প্রচ্ছদ রাজনীতি নির্বাচনের আগে বিএনপি নেতারা কারামুক্ত হচ্ছেন কি না, জানালেন আইনজীবীরা

নির্বাচনের আগে বিএনপি নেতারা কারামুক্ত হচ্ছেন কি না, জানালেন আইনজীবীরা

রাজনৈতিক : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ শীর্ষ নেতারা কারাগারে আটক রয়েছেন। আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে তাদের কারামুক্তির কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না আইনজীবীরা। তাদের মতে, রাজনৈতিক সমঝোতা না হলে ভোটের সময় বিএনপির গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীদের কারাগারেই থাকতে হবে।

বিএনপির আইনজীবীদের অভিযোগ, সরকার বিচার ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করছে। কারও জামিন হচ্ছে আবার কারও হচ্ছে না। সরকার চেয়েছে বলেই ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরের জামিন হয়েছে। একতরফা নির্বাচনের উদ্দেশ্যে সরকার পরিকল্পিতভাবে নাশকতা, অগ্নিসংযোগ করে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের ওপর দোষ চাপিয়ে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। শীর্ষ নেতাদের কারাবন্দি

রেখে ভাগ-বাটোয়ারার নির্বাচন সম্পন্ন করতে চায় সরকার। এসব মিথ্যা মামলায় ম্যাজিস্ট্রেট আদালত চাইলে জামিন দিতে পারেন। কিন্তু দেওয়া হচ্ছে না। জজকোর্টেও জামিন মিলছে না। একটা মামলায় জামিন দিলে আরেক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আটকে রাখা হচ্ছে। তাই সরকার না চাইলে শীর্ষ নেতাদের জামিন হবে না।

আর ১১ দিন পরই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ উপলক্ষে সারা দেশে প্রচার চালাচ্ছেন সংসদ সদস্য প্রার্থীরা। তবে নির্বাচনে অংশ না নিয়ে সরকারের পদত্যাগের একদফার আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে বিএনপি।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে হওয়া ৯টি মামলা নিষ্পত্তির আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের ওপর শুনানির জন্য ১৫ জানুয়ারি দিন ধার্য রয়েছে। গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ কেন্দ্র করে মির্জা ফখরুলের বিরুদ্ধে রাজধানীর রমনা ও পল্টন থানায় পৃথক ১১টি মামলা হয়। এর মধ্যে দুটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। অন্য মামলাগুলোতে জামিন আবেদন গ্রহণ করে তা নিষ্পত্তির নির্দেশনা চেয়ে ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্টে রিট করেন মির্জা ফখরুল।

রিটের ওপর ১৮ ডিসেম্বর হাইকোর্টে শুনানি হয়। ওইদিন হাইকোর্ট পৃথক ৯ মামলায় জামিন আবেদন গ্রহণ করে আইন অনুযায়ী তা নিষ্পত্তি করতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতকে (সিএমএম) নির্দেশ দেন। হাইকোর্টের ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে। গত ২১ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য ১৫ জানুয়ারি নির্ধারণ করা হয়। আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এ আদেশ দেন। এ ছাড়া গত ১৭ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনায় পুলিশের করা মামলায় মির্জা ফখরুলের জামিন প্রশ্নে রুলের শুনানির জন্য আগামী ৩ জানুয়ারি দিন নির্ধারণ করেছেন হাইকোর্ট।

মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলাসহ ১২টি মামলা হয়েছে। গত ১ নভেম্বর শাহজাহানপুর থানার অস্ত্র ছিনতাই ও বিস্ফোরক আইনের মামলায় তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শেষে ৫ নভেম্বর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এ মামলায় জজকোর্ট জামিন নামঞ্জুর করেছেন। এরপর উচ্চ আদালতে জামিনের আবেদন করা হয়েছে। কবে শুনানি হবে, তা এখনো নির্ধারিত হয়নি। তবে এ মামলায় জামিন পেলেও একাধিক মামলায় এজাহারনামীয় আসামি হওয়ায় তার কারামুক্তিতে বাধা রয়েছে।

পুলিশ কনস্টেবল হত্যাসহ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে ৯টি ও বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপনের বিরুদ্ধে সাতটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে দুটি মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। গত ১৪ ডিসেম্বর অন্য মামলাগুলোতে জামিন আবেদন গ্রহণ করে তা নিষ্পত্তির নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন তারা। গত ১৮ ডিসেম্বর জামিন আবেদন গ্রহণ করে আইন অনুযায়ী তা নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এই আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করলে গত ২১ ডিসেম্বর শুনানির জন্য ১৫ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম।

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে রমনা মডেল থানায় চারটি মামলা হয়। এর মধ্যে বিচারপতির বাসভবনে হামলা মামলায় গত ৫ নভেম্বর তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। ওইদিন তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। এরপর গত ২৯ নভেম্বর ঢাকার জজকোর্ট তার জামিন নামঞ্জুর করেন। এ মামলায় জামিনের জন্য উচ্চ আদালতে যাবেন বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে। গত ১ নভেম্বর অস্ত্র ছিনতাইয়ের অভিযোগে রাজধানীর পল্টন থানার মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। গত ৬ নভেম্বর রিমান্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। এ মামলায় গত ২৯ নভেম্বর জজকোর্ট তার জামিন নামঞ্জুর করেছেন। এ মামলায় তার জামিন চেয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করা হবে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুর বিরুদ্ধে আটটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলাসহ দুটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তিনি কোনো মামলায় জামিন পাননি। এ ছাড়া বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সারোয়ার, সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স ও ঢাকা উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে। তাদের কেউ ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে জামিন পাননি।

মির্জা ফখরুলের আইনজীবী সৈয়দ মো. জয়নুল আবেদীন মেজবাহ বলেন, জামিন আবেদন গ্রহণের জন্য হাইকোর্টে রিট করেন মির্জা ফখরুল। আইন অনুযায়ী তা নিষ্পত্তি করতে সিএমএম কোর্টকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। তবে রাষ্ট্রপক্ষ এ আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করলে ১৫ জানুয়ারি শুনানির জন্য ধার্য করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সরকার না চাইলে নির্বাচনের আগে মির্জা ফখরুলের জামিনের কোনো সম্ভাবনা নেই।

মির্জা আব্বাসের আইনজীবী মহি উদ্দিন চৌধুরী বলেন, গত ১ নভেম্বর শাহজাহানপুর থানায় মামলায় মির্জা আব্বাসকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এ মামলায় জজকোর্ট জামিন দেননি। উচ্চ আদালতে জামিন আবেদন করা হয়েছে। তবে অন্য মামলাগুলোতে গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে না। কৃষিমন্ত্রীর কথায় স্পষ্ট হয়েছে যে, সরকার যেদিন চাইবেন সেদিনই জামিন হবে।

আমীর খসরুর আইনজীবী শেখ শাকিল আহমেদ রিপন কালবেলাকে বলেন, আমীর খসরুকে হয়রানির উদ্দেশ্যে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো মামলায় তিনি জামিন পাননি। সরকার নির্বাচনে ফাঁকা মাঠে গোল দিতে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কারাগারে আটকে রেখেছে।

আলতাফ ও আলালের আইনজীবী তাহেরুল ইসলাম তৌহিদ বলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফকে রমনা মডেল থানার এক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। পল্টন থানার মামলায় মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে নেওয়া হয়। তাদের এসব মামলায় ম্যাজিস্ট্রেট ও জজকোর্ট জামিন দেননি। আমরা উচ্চ আদালতে যাব, সেখানে জামিন পাব। নির্বাচনের আগে জামিনের কোনো সম্ভাবনা দেখছি না।

প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে।