
সারাদেশ: দূরন্তপনায় পুরো পরিবারকে যে মাতিয়ে রাখতো, ধীরে ধীরে জীবন প্রদ্বীপ নিভে যাচ্ছে তাঁর। চোখের সামনে সন্তানকে এভাবে দেখে বুকফেটে যাচ্ছে মা-বাবার। বলছি, প্রায় দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে ব্লাড ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করা রাজধানীর খিলগাঁও বালিকা বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্রী নড়াইলের অহনা মুস্তাফিজের কথা। অহনার চঞ্চলতা স্কুল থেকে বাসা ছিলো সবখানেই। আজ প্রায় দেড় মাস মুখে অক্সিজেন মাক্স লাগিয়ে হাসপাতালের আইসিইউ‘র বেডে লড়াই করছেন ক্যান্সারের সঙ্গে। একবার খানিকটা স্মৃতি ফিরছে ফের হারাচ্ছে। জ্ঞান ফিরলেই খানিক সময়ের জন্য আপনজনের চোখের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকছে সে। ১৪ বছরের মেয়ে অহনাকে চোখের সামনে এভাবে তিলে তিলে শেষ হয়ে যেতে দেখে অসহায়ের মতো আর্তনাদ করছেন বাবা-মা। তাদের আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠছে হাসপাতালের পরিবেশ।
অহনার মা রেখা আক্তার জানান, মা আমার ডাক্তার হতে চেয়েছিলো। ও বলতো আমি বিদেশে গিয়ে ডাক্তারি পড়বো মা। ওর হাতে ক্যানোলা পরানো অবস্থা যখন বলছিলাম। মা তোমার জন্য পাসপোর্ট করব। তখন অহনা বলে মা পাসপোর্ট তো সারাজীবনের জন্য। এভাবে ক্যানোলা দিয়ে আমি যে স্বাক্ষর করবে তাতো ঠিক হবে না। কারণ আমি ডাক্তার হয়ে তো ওই সাক্ষারই দিবো সবাইকে। এসব বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। অহনার বাবা গাজী মুস্তাফিজুর রহমান জানান, রামপুরা এলাকায় তিনি দীর্ঘদিন ধরেন ক্যাটারিং ব্যবসা করে। ছিলেন পরিবার নিয়ে বেশ স্বচ্ছল। গত ২৮ সেপ্টেম্বর আমাদের সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। একমাত্র মেয়ের চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে এরই মধ্যে নিজের সবটুকু সম্পাদ শেষ করেছি। ভাড়া বাসা ছেড়ে বাধ্য হয়ে এখন বোনের বাসায় উঠেছি।
বর্তমানে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতলে ড. সালেহ অধীনে ভর্তি রয়েছে অহনা। চিকিৎসকরা বলছেন, ব্লাডপ্রেশার ও হার্টবিট ঠিক থাকায় তাঁর সুস্থ হওয়ার বিষয়ে তারা খুব আশাবাদী। ব্যাড ক্যান্সারের অত্যন্ত ব্যয়বহুল চিকিৎসা করাতে গিয়ে এখন নিঃস্ব অহনার পরিবার। তাদের করুন অবস্থার কথা শুনে এগিয়ে এসেছেন জাতীয় সংসদের হুইপ ও জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। দিয়েছেন তার সামর্থ মত সাহায্য। তবে অহনার ব্যয়বহুল চিকিৎসার জন্য আরও টাকা প্রয়োজন। যদি সমাজের হৃদয়বান ব্যক্তিরা এগিয়ে আসেন তাহলে হয়তো বেঁচে যাবে অহনার প্রাণ।