
দেশজুড়ে: চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় কর্ণফুলী নদীতে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে এক পাইলট (বৈমানিক) স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদ (৩২) নিহত হয়েছেন। আহত অন্য পাইলট চিকিৎসাধীন আছেন। বৃহস্পতিবার (২০ মে) সকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে। জানা যায়, প্রশিক্ষণ বিমানে আগুন ধরলেও দুই বৈমানিক (পাইলট) হারাননি সাহস। দক্ষতার সঙ্গে বিমানটি ঘনবসতিপূর্ণ চট্টগ্রাম বিমানবন্দর এলাকা থেকে জনবিরল স্থানে নিয়ে যান। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় কর্ণফুলী নদীর জুলধা ১১ নম্বর মাতব্বর ঘাটসংলগ্ন এলাকায় বিমানটি ছিটকে পড়ে। এর আগে আগুন লাগার পরপরই বিমান থেকে প্যারাসুট নিয়ে লাফ দেয়া দুই পাইলটকে উদ্ধার করেন কর্ণফুলী নদীতে চলাচলরত নৌকার মাঝিরা।
আহত উইং কমান্ডার সুহান বিমানবাহিনীর ঘাঁটি জহুরুল হকের মেডিকেল স্কোয়াড্রনে চিকিৎসাধীন। দুর্ঘটনার কারণ উদ্ঘাটনে বিমানবাহিনীর উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আইএসপিআরের সহকারী তথ্য কর্মকর্তা আয়শা ছিদ্দিকা জানান, সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে বিমানবাহিনীর একটি ইয়াক-১৩০ বিমান নিয়মিত প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে বিমানবাহিনী ঘাঁটি জহুরুল হক থেকে উড্ডয়নের পর কর্ণফুলীর মোহনার কাছে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে দুর্ঘটনায় পড়ে। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, শুরুতে বিমানের পেছনের অংশে আগুন লাগে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ে বিমানটিতে। এরপর সেটি টুকরা হয়ে পানিতে ছিটকে পড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শী কর্ণফুলী উপজেলার জুলধা এলাকার বাসিন্দা মো. পারভেজ জানান, মাতব্বর ঘাট দিয়ে কর্ণফুলী নদী পার হয়ে চট্টগ্রাম নগরে যাচ্ছিলেন। এ সময় একটি বিমান উড়ে আসতে দেখেন। হঠাৎ দেখেন, বিমানের পেছনে আগুন ধরেছে। মুহূর্তের মধ্যে বিমানটি নদীতে আছড়ে পড়ে। বিমান থেকে দু’জন পাইলট প্যারাসুট নিয়ে নদীতে পড়ে যান। এ সময় নৌকার মাঝি ও যাত্রীরা মিলে তাদের উদ্ধার করে নগরের পতেঙ্গা প্রান্তের ঘাটে নিয়ে যান। পরে বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর লোকজন তাদের হাসপাতালে নিয়ে যান।
নিহত আসিম জাওয়াদের গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জ। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান ছিলেন তিনি। তার মৃত্যুর খবরে পরিবারে চলছে শোকের মাতম। বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন মা নিলুফা খানম। মানিকগঞ্জ শহরের নগর ভবন সড়কের গোল্ডেন প্লাজায় আসিম জাওয়াদের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, তার মা ছেলের কথা মনে করে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। তাকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছেন স্বজনরা। আসিম জাওয়াদের মা নিলুফা খানম আর্তনাদ করে বলছিলেন, ‘আমার ছেলে প্রতিদিন খোঁজ নেয় আমি খেয়েছি কি না, গোসল করেছি কি না। কই আজ তো খোঁজ নিচ্ছে না? আজ কেন কথা বলছে না? আমি আমার ছেলের কাছে যাবো। আমাকে ঢাকায় নিয়ে চলো।’বিলাপ করতে করতে তিনি আরও বলতে থাকেন, ‘আমার আসিমের কত স্বপ্ন। কত পুরস্কার পেয়েছে। সে তো কারও ক্ষতি করে নাই।’