অপরাধ: সিরাজগঞ্জের তাড়াশে বাবা, মা ও মেয়েকে গলাকেটে হত্যা ঘটনার রহস্য উন্মোচন করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। একইসঙ্গে আসামি রাজিব কুমার ভৌমিককে (৩৫) গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার রাজিব নিহত বিকাশ সরকারের আপন ভাগ্নে।
বুধবার (৩১ জানুয়ারি) সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডল এক সংবাদ সম্মলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। জানা গেছে, ব্যবসার টাকা লেনদেনকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। মামা বিকাশ সরকারের সঙ্গেই ব্যবসায় যুক্ত ছিলো বড় বোন প্রমিলা সরকারের ছেলে রাজিব ভৌমিক। আর ব্যবসার টাকা নিয়েই মামা বিকাশ সরকারের সঙ্গে দ্বন্দ্বের শুরু। আর এ দ্বন্দ্ব পরিশেষে রূপ নেয় হত্যাকাণ্ডে। ভাগ্নের হাতে খুন হন মামা, মামি আর মামাতো বোন।
পুলিশ সুপার জানান, গ্রেফতার রাজিব ভৌমিক উল্লাপাড়া উপজেলার তেলিপাড়া গ্রামের মৃত বিশ্বনাথ ভৌমিকের ছেলে ও নিহত বিকাশ সরকারের আপন ভাগ্নে। হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তিরা হলেন- তাড়াশ পৌর এলাকার শোলাপাড়া মহল্লার মৃত কালিচরণ সরকারের ছোট ছেলে বিকাশ সরকার (৪৫), বিকাশের স্ত্রী স্বর্ণা রানী সরকার (৩৮) ও মেয়ে তাড়াশ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী পারমিতা সরকার তুষি (১৫)।
গ্রেফতার আসামির থেকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আসামি রাজিব তার বাবা মারা যাওয়ার পর ২০২১ সাল থেকে মামা বিকাশ চন্দ্র সরকারের সাথে যৌথভাবে খাদ্যশস্য কেনাবেচা ব্যবসায় যুক্ত হয়। বিকাশ চন্দ্র সরকার ভাগ্নে রাজিবকে ব্যবসার পুঁজি হিসেবে ২০ লাখ টাকা দেন। ব্যবসা চলমান থাকাকালীন হত্যাকারী রাজিব তার মামাকে বিভিন্ন ধাপে ব্যবসার লভ্যাংশসহ প্রায় ২৬ লাখ টাকা ফেরত দিলেও চলতি বছরে এসে রাজিবের কাছে তার মামা নিহত অতিরিক্ত ৩৫ লাখ টাকা দাবি করেন।
গত ২২ জানুয়ারি বিকাশ সেই দাবিকৃত টাকা ৭-৮ দিনের মধ্যে ফেরত দেয়ার জন্য ভাগ্নেকে অনেক চাপ দেন এবং টাকার জন্য ভাগ্নে রাজিব ও বোনকে ফোনে অনেক বকাবকি করে। এতে রাজিব টাকা জোগাড় করতে ব্যর্থ হয়ে এবং মামার বকাবকিতে কষ্ট পেয়ে তার মামাসহ পুরো পরিবারকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
এরই জেরে গত (২৭ জানুয়ারি) বিকেল পৌনে ৫টার দিকে মামাকে ফোন করে পাওনা টাকা ফেরত দিতে বাসায় আসতে চান রাজিব। এ সময় বিকাশ তাড়াশের বাহিরে থাকায় ভাগ্নেকে টাকা নিয়ে বাসায় এসে মামির সাথে সাক্ষাৎ করে বাসাতেই থাকতে বলেন। পরে রাজিব বাসায় মামার অনুপস্থিতির সুযোগে মামি এবং মামাতো বোন তুষিকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
এ সময় রাজিবকে কফি খাওয়ানোর জন্য মামি সন্ধ্যাকালীন পূজা শেষে বাসার নিচে দোকানে যায়। পরে রাজিব ব্যাগে করে আনা লোহার রড দিয়ে মামাতো বোন পারমিতা সরকার তুষির মাথায় উপর্যুপুরি আঘাত করে এবং জ্ঞান হারিয়ে ফেললে হাসুয়া দিয়ে গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। এরমধ্যে মামি কফি কিনে বাসায় ফিরলে তাকেও একইভাবে রড দিয়ে আঘাত করে ও গলাকেটে হত্যা নিশ্চিত করেন।
তাদেরকে হত্যার কিছুক্ষণের মধ্যে মামা বাসায় ঢুকলে তাকেও রড দিয়ে আঘাত করে এবং গলাকেটে হত্যা করে মরদেহ টেনে নিয়ে বেডরুমে রাখেন রাজিব। পরে রুমে তালা দিয়ে উল্লাপাড়া নিজ বাড়িতে ফিরে যান তিনি। যাওয়ার পথে হত্যায় ব্যবহৃত লোহার রড একটি পুকুরে ফেলে যায় এবং রক্তমাখা হাসুয়াসহ ব্যাগটি নিজ বাড়িতে নিয়ে যান।
প্রসঙ্গত, তাড়াশ উপজেলা সদরের বারোয়ারি বটতলা মহল্লার নিজ বাড়িতে বসবাস ছিল বিকাশ এবং তার বড় ভাই প্রকাশ সরকারের। দুই ভাই ও পাঁচ বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট। শনিবার (২৭ জানুয়ারি) রাত থেকে বিকাশ এবং তার স্ত্রীর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় স্বজনরা। পরে তারা সোমবার (২৯ জানুয়ারি) রাতে বাড়িতে গিয়ে দেখে ঘর তালাবদ্ধ রয়েছে। তবে মোবাইল ফোন ভিতরে বাজছে। এ সময়খবর দেন তারা। পরে তাড়াশ থানা পুলিশ রাত তিনটার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে ফ্ল্যাটের তালা ভেঙে ঘরে ঢুকে বিকাশ সরকার তার স্ত্রী স্বর্ণা রানী সরকার ও মেয়ে দশম শ্রেণির ছাত্রী পারমিতা সরকার তুষির গলা কাটা মরদেহ উদ্ধার করেন।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) রাতে নিহতদের আত্মীয় বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার বুড়ইল গ্রামের সুকোমল চন্দ্র সাহা বাদী হয়ে তাড়াশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |