প্রচ্ছদ আর্ন্তজাতিক ৬২ বছর বয়সে মৃত্যু যুক্তরাষ্ট্রের জোড়া মাথার যমজের

৬২ বছর বয়সে মৃত্যু যুক্তরাষ্ট্রের জোড়া মাথার যমজের

বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক জীবিত জোড়া মাথার যমজের ৬২ বছর বয়সে মৃত্যু হয়েছে। গত ৭ এপ্রিল ফিলাডেলফিয়ার পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হাসপাতালে মারা যান লোরি ও জর্জ শ্যাপেল নামে ওই জোড়া মাথার যমজ।

১৯৬১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ পেনসিলভানিয়ার রিডিং-এ জন্মগ্রহণ করেন তারা। তাদের মাথার খুলি যুক্ত ছিল। আর সেখানে মস্তিষ্কের ৩০% জোড়া ছিল। এরমধ্যে জর্জ ছিলেন তুলনামূলক খর্বকায়। দুজন একত্রে চলাচলের জর্জ চলন্ত গাড়ি ব্যবহার করতেন।

সংবাদমাধ্যম এনবিসি টুডে বলছে, জোড়া মাথার যমজের বিরলতম রূপকে প্রতিনিধিত্ব করেন তারা। যা জোড়া লাগা যমজের ২-৬% এর মধ্যে দেখা যায়।

প্রথমে লরি ও জর্জ বিশ্বের প্রথম সমলিঙ্গ জোড়া লাগা যমজ ছিল। তবে ২০০৭ সালে জর্জ নিজেকে রূপান্তরকামী হিসাবে দাবি করে, পুরুষের মত আচরণ করতে শুরু করে। তখন থেকে তাদের দুজনের লিঙ্গ পরিচয় আলাদা হয়।

ওই সময় জর্জ বলেন, “আমি খুব ছোটবেলা থেকেই জানতাম, আমার ছেলে হওয়া উচিত ছিল।”

তিনি বলেন, “এটি খুব কঠিন ছিল, কিন্তু আমি বৃদ্ধ হয়ে যাচ্ছিলাম। আমি কেবল মিথ্যা বলে বাঁচতে চাইনি। আমি জানতাম, আমার জীবনকে আমি যেভাবে চাই সেভাবে বাঁচতে হবে।”

শ্যাপেলস পেনসিলভানিয়ার এলিম-এর একটি প্রযুক্তিগত প্রতিষ্ঠান হিরাম জি অ্যান্ড্রুস সেন্টার থেকে তারা স্নাতক হন। দুজনেই বেশ কয়েক বছর ধরে রিডিং হাসপাতালে কাজ করেছেন।

তাদের স্বতন্ত্র শখ ও আগ্রহ ছিল। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুসারে, জর্জ জার্মানি ও জাপানসহ বেশ কয়েকটি দেশে ভ্রমণ করে গানের শো করেছেন।

আর লরি প্রশংসিত এক টেনপিন বোলার ছিলেন। নিউ ইয়র্ক ম্যাগাজিন জানিয়েছে, ২৪ বছর বয়স থেকে ভাইবোনরা নিজেদের মতোই বসবাস করতেন। আদালতের আদেশের পর মানসিকভাবে অক্ষম না হওয়া সত্ত্বেও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য একটি প্রতিষ্ঠানে থাকতেন তারা।

এরপরে তারা দুজনে দুই বেডরুমের অ্যাপার্টমেন্টে ওঠেন। তাদের নিজস্ব কক্ষ ছিল, প্রতি রাতে তারা কোন ঘরে থাকবেন তা সিদ্ধান্ত নিয়ে করতেন।

তারা জানান, জোড়া লাগা সত্ত্বেও, তারা আলাদা অ্যাপার্টমেন্টে গোপনীয়তা রাখতে সক্ষম ছিলেন।

১৯৯৭ সালে একটি তথ্যচিত্রে লরি বলেছিলেন, “আমরা আলাদাভাবে উঠতে পারি না, দূরে যেতে পারি না, এর অর্থ এই নয় যে আমরা অন্যদের মতো একা থাকতে পারি না।”

যেমন দুজনের নিয়ম ছিল, “জর্জ গানের অনুশীলন করার সময় লরি শান্ত থাকবেন ও তাকে অনুশীলন করতে দেবেন।”

চিকিৎসরা জানিয়েছিল লরি এবং জর্জ ৩০ বছরের পরে আর বাঁচবে না। তারা ২০১৫ সালে সালে সবচেয়ে বয়স্ক নারী জোড়া লাগা যমজ হয়ে ওঠেন। অবশেষে তাদের এই যাত্রার সমাপ্তি ঘটলো।