
রক্তে রাঙা জুলাইয়ের পর হাজির হয় ভয়াবহ আগস্ট। নির্বিচার গুলি, টিয়ার শেলের ঝাঁঝালো ধোঁয়া, আওয়ামী লীগের পেটুয়া বাহিনীর জঘন্য নির্যাতন—সব কিছু উপেক্ষা করে রাজপথে দাঁড়িয়ে ছিল মানুষ, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে। দল-মত, ধর্ম, শত্রু-মিত্রের ব্যবধান ভুলে এক কাতারে তারা সবাই ছিল একমাত্র এক দাবিতে।
কোনো প্রশ্ন ছিল না, কার গায়ের রং কী, কে দেখতে কেমন—কিছুই আটকায়নি। সবাই এক কাতারে, এক দাবি। সেই দাবি ছিল স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতন। শহীদ মিনার থেকে ঘোষণা এল, “আর কোন দাবি নয়, এবার কেবল একটাই—হাসিনাকে যেতে হবে।” রক্তের উপর দাঁড়িয়ে, কোনো আপোষ নয়, এমনটাই ছিল জনগণের প্রত্যাশা।
তবে অবস্থা গুরুতর, জনবারুদের বিস্ফোরণের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে গেল। 17 বছর ধরে হাসিনার প্রতিরক্ষা দেয়াল ভেঙে গেল। গণভবন থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হলেন তিনি। সেই গণভবন, যা ছিল তাঁর শখের প্রতীক এবং অহংকারের আদর্শ—যেখানে গুম, খুন, নির্যাতন এবং নিপীড়নের সব আদেশ আসত।
তবে জনতার তোপে, দুপুরে হেলিকপ্টারে পালানোর পালা হলো। নির্বাসনে যেতে হলো হাসিনাকে। তাঁর দীর্ঘদিনের মিত্র নরেন্দ্র মোদির আশ্রয়েই এখন তাঁর শেষ ভরসা। ভারত, বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। কিন্তু ভারত সে ক্ষেত্রে কিছুই পায়নি।
দিল্লি এখন বুঝে গেছে, হাসিনার ফেরার কোনো সম্ভাবনা আর নেই। বাংলাদেশের ক্ষমতায় তার ফেরার পথ বন্ধ হয়ে গেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক রিপোর্ট হাসিনাকে আরও বড় অপরাধী হিসেবে তুলে ধরেছে। ফলে তার পক্ষে থাকা এখন ভারতের জন্য কোনো সুবিধার নয়।
এদিকে, ভারত সরকার বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে একটি পরিবর্তিত অবস্থান গ্রহণ করেছে। দিল্লির দাবি, “বাংলাদেশের সঙ্গে সকল অমীমাংশিত বিষয়ে সমাধান করার জন্য গণতন্ত্রই একমাত্র উপায়।” এর জন্য নতুন দিল্লি সমন্বিত এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছে।
শুক্রবার, নয়া দিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ভারত একটি স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও প্রগতিশীল বাংলাদেশের পক্ষে। যেখানে সব অমীমাংশিত বিষয় গণতান্ত্রিক উপায়ে এবং উন্নীত ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে সমাধান হবে।
এছাড়া, বাংলাদেশ এবং ভারতের যৌথ নদী কমিশনের কর্মকর্তারা কলকাতায় ৮৬ তম বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে গত ৩০ বছর ধরে গঙ্গা নদীর পানি বন্টন নিয়ে সুবিধা ও অসুবিধার বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আগামী বছর এই চুক্তি নবায়নের কথা রয়েছে।
জয়সওয়াল আরও বলেন, দুই দেশের প্রতিনিধি দল গঙ্গার পানি বন্টন চুক্তি, পারিপ্রবাহ পরিমাণ এবং অন্যান্য প্রযুক্তিগত বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন।
এভাবে ভারতের অবস্থান পরিবর্তন করলেই পরিষ্কার হয়ে গেল—হাসিনার দেশে ফেরার পথ বন্ধ হয়ে গেছে, আর ভারতও এখন এই ব্যাপারে কোনো তৎপরতা দেখাচ্ছে না। জাতিসংঘের রিপোর্ট আন্তর্জাতিকভাবে হাসিনাকে বড় অপরাধী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে, যা এখন ভারতের জন্য আর সুবিধাজনক নয়।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |