
জয়পুরহাটের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক মো. আব্বাস উদ্দীনের ভাড়া বাসায় দুষ্কৃতিকারীরা ঢুকে চুরি ও তাকে ফাঁসি দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গত ৩১ জানুয়ারি একটি হত্যা মামলায় ১১ জনের মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন বিচারক মো. আব্বাস। এ রায়ের পলাতক আসামিরা হুমকি দিতে পারেন বলে ধারণা করছেন তিনি।
সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে জেলা শহরের হাউজিং এস্টেট এলাকায় এ ঘটনায় ঘটে। এ ঘটনায় ওই বিচারক বাদী হয়ে চুরি ও হুমকির অভিযোগ এনে থানায় এজাহার দিয়েছেন।
ঘটনার পর জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নূরে আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) ফারজানা হোসেন, জয়পুরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির, কোর্ট ইন্সপেক্টর আবু বকর সিদ্দিকসহ গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশের বিভিন্ন টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
এজাহারে বলা হয়েছে, হাউজিং এস্টেট এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে স্ত্রীসহ বসবাস করেন বিচারক মো. আব্বাস উদ্দীন। সোমবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে বাসার ভেতরে কেউ প্রবেশ করে ঘরের দরজার লক খোলার চেষ্টা করেন। এ সময় ভেতর থেকে তারা দুজন চিৎকার করে এবং পাশের বাসায় ভাড়া থাকা পুলিশের এক সদস্য আরিফুল ইমলাম ও থানার ওসিকে ঘটনা জানান। সে সময় দুষ্কৃতিকারীরা দরজার লক বাইরে থেকে খুলে ভেতরে প্রবেশ করেন। এরপর একজন দুষ্কৃতকারী ওই বিচারককে বলে ‘তুই বেদীন ও তার লোকদের ফাঁসি দিয়েছিস, এখন তোরে ফাঁসি দিব’
এ সময় পুলিশ সদস্য আরিফুল চিৎকার করে ডাক দেওয়ায় দুষ্কৃতিকারীরা সেখান থেকে দ্রুত পালিয়ে যায়। পরে সেখানে ওই বাসার মালিকসহ আরও কয়েকজন দেখতে পান একটি রুমে জানালার গ্রিল কাটা এবং ড্রয়িং রুমে রাখা একটি ব্রিফ কেসের মালামাল ছড়ানো-ছিটানো অবস্থায় রয়েছে। ওই ব্রিফ কেসের মধ্যে দুই ভরি ওজনের দুটি স্বর্ণের চুরি, দুই ভরি ওজনের স্বর্ণের চেইন ও এক ভরি ওজনের দুটি কানের দুল ছিল। সেসবের দাম প্রায় ৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। এসব স্বর্ণ ও নগদ ৫০ হাজার টাকা ওই দুষ্কৃতিকারীরা চুরি করে নিয়ে গেছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, গত ৩১ জানুয়ারি একটি হত্যা মামলায় রায় দেন বিচারক মো. আব্বাস উদ্দীন। ওই মামলার আসামি ছিলেন বেদারুল ইসলাম বেদীন, সরোয়ার রওশন, মশিউর রহমান, মনোয়ার হোসেন, নজরুল ইসলাম, রানা, শাহী, টুটুল, সুজন, রহিম ও ডাবলু। রায়ে এই ১১ জন আসামির মৃত্যুদণ্ডসহ প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। বিচারক মো. আব্বাস উদ্দীনের ধারণা, সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামিরা নিজেরা বা দলীয় লোকজনকে দিয়ে তাকে হত্যা করার জন্য এমন ঘটনা ঘটিয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ওই বাসার ভেতরের পূর্বপাশের রুমের জানালার কাটা কয়েকটি গ্রিল মেরামত করা হয়েছে। ড্রয়িং রুমে ব্রিফ কেসটি এলোমেলো পড়ে আছে। এ সময় কথা হয় ওই বিচারকের সহধর্মিণী আফসানা আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমাদের শয়ন কক্ষের ভেতর থেকে লক করা ছিল। দুর্বৃত্তরা সেটা ঘুরাচ্ছিল এবং খোলার চেষ্টা করছিল। আমরা সেটির শব্দ পেয়ে জেগে উঠি। এরপর চিৎকার করি এবং পুলিশকে জানাই। এরমধ্যে বাইরে একটি ছোট ব্যাগে থাকা চাবি দিয়ে ওরা দরজা খুলে ভেতরে আসে এবং হুমকি দেয়। কিছু সময় পর পুলিশ সদস্য আরিফুল এসে ডাক দিলে তারা পালিয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার কথা ছিল। তাই ব্রিফ কেস গুছিয়ে রেখেছিলাম। ওই ব্রিফ কেসে স্বর্ণ ও টাকা ছিল। সেগুলো ওরা নিয়ে গেছে। কয়েকদিন আগে বেড়াতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রায়ের কারণে যাওয়া হয়নি। আজ যাওয়ার কথা ছিল।
জানতে চাইলে বিচারক মো. আব্বাস উদ্দীন ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছেন, এজাহারে যে ঘটনা আছে, সেটাই সঠিক।
জয়পুরহাট জজ কোর্টের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) নৃপেন্দ্রনাথ মন্ডল বলেন, গতকাল (সোমবার) গভীর রাতে জয়পুরহাটের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আব্বাস উদ্দীনের বাসায় চুরির ঘটনা ঘটেছে। সেটি আজ (মঙ্গলবার) বিকেলে জানতে পেরেছি। বিষয়টি নিয়ে জজ (আব্বাস উদ্দীন) সাহেব থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে।
জয়পুরহাট থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন করিব বলেন, গভীর রাতে টেলিফোনের মাধ্যমে জানতে পারি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজের বাসায় চুরির ঘটনা ঘটেছে। উক্ত ঘটনা জানতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়। পুলিশ সুপারসহ আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। সার্বিক বিবেচনায় এটা রহস্যজনক মনে হয়েছে। এ ঘটনায় নিয়মিত মামলা হয়েছে। মূল রহস্য উদঘাটনে আমরা তৎপর রয়েছি।