প্রচ্ছদ সারাদেশ ভাষার মাসে ইংরেজিতে নাম লিখেন- নিজেকে দেশদ্রোহী মনে হয় না?

ভাষার মাসে ইংরেজিতে নাম লিখেন- নিজেকে দেশদ্রোহী মনে হয় না?

সারাদেশ: ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’— রক্তে রাঙানো সেই ফেব্রুয়ারি মাস, ভাষা আন্দোলনের মাস শুরু হলো। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মায়ের ভাষা বাংলাকে রক্ষায় ১৪৪ ধারা ভেঙে রাজপথে নামেন সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিকসহ বাংলার দামাল ছেলেরা। তাদের সাহসিকতা ও বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে ওই দিন মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিল বাঙালি জাতি। তাই ভাষা শহীদদের স্মরণে বাংলায় নিজের নাম ও মন্তব্য লিখতে তাগিদ দিয়েছেন সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। শোকাবহ এ মাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে গৌরব আর অহঙ্কারের অধ্যায়। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে দুর্বার আন্দোলনের পথ ধরে শুরু হয় বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন। একাত্তরে ৯ মাস পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। সেদিক থেকে মূলত ফেব্রুয়ারি মাস একদিকে শোকাবহ হলেও অন্যদিকে আছে এর গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। এ মাসের সম্মানে নিজের নাম ও মন্তব্য বাংলায় লেখার তাগিদ দিয়ে মোস্তাফা জব্বার নিজের ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘ভাষার মাসে ইংরেজি অক্ষরে নিজের নাম লিখেন, ইংরেজি অক্ষরে মন্তব্য করেন- নিজেকে দেশদ্রোহী মনে হয় না?’’

অবশ্য মন্ত্রীর এমন গুরুত্বাপের কারণও রয়েছে। পৃথিবীর একমাত্র জাতি বাঙালি ভাষার জন্য এ মাসে জীবন দিয়েছিল। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা বাংলার দাবিতে সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ১৪৪ ধারা অমান্য করে রাজপথে বেরিয়ে এলে পুলিশ তাদের ওপর গুলি চালায়। এতে আবুল বরকত, আবদুল জব্বার, আবদুস সালামসহ কয়েকজন ছাত্রযুবা হতাহত হন। এ ঘটনার প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ ঢাকাবাসী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেলে সমবেত হয়। নানা নির্যাতন সত্ত্বেও ছাত্রদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরা প্রতিবাদ জানাতে পরের দিন ২২ ফেব্রুয়ারি পুনরায় রাজপথে নেমে আসে। তারা মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে শহীদদের জন্য অনুষ্ঠিত গায়েবি জানাজায় অংশগ্রহণ করে।

ভাষাশহীদদের স্মৃতিকে অমর করে রাখার জন্য ২৩ ফেব্রুয়ারি এক রাতের মধ্যে মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে গড়ে ওঠে একটি স্মৃতিস্তম্ভ, যা সরকার ২৬ ফেব্রুয়ারি গুঁড়িয়ে দেয়। একুশে ফেব্রুয়ারির এই ঘটনার মধ্য দিয়ে ভাষা আন্দোলন আরও বেগবান হয়। ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট জয়লাভ করলে ৭ মে অনুষ্ঠিত গণপরিষদের অধিবেশনে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ভাষার জন্য বাংলার দামাল সন্তানদের আত্মত্যাগ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায় ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর। ইউনেসকো ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ ঘোষণা করে। এর মধ্যদিয়ে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে এখন বিশ্বের দেশে দেশে পালিত হয়। ভাষা আন্দোলনের মাস ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকেই শুরু হচ্ছে নানা কর্মসূচি। ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গতকাল ১ ফেব্রুয়ারি থেকে বাংলা একাডেমির আয়োজনে শুরু হয়েছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। এদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকেল ৩টায় গ্রন্থমেলা উদ্বোধন করেন। মেলা চলবে আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। বাংলা একাডেমি আয়োজিত এবারের বইমেলার প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘পড়ো বই, গড়ো দেশ: বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’।

বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে ১১ লাখ বর্গফুট এলাকাজুড়ে এবারের মেলার আয়োজন করা হয়েছে। একাডেমি প্রাঙ্গণে রয়েছে ১২০টি প্রতিষ্ঠান। তাদের জন্য বরাদ্দ ১৭৩টি ইউনিট। আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আছে ৫১৫টি প্রতিষ্ঠান। তারা বরাদ্দ পেয়েছে ৭৬৪টি ইউনিট। সব মিলিয়ে ৬৩৫টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে মেলায়। মেলায় একাডেমি প্রাঙ্গণে একটি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩৬টি প্যাভিলিয়ন শোভা পাচ্ছে। আর উন্মুক্ত মঞ্চের কাছাকাছি গাছতলায় আছে প্রায় ১৭০টি লিটলম্যাগের স্টল বরাদ্দ। বাংলা একাডেমি এবার রেখেছে তিনটি প্যাভিলিয়ন। এ ছাড়া শিশুকিশোর উপযোগী প্রকাশনার বিপণনের জন্য তাদের আছে একটি স্টল। টিএসসি, দোয়েল চত্বর, এমআরটি বেসিং প্লান্ট এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন অংশে মোট আটটি প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ রয়েছে। সাহিত্যপ্রেমীদের মেলায় আসা-যাওয়ার সুবিধার্থে করা হয়েছে এই ব্যবস্থা। এবার খাবারের স্টলগুলো ইঞ্জিনিয়ারিং ইনিস্টিটিউশনের পাশে রাখা হয়েছে। আছে নামাজের স্থান। সবার সুবিধার্থে করা হয়েছে অস্থায়ী শৌচাগারসহ অন্যান্য পরিষেবার ব্যবস্থা আছে।

প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে।