
রাজধানীর বেইলি রোডে একটি বহুতল ভবনে লাগা আগুনে এ পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। অগ্নিকাণ্ডে স্বজন হারিয়ে শোকে অনেকে বার বার মুর্ছা যাচ্ছেন। গতকাল বৃহস্পতিবারের ওই অগ্নিকাণ্ডে একমাত্র মেয়েকে হারিয়েছেন আবদুল কুদ্দুস।
বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে মেয়ে নুসরাত জাহানের (নিমু) ফোন পান বাবা আবদুল কুদ্দুস। ফোন ধরার পর ভয়ার্ত কণ্ঠে মেয়েটা চিৎকার করে বলে ওঠে, ‘আব্বু, আগুন! আমাদের বাঁচান…।’
অগ্নিকাণ্ডের পর বাঁচার জন্য বাবার কাছে আকুতি চেয়ে সাহায্য চেয়েছিলেন ঢাকা সিটি কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান। এরপরই বাবা ছুটে যান বেইলি রোডে। সেখানে গিয়ে মেয়ের নাম ধরে ডাকতে থাকেন আব্দুল কুদ্দুস। কিন্তু কেউ তার ডাকে সারা দেয়নি। পরে রাত ১২টার পর তিনি জানতে পারেন, মেয়ে নুসরাতের মরদেহ আছে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে।
সেখানে গিয়ে মেয়ের নিথর মরদেহ দেখে চিৎকার করে বলে ওঠেন, ‘মাগো। তুমি কোথায় চলে গেলে। বাঁচার জন্য তুমি আমার কাছে সাহায্য চেয়েছিলে। আমি তোমাকে বাঁচাতে পারিনি…মাগো…।’
কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে শুধু একা নুসরাতই নয়, তার দুই খালাতো বোন আলেশা (১৪) ও রিয়া খাতুনও (২১) মারা গেছেন। তাদের মধ্যে আলেশা রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত। আর রিয়া পড়তেন মালয়েশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সম্প্রতি তিনি দেশে এসেছিলেন। খুব শিগগির তার মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা ছিল।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে আবদুল কুদ্দুস বলেন, নুসরাত দুই খালাতো বোন আলেশা ও রিয়ার সঙ্গে বেইলি রোডে এসেছিল একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে। সেখান থেকে সে তার বন্ধবী ও দুই খালাতো বোনকে নিয়ে কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে যায়। হঠাৎ ভবনের নিচতলায় আগুন লাগার বিষয় টের পেয়ে নুসরাত বাবার ফোনে কল করে।
আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘মেয়ের চিৎকার শুনে প্রথমে ভেবেছিলাম, মেয়ে বোধ হয় ছিনতাইকারীর খপ্পরে পড়েছে। কিন্তু পরমুহূর্তে মেয়ে আমার বলেছিল, আব্বু আগুন…! আর কোনো শব্দ আমি মেয়ের কাছ থেকে পাইনি।’