প্রচ্ছদ জাতীয় নির্বাচনে যে ৩ আসনে প্রার্থী হতে পারেন তারেক রহমান

নির্বাচনে যে ৩ আসনে প্রার্থী হতে পারেন তারেক রহমান

আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন। রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনি তৎপরতা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। দেশের মানুষের আগ্রহের বিষয় বড় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রধানরা কোন আসনে নির্বাচন করবেন এবং কয়টি আসনে প্রার্থী হবেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ১৭ বছর পর লন্ডনের নির্বাসন থেকে দেশে ফিরছেন। ওয়ান-ইলেভেনের জরুরি সরকারের সময় তার ওপর প্রচণ্ড নির্যাতন হয়েছে। তাকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়। প্রথমবারের মতো তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। তাই তাকে নিয়ে মানুষের ব্যাপক কৌতূহল। তেমনই কৌতূহল সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে। অসুস্থ খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে পারবেন কিনা, তা মানুষের জানার খুব আগ্রহ। জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান কয়টি আসনে এবং কোথায় নির্বাচন করছেন, এটারও খোঁজ নিচ্ছেন কৌতূহলী মানুষ। তার নেতৃত্ব ইতোমধ্যে সবার চোখে পড়েছে। তরুণদের দল এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম নির্বাচনে কেমন করবেন, তা নিয়েও মানুষের প্রবল আগ্রহ রয়েছে।

রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রথমসারির অন্তত ১০টি দলের শীর্ষ নেতা নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। বেশির ভাগ নেতাই নিজ এলাকায় প্রার্থী হওয়ার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। আসন্ন নির্বাচনে দেশের অন্যতম বড় দল আওয়ামী লীগ আপাতদৃষ্টিতে অংশ নিতে পারছে না। গণহত্যা ও ফ্যাসিবাদী শাসনের কারণে দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ। নির্বাচন কমিশন দলটির নিবন্ধনও স্থগিত করেছে। তবে দলটির অনেক নির্দোষ সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করতে পারেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচনে এবার জোটবদ্ধ বা আসন সমঝোতার মাধ্যমে অংশ নিতে পারে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল। সে ক্ষেত্রে জামায়াতসহ কোনো কোনো দল দলীয়ভাবে প্রার্থী ঘোষণা করলেও পরে কিছু রদবদল হতে পারে।

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া প্রার্থী হবেন কিনা- তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে দলটির একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, একটি আসন থেকে তাকে প্রার্থী করা হতে পারে। সেটি ঢাকা কিংবা ফেনীর আসন। আর তিনি প্রার্থী হলে অন্যান্য রাজনৈতিক দল তার প্রতি সম্মান জানিয়ে ওই আসনে নিজেদের প্রার্থী না-ও দিতে পারেÑএমন আভাসও পাওয়া গেছে। পৈতৃক এলাকা ফেনী-১ আসনটি থেকে বিজয়ী হয়ে এরই মধ্যে তিনবার প্রধানমন্ত্রী এবং দুবার বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করেছেন খালেদা জিয়া। নির্বাচনে অংশ নিলে এবারও এই আসন থেকে প্রার্থী হবেন তিনি। এ ছাড়া দলের মধ্যে আলোচনা আছে, ফেনীতে প্রার্থী না হলে তিনি ক্যান্টনমেন্ট, গুলশান ও বনানী নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৭ আসন থেকেও প্রার্থী হতে পারেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ম্যাডাম নির্বাচন করবেন কি না সিদ্ধান্ত হয়নি। নির্বাচনি প্রক্রিয়া শুরু হলে পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হবে। ম্যাডামের সিদ্ধান্ত তিনি নিজেই নেবেন। আমাদের আরেকটু ধৈর্য ধরতে হবে।

ওয়ান-ইলেভেনের জরুরি সরকারের সময় মৃত্যুর ঝুঁকির পাশাপাশি রাজনীতি থেকে মাইনাস করার ষড়যন্ত্র ছিল। সেই জামানা পার হয়ে দেশে ফিরে প্রথমবারের মতো নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি কোন আসন ও কয়টি আসন থেকে নির্বাচন করবেন, এটা সারা দেশের মানুষের প্রচণ্ড আগ্রহের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষের এ আগ্রহ সম্পর্কে খোঁজ নিতে গেলে এ বিষয়ে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতারা আসন সম্পর্কে কেউই মুখ খুলতে রাজি হননি। তাদের বক্তব্য, নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি একান্তই তারেক রহমানের নিজস্ব বিষয়। আগে তিনি দেশে প্রত্যাবর্তন করবেন, নির্বাচনের সামগ্রিক অবস্থা সরেজমিন দেখবেন, তারপর নিজের প্রার্থিতার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, তিনি তো প্রার্থী হবেনই। এ নিয়ে সন্দেহের কোনো কারণ নেই। তারেক রহমানই চমক। তবে কোন কোন আসনে তিনি নির্বাচন করবেন তা এখনো নির্ধারিত হয়নি।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, তারেক রহমান এখন ব্যস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচনি জোট করা, ৩০০ আসনের প্রার্থী তালিকা ঠিক করা এবং একটি প্রাণবন্ত সংসদ গঠন করার ক্ষেত্রে সহযোগী অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কীভাবে ঐকমত্যে পৌঁছা যায়, সেটা ঠিক করা। দলের ভালো ও যোগ্য প্রার্থী বাছাই করতে তিনি দেশব্যাপী একটি নির্বাচনি জরিপকাজ চালাচ্ছেন। এ ব্যাপারে একটি সংস্থাকে দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। তারেক রহমান সহসাই দেশে ফিরছেন। আসন্ন নির্বাচনে খালেদা জিয়া এবার নির্বাচনি গণসংযোগ করতে পারবেন না। দেশব্যাপী এই গণসংযোগ তারেক রহমানকেই করতে হবে।

বিএনপির একটি সূত্রে জানা গেছে, জিয়া পরিবার থেকে ধানের শীষ নিয়ে এবার পাঁচটি আসনে নির্বাচন করা হতে পারে। খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান ছাড়াও আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শামিলা রহমান প্রার্থী হতে পারেন। তবে তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান কিংবা মেয়ে ব্যারিস্টার জাইমা রহমান নির্বাচনে প্রার্থী হবেন না। তারা রাজনীতি থেকে দূরে থাকছেন।

নির্বাচন কমিশনের আইনে আছে, একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ তিনটি আসনে নির্বাচন করতে পারবেন। লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে, তিনটি আসন থেকে নির্বাচন করার ব্যাপারে তারেক রহমানের কাছে ইতোমধ্যে অনুরোধ গেছে। এ তিনটি আসন হলো—গাবতলী ও শাজাহানপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত বগুড়া-৭ আসন, ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট-গুলশান-বনানী নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৭ আসন এবং সিলেট-১ আসন। বগুড়ার গাবতলী তারেক রহমানের গ্রামের বাড়ি, ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট তার জন্ম থেকে বেড়ে ওঠার স্মৃতিবিজড়িত এলাকা। আর সিলেট-১ আসনটি নিয়ে বলা হয়ে থাকে, ‘যে দল সিলেট-১ আসনে বিজয়ী হবে, ওই দল সরকার গঠন করবে।’ তাই এ আসনে নির্বাচন করার জন্য সিলেটবাসী তারেক রহমানকে চাচ্ছেন। তা ছাড়া সিলেট হচ্ছে তারেক রহমানের শ্বশুরবাড়ি। তার শ্বশুর সাবেক নৌবাহিনী প্রধান রিয়াল অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খান।