
আশালতা দাস। বয়স ৭৫ বছর। স্বামী সন্তোষ দাস মারা যায় ১১ বছর আগে। দুই মেয়ে বিয়ে হয়েছে অনেক বছর। বাড়ীতে একাই বসবাস করতো। মেয়ে-জামাই, নাতী-নাতনী তাদের কাছে রাখার জন্য অনেক চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে বাড়ীতে কাজের লোক ছিল। মেয়ে-জামাই বাজার করে দিত। কয়েকশ বছরের পুরাতন বাড়ীটিতে এভাবেই বাস করতো আশালতা দাস। তার বাড়ী রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার সরিষা ইউনিয়নের প্রেমটিয়া গ্রামে।
মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে দেখভালের দায়িত্বে থাকা সুকুমার মজুমদার গেটে এসে অনেক ডাকাডাকির পরও ভেতর থেকে কোন সাড়া পায় না। পরে সুকুমারের ছেলে সীমানা প্রাচীরের ওপর দিয়ে বাড়ীর ভেতরে গিয়ে দেখে আশালতার রক্তাক্ত মরদেহ ঘরের বারান্দায় পড়ে আছে।
আশালতার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকার মানুষ বাড়ীতে ভিড় করে। কারণ আশালতার বাড়ী ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প ছিল। তাদের দান করা জমিতে এলাকায় বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কারো সঙ্গে কোন শত্রুতা নেই। আশালতার বাড়ীটি এলাকায় ঠাকরুন বাড়ী হিসেবে পরিচিত। এমন মানুষকে কারা হত্যা করবে, কেনই বা হত্যা করবে।
পুলিশ এসে আশালতার মরদেহে দেখতে পায় শরীরে কোন সোনার গহনা নেই। পরে পুলিশ আশালতার প্রতিবেশী বিশ্বজিৎ বিশ্বাসকে গ্রেপ্তার করে। বিশ্বজিৎ এর ঘর আশালতার ঘর থেকে ১০ ফুট দূরে। তার বাবার নাম সুজিত বিশ্বাস। সে পেশায় একজন ইলেকট্রনিক মিস্ত্রি। বিবাহিত বিশ্বজিৎ এর দেড় বছর বয়সী একটা ছেলে রয়েছে। পরে পুলিশ বিশ্বজিৎ এর দেয়া তথ্য মতে তার দোকান থেকে আশালতার গলার স্বর্ণের চেইন, কানের দুল ও হাতের বালা উদ্ধার করে। এছাড়া একটি নালা থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হাতুড়ি উদ্ধার করে পুলিশ।
আশালতার ছোট মেয়ে পলি দাস বলেন, আমার মা সব সময় সোনার গহনা পরতো। এই গহনার জন্যই আমার মাকে খুন করলো। ওরা আমাদের বাড়ীর খাবার খেয়েই বড় হয়েছে। আমাদের জমিতে বসবাস করেছে। তারাই একাজ করলো। আমার মার সঙ্গে কারো কোন শত্রুতা ছিল না।
আশালতার বড় জামাই রাজবাড়ী আদালতের সিনিয়র আইনজীবী স্বপন কুমার বিশ্বাস বলেন, এই বাড়ীটি একটি ঐতিহাসিক বাড়ী। বাড়ী ছেড়ে আমার শাশুড়ি আমার বাসায় গিয়েও থাকতো না। বাড়ীটাকে এত ভালোবাসতো। কিন্তু প্রতিবেশী ছেলেটা কী করলো।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার জিএম আবুল কালাম আজাদ বলেন, ঘটনা ঘটনার ৫ ঘণ্টার মধ্যে আমরা আসামিকে ধরতে পেরেছি। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের রহস্যও উদঘাটন করতে পেরেছে।
পুলিশ সুপার জানান, বিশ্বজিৎ একটি বিদ্যালয়ে দপ্তরী পদে চাকরির জন্য ঘুষ দেয়। কিন্তু চাকরি হয়না টাকাও ফেরত পায় না। এসব মিলিয়ে বিশ্বজিৎ অনেক টাকার দেনা হয়ে যায়। তখন সিদ্ধান্ত নেয় আশালতার গহনা ছিনতাই করবে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী গহনা ছিনতাই করতে এই হত্যাকাণ্ড। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হাতুড়ি, গামছা উদ্ধার করা হয়েছে।