আজকের সেরা সংবাদ : ২০১২ সাল থেকে নিখোঁজ সিলেটের মানুষের প্রিয় নেতা এম ইলিয়াস আলী। কোথায় আছেন, কেমন আছেন; কেউ জানে না। এখনো পরিবারসহ নেতাকর্মীরা তার জন্য পথ চেয়ে আছেন। সিলেট-২ আসনের বিশ্বনাথে বাড়ি এম ইলিয়াস আলীর। ছিলেন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক।।
গুম হওয়ার পর থেকে ভোট এলেই ইলিয়াস আলীর নাম উঠে আসে আলোচনায়। এবারের নির্বাচনেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। ভোটের মাঠে থাকা প্রার্থীরা নিজেদের পক্ষে ভোট টানতে ইলিয়াস আলীর নাম জপছেন। এ নিয়ে বিরক্ত, ক্ষুব্ধ তার স্ত্রী বিএনপি চেয়ারপাাসনের উপদেষ্টা বেগম তাহসিনা রুশদীর লুনা। ভোটের মাঠে ইলিয়াস আলীর নাম ব্যবহার করে ফায়দা নিয়ে তিনি কড়া সতর্কবার্তা দিয়েছেন।
২০১৮ সালের ভোটের নাটকীয়তাা এখনো ভোলেননি এ আসনের মানুষ। ওই নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলেও আইনের গ্যারাকলে আটকে দেয়া হয় ইলিয়াসপত্নী লুনার মনোনয়ন। ভোটের মাঠে শরিকদের দু’প্রার্থী ছিলেন। খেলাফত মজলিসের প্রার্থী ও দলের যুগ্ম মহাসচিব মুনতাসির আলীর বদলে এ আসনে বিএনপি ও ইলিয়াস পরিবার থেকে সমর্থন দেয়া হয় গণফোরামের প্রার্থী মোকাব্বির খানকে।
কিন্তু সমর্থনের আগে প্রার্থী হলেও পরাজয় মেনে নিয়ে মোকাব্বির খান তখন ভোটের মাঠ ছেড়ে লন্ডনে চলে গিয়েছিলেন। ভোটের কয়েক দিন আগে তাকে সেখান থেকে ফিরিয়ে আনা হয়। এরপর ইলিয়াসপত্নী লুনার ইশারায় ভোটের মাঠে জয়লাভ করেন মোকাব্বির খান। সেই মোকাব্বির খান ভোটের পর বদলে যান। ইলিয়াস পরিবারকে ভুলে যান তিনি। এমনকি কখনো কখনো বিএনপি’র সমালোনায়ও সরব ছিলেন। তবে ভোটের ফলাফলে গুরুত্ব বাড়ে এ আসনে বিএনপি ও ইলিয়াস পরিবারের। বাস্তবেও তাই।
সিলেট-২ আসনের ভোটের মাঠে ইলিয়াস আলীর নামই বড় ফ্যাক্টর। গুম হওয়ার পর কেবল তার নাম ব্যবহার করেই অনেকে এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান হয়েছেন। ইলিয়াসের জনপ্রিয়তার কারণে মাঠে এখনো হেলে পড়েন ভোটাররা। তাকিয়ে থাকেন ইলিয়াসের স্ত্রীর গ্রীন সিগন্যালের দিকে।
ওসমানীনগর উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি এসটিএম ফখর উদ্দিনের মতে- ওসমানীনগর ও বিশ্বনাথে শুধু বিএনপি নয়, সাধারণ ভোটাররাও এখনো মনেপ্রাণে ভালোবাসেন ইলিয়াস আলীকে। এখনো তার অপেক্ষায় আমরা। তবে এটা সত্য তার নাম ব্যবহার করে অতীতে অনেকেই এমপিসহ জনপ্রতিনিধি হয়েছেন। এবার আর সেটি হবে না। যেহেতু বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়নি; এ কারণে আসনের দুটি উপজেলার বিএনপিসহ ইলিয়াস প্রেমি মানুষ ভোটে অংশ নেবে না। এবার ইলিয়াস আলীর নাম ব্যবহার করে কেউ যাতে নির্বাচনী বৈতরনী পার না হতে পারে সেদিকে আমাদের নজরদারি থাকবে বলে জানান তিনি। আসনের ভোটাররা জানিয়েছেন, এবারের নির্বাচনে ইলিয়াস আলীর নাম ব্যবহার করছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী ও সাবেক এমপি ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া। ইতিমধ্যে তিনি একাধিক নির্বাচনী সভায় ইলিয়াস আলীর নাম ব্যবহার করে ভোট টানার চেষ্টা করছেন। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমানও কৌশলে বিএনপি অংশের ভোট টানার চেষ্টা করছেন।
