে থাকুক চলে আসতো, দেখা করতো। শুধু পরিবার নয় তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতো পুরো এলাকা। ওর এভাবে চলে যাওয়াটা মানতে পারছি না।
প্রতিবেশী ও বন্ধু এলাহী শাহরিয়ার নাজিম বলেন, আমাদের পাশাপাশি জয়নবের বাড়ি। সম্পর্কে ভাতিজী হয়। অসচ্ছল ফ্যামিলি থেকে কোনো প্রকার কোচিং, টিউশনি ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায় সে। পড়ার পাশাপাশি টিউশনি করতো। বাড়ি থেকে টাকা নিতো না। তার মৃত্যুর খবরটা আমাদের খুব কষ্ট দিচ্ছে।
মুঠোফোনে কথা হলে জয়নবের ফুফু আলমিনা বেগম জানান, জয়নবের ভাই বাবু মরদেহ আনতে ঢাকায় গেছে । তারা দুই বোন ও এক ভাই। ছোট থেকে পড়ায় মনোযোগ ছিল জয়নবের। প্রতিবেশীরা জানান, বাবা ছোট ফার্নিচার ব্যবসায়ী। মেয়েকে উৎসাহ ও সাহস দিতেন। মেয়ের মৃত্যুর খবরে তিনি বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন মা জুলেখা বেগম।
স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সকালে ৫৮ জন ভ্রমণকন্যার একটি দল ৫টি জিপ গাড়ি করে রুমা উপজেলায় যায়। ঘোরাফেরা শেষে শনিবার (২০ জানুয়ারি) দুপুরে বান্দরবানের উপজেলার পর্যটন কেন্দ্র কেওক্রাডাং থেকে বান্দরবান সদর ফেরার পথে বগালেক-কেওক্রাডাং সড়কের দার্জিলিং পাড়া এলাকায় তাদের বহন করা গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে। তাতে ঘটনাস্থলে মারা যায় জয়নবসহ দু’জন। আহত ৮ জন পর্যটককে উদ্ধার করে নেয়া হয় রুমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
শনিবার বিকেলে জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জয়নবের মরদেহ বান্দরবান থেকে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেছেন। তার স্বজনরা ঢাকায় গেছেন। মরদেহ দাফনের প্রস্তুতি নিচ্ছে জয়নবের পরিবার ও প্রতিবেশীরা।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |