প্রচ্ছদ অপরাধ সেই রাতে কী ঘটেছিল, এবার মুখ খুললেন মুরাদনগরের সেই নারী

সেই রাতে কী ঘটেছিল, এবার মুখ খুললেন মুরাদনগরের সেই নারী

কুমিল্লার মুরাদনগরে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলা তুলে নিতে চাচ্ছেন নির্যাতনের শিকার সেই নারী। তিনি পরিবারের সঙ্গে পরামর্শ না করেই মামলা করেছিলেন বলেও জানান। হিন্দু-মুসলমান যাতে সংঘর্ষে না জড়ায় সেজন্য তিনি এমন সিদ্ধান্ত নিতে চান বলে জানিয়েছেন গণমাধ্যমকে।

সোমবার (৩০ জুন) নিজ বাড়িতে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন কুমিল্লার মুরাদনগরের পাশবিক নির্যাতনের শিকার ওই নারী।

তিনি বলেন, হের (ফজর আলী) তো অবস্থা খারাপ। বাঁচে না মরে বলা যায় না। সে যদি এলাকায় হাঁটা-চলা করতো তাহলে মামলা করে কাজ হতো। এখন ওর মরার অবস্থা। আমরা মামলাটা উঠাতে চাই, দেশে শান্তিতে রাখতে চাই। হিন্দু-মুসলমান শান্তিতে থাকুক।

ওই নারী বলেন, আমার মানসম্মান সব গেছে, সবাই মুক্তি পাক। আমি দুটি শিশুসন্তান নিয়ে বাঁচতে চাই। আমি দশজনের শান্তি চাই, দেশের শান্তি চাই। আমার যা হওয়ার তো হয়েই গেছে। আমি মামলা তুলে নেব। আমি মামলা করেছি, আমি তুলে ফেলবো। আমি দশজনের ভালো চাই। মামলা তুলে নিতে আমাকে কেউ চাপ দেয়নি। টাকার লোভও দেখায়নি। আমার স্বামী বলেছে- ‘তোর সম্মান যা যাওয়ার গেছে। এখন কেস করলেও সেই সম্মান ফিরে পাবি না।’

ফজর আলীর সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার মা ৫০ হাজার টাকা ধার নিয়েছে ফজর আলীর কাছে। সেই পাওনা টাকার বিষয়ে ফজর আলী আমাকে মাঝেমধ্যে ফোন দিতেন। এসব বিষয় ফজর আলীর ছোটভাই আমাদের সন্দেহ করতো। একদিন ফজর আলীর ভাই আমাদের ঘরে এসে আমার হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নিয়ে আছাড় মেরে মোবাইল ভেঙে ফেলে। পরে গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে বিচার হয়ে ওই ঝামেলা মীমাংসা হয়।

সেদিনের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে ভুক্তভোগী ওই নারী বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে ফজর আলী আমাদের ঘরের সামনে এসে দরজা খুলতে বলেন। আমি বলেছি, আমার বাবা-মা পাশের বাড়ির সাপ্তাহিক পূজার অনুষ্ঠানে গেছে। আমি আর দুই সন্তান ঘরে। এ সময় তিনি কৌশলে দরজা খুলে আমাদের ঘরে প্রবেশ করে আমার ওপর অত্যাচার করেন। কিছুক্ষণ পর ৭ থেকে ৮ জন এসে ফজর আলীকে মারধর করেন। তাকে (ফজর আলীকে) মারধরের পর আমাকেও মারধর শুরু করেন। তারা আমার ভিডিও করে ফেসবুকে ছেড়ে দেন।

গত শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হিন্দু সম্প্রদায়ের এক নারীকে নিপীড়নের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে। পরে বিষয়টি নজরে আসে সবার। বৃহস্পতিবার রাতে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাহেরচর পাঁচকিত্তা এলাকায় ওই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গত শুক্রবার ফজর আলী নামে এক ব্যক্তিকে আসামি করে ধর্ষণের মামলা করেন ওই নারী। 

ভাইরালকাণ্ডে জড়িত গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- একই এলাকার আবদুল হান্নানের ছেলে মো. আলী সুমন, জাফর আলীর ছেলে রমজান, মো. আলমের ছেলে আরিফ ও তালেম হোসেনের ছেলে অনিক।

ফজর আলী কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ভিডিও ছড়ানোর দায়ে গ্রেপ্তার চারজনকে আদালতে তোলা হলে আদালত তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এ বিষয়ে কুমিল্লার পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খান বলেন, পুরো বিষয়টি এখন তদন্তানাধীন। ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে, শেষ হলে বিস্তারিত জানাতে পারবো। ফজর আলীকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসকের ছাড়পত্র পেলে তাকে আদালতে তোলা হবে।
সূত্র: আরটিভি