বিশ্বনাথ বিএনপি’র নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, বিশ্বনাথ পৌরসভার প্রথম নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী মুহিবুর রহমান সুকৌশলে বিএনপি ও বিরোধী বলয়ের ভোট টেনেছিলেন। তার কথায় বিশ্বাস নিয়ে বিএনপি’র অনেকেই তাকে ভোট দিয়েছিলেন। কিন্তু ভোটের পর মুহিবুর রহমানও বিশ্বনাথ বিএনপি’র নেতাকর্মীদের ধোঁকা দিয়েছেন। এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক বিএনপি নেতাকে হেনস্থা করার চেষ্টা চালান। এ কারণে মুহিবুর রহমানের ভূমিকায়ও ক্ষুব্ধ বিশ্বনাথের বিএনপি’র নেতাকর্মীরা। ফলে এবারের নির্বাচনে ইলিয়াসের আসনে বিএনপি ও বিরোধী বলয়ের নেতাকর্মীরা ভোট কেন্দ্রে না গিয়ে নীরব প্রতিবাদ জানাবে বলে জানিয়েছেন তারা। এদিকে, এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের মাঠে একাধিক প্রার্থীর মুখ থেকে এম ইলিয়াস আলীর নাম আসায় ক্ষুব্ধ তার স্ত্রী ও দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বেগম তাহসিনা রুশদীর লুনা। তার প্রশ্ন হচ্ছে- নির্বাচন আসলেই এম ইলিয়াস আলীর জন্য এত উতলা হন কেন? জনগণের কাছে এবার আর ইলিয়াস আলীর নাম বিক্রি করা চলবে না। এবারের ভাগাভাগির নির্বাচনে এম. ইলিয়াস আলীর নাম ব্যবহার না করতে তিনি প্রার্থীদের প্রতি কঠোরবার্তা দিয়েছেন। জেলা বিএনপি’র সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ময়নুল হকের পাঠানো এক বিবৃতিতে ৭ই জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনে জনগণ অংশগ্রহণ করবে না এবং ভাগাভাগির নির্বাচন জনগণ প্রত্যাখ্যান করবে বলে হুঁশিয়ারি প্রদান করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদির লুনা।
লুনা বলেন, এটা সত্য যে, সিলেটের মানুষের প্রিয় নেতা এম ইলিয়াস আলীর নাম ব্যবহার করে অতীতে অনেকেই মেম্বার, চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান এমনকি জাতীয় নির্বাচনে এমপিও নির্বাচিত হয়েছেন। অতীতে অনেক ক্ষেত্রে তখন আমাদেরও সম্মতি ছিল। কিন্তু বর্তমান নির্বাচন কমিশন আওয়ামী সরকারের আজ্ঞাবহ। আগামী ৭ই জানুয়ারি যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে সে নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যক্ষ কোনো সমর্থন থাকবে না। তাই অবৈধ নির্বাচনে জনগণের নেতা এম ইলিয়াস আলী নাম কোনো প্রার্থী কোথাও যেন যেন ব্যবহার না করে সেদিকে সংশ্লিষ্ট সকলকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান তিনি।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